কোচের বিপক্ষে অভিযোগ বলতে গিয়ে কাঁদলেন মণিকা-সাবিনারা, গণঅবসরের হুমকি
Published: 30th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের অধীনে আর খেলতে চান না খেলোয়াড়েরা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) যদি ইংলিশ এই কোচকে বহাল রাখে, তবে একযোগে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ১৮ জন ফুটবলার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সহ-অধিনায়ক মনিকা চাকমাসহ অন্যান্য খেলোয়াড়রা। তারা জানান, পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করা কিংবা ম্যাচ খেলা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
নারী ফুটবলাররা গণমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন, কোচ পিটার বাটলার থাকলে সম্মান নিয়ে ফুটবলকে বিদায় জানাতে চান তারা। ইতোমধ্যেই তারা অনুশীলন ও জিম কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। যদিও বাফুফে কঠোর অবস্থানে ছিল এবং জানিয়ে দিয়েছিল যে, খেললে বাটলারের অধীনেই খেলতে হবে।
তবে সাবিনারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা জানিয়েছেন, বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল দেশে ফিরলে তার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। যদি কোচকে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হয়, তবে তারা জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাবেন।
জানা গেছে, গত অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন সময়ে সমস্যার সূত্রপাত হয়। নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্ট চলাকালীন কিছু নারী ফুটবলার কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে, তিনি সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন না। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার পর এক সিনিয়র ফুটবলার প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, পিটার বাটলার কোচ থাকলে ক্যাম্পে উঠবেন না।
সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে কোচ পিটার বাটলারকে প্রত্যাখ্যান করেন। তবে বাফুফে তাদের দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিটার বাটলারের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল র ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবাদী মেয়েরা, গণঅবসর ভাবনা
জানুয়ারির মাঝামাঝিকে ক্যাম্পে যোগ দেন জাতীয় দলের মেয়েরা। সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানের অধীনে অনুশীলনে মাসুরা পারভীন-তহুরা খাতুনরা ছিলেন প্রাণবন্ত। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি দুটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশ নারী দলের। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর মঙ্গলবার তাঁর অধীনে অনুশীলন করার কথা ছিল মেয়েদের। কিন্তু বাটলারের অধীনে গত পরশু অনুশীলন করেননি সাবিনা খাতুন-ঋতুপর্ণা চাকমারা। বেতন ইস্যুর সমাধান না হওয়া, চুক্তি না করা, নেপাল সাফে দ্বন্দ্বের পরও সমাধান না করে বাটলারকে নিয়োগ দেওয়া, বিদেশি লিগে খেলার প্রস্তাব পেলেও খেলতে অনুমতি না দেওয়া, সাফ জেতায় ঘোষিত ১ কোটি টাকা অর্থ পুরস্কার না পাওয়াসহ আরও নানা কারণে ক্ষুব্ধ নারী ফুটবলাররা।
অতীতে কয়েকবারই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে বসার চেষ্টা করেও তাঁর দেখা পাননি মেয়েরা। তাই নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধান না করা পর্যন্ত রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন টানা দু’বার সাফ জেতা মেয়েরা। বুধবারও বাটলারের ডাকে মিটিংয়ে সাড়া দেননি তারা। জানা গেছে, নারী ফুটবলাররা অনুশীলন বয়কট করায় কোচিং স্টাফের অনেকেই ছুটিতে চলে গেছেন।
পিটার বাটলারের সঙ্গে মেয়েদের ঝামেলার শুরু নেপাল সাফ থেকে। সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব নিয়ে যে বিরোধ দেখা দেয়, কোচ-ফুটবলারদের মধ্যে সেটা না মিটিয়েই বাটলারকে ফের দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়াটা ভালোভাবে নেননি জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড়রা। কোচ ইস্যুর সঙ্গে মেয়েদের বড় ক্ষোভ পারিশ্রমিক জটিলতার সমাধান না করা। গত অক্টোবর পর্যন্ত বেতন পাওয়া মেয়েদের সঙ্গে নতুন করে কোনো চুক্তি করেনি ফেডারেশন। এই তিন মাস অলস সময় পার করা সানজিদা আক্তার-রুপনা চাকমাদের অ্যাকাউন্টে কোনো অর্থ ঢোকেনি।
কাজী সালাউদ্দিনের সময় অবহেলার শিকার হওয়া মেয়েদের সমস্যা নিরসনে খুব একটা উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে। দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার পরও প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে বাফুফে কর্তাদের অনীহায় বেজায় চটেছেন সিনিয়ররা। আর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে ফেব্রুয়ারি ফিফা উইন্ডোতে ম্যাচ খেলাতে পারছে না দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং নেপাল ঠিকই প্রীতি ম্যাচ খেলছে।
অনুশীলন বয়কটের কারণ জানতে বেশ কয়েকজন নারী ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও এই মুহূর্তে কিছু বলতে অনিচ্ছুক বলে জানান। মেয়েদের বিদ্রোহের বিষয়টি এড়িয়ে মাঠ সংকটের কথা প্রথমে বলেছিলেন বাফুফের একটি সূত্র। নাম গোপন রাখার শর্তে পরে তিনি স্বীকার করেন, মঙ্গলবার অনুশীলন করেননি মেয়েরা। ‘বয়কটের ব্যাপারটা আমার নিশ্চিত না। আমি যতটুকু জানি, কোনো একটি বিষয় নিয়ে তারা সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে। কিন্তু এখন তো সভাপতি নেই। শুনেছি, নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে (বুধবার) বসার কথা।’
মেয়েদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা, তা জানতে ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
২০২২ সালে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর মেয়েদের নিয়ে স্বপ্নের ফানুস ওড়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। কিন্তু নিজেদের পকেট ভারী করে আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে এই মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে পাঠায়নি বাফুফে। বেতন না পাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে ২০২৩ সালে কয়েকবার অনুশীলন বয়কট করেছিলেন সাবিনারা।
গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয়বারের মতো নারী সাফ জেতার পর কৃষ্ণা রানী সরকার-তহুরা খাতুনদের ছাদখোলা বাসে বীরোচিত সংবর্ধনা দেয় দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে নানা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সংবর্ধনার সঙ্গে দিয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। কিন্তু ঘোষণা দিয়েও বাফুফে কর্তারা আছেন শীতনিদ্রায়!