Samakal:
2025-03-03@16:38:00 GMT

শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি

Published: 30th, January 2025 GMT

শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি

শাবান মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত তথা রোজা-নামাজ ইত্যাদি আমল করতেন। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণ, শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন; রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলা।

প্রিয় নবী (সা.

)-এর প্রতি দরুদ পাঠ ও সালাম প্রদানের নির্দেশনা-সংবলিত আয়াতটি শাবান মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নবীজির (সা.) প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজির (সা.) জন্য রহমত কামনা করেন; হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে 
সালাম পেশ করো।’

(সুরা-আহজাব, আয়াত: ৫৬) 
ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় শাবান মাস। নফল রোজা ও নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-কালাম, দান-সদকাহ-খয়রাত, ওমরাহ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমাদান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। ফারসি পরিভাষায় শব অর্থ রাত, বারাআত মানে মুক্তি; শবেবরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবেবরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যদিবসের রজনী বলা হয়েছে। 
শাবান মাসের রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, একদা মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে কৃত রোজার ফজিলত বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসে কৃত দানের ফজিলত বেশি।’ (বায়হাকি)

হজরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এত 
পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এত বেশি রোজা রাখেন?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। অর্থাৎ উদাসীন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা ভাবে, রমজান তো আছেই।’ (নাসাঈ)
হাদিস সূত্রে জানা যায়, শাবান মাস আসার আগেই মহানবী (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে বলতেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। তাই এ মাসকে বলা হয় মাহে রমজানের আগমনী বার্তা। 
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘মহানবী (সা.) কখনও নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে, তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি মহানবী (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (মুসলিম) 
মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের শাবান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। 

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন র আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার চাঁদ দেখলে কী দোয়া পড়বেন

রহমতের মাস রমজানের নতুন চাঁদ দেখলে; বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পড়া সেই দোয়া পড়বেন। যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা রয়েছে। হাদিসে আছে-হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তৌফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করতেন। এমনকি সাহাবিদের চাঁদ দেখতে বলতেন। রমজানের নতুন চাঁদ দেখলে প্রিয় নবী (সা.) কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করতেন।

আরও পড়ুনইফতারের দোয়া২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নতুন চাঁদকে আরবিতে বলে ‘হিলাল’। ‘হিলাল’ হচ্ছে এক থেকে তিন তারিখের চাঁদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’ যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো ‘চাঁদরাত’। আরবি চান্দ্র বছরের নবম মাস রমজান এবং দশম মাস শাওয়াল।

যে কোনো মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার দোয়া একটিই। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পড়তেন—

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি- রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন।আল্লাহই আমার ও তোমার রব। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১)

এ ছাড়াও রমজানের চাঁদ দেখার খবর শুনে দোয়া করা হয়।

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি লিরমাদান, ওয়া সাল্লিম রামাদানা লি, ওয়া তাসলিমাহু মিন্নি মুতাক্বাব্বিলা। (তাবারানি)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে শান্তিময় রমজান দান করুন। রমজানকে আমার জন্য শান্তিময় করুন। রমজানের শান্তিও আমার জন্য কবুল করুন।

আরও পড়ুনরোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদিয়া কী০২ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০ রাকাত তারাবিহ ও কোরআন খতম সুন্নত
  • দস্তরখানের নামে সুরার নাম
  • রমজানের প্রথম ১০ দিনে করণীয়
  • হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল কখন পড়বেন
  • শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান
  • রহমতের মাস রমজান শুরু
  • চাঁদপুরে শুনে শুনে কুরআনের হাফেজ হলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ২ ভাই
  • রোজার চাঁদ দেখলে কী দোয়া পড়বেন