সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার আবু থেনাইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে রিয়াদে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।  

বৈঠকগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, শ্রম বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সৌদিআরবে বাংলাদেশি কর্মীদের অধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

সৌদি আরবে ছোটখাটো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দিদের জন্য রাজকীয় ক্ষমা প্রদানের অনুরোধ জানান উপদেষ্টা, যা সৌদি ভাইস মিনিস্টার বিবেচনায় নেবেন বলে জানান।

বৃহস্পতিবার ( ৩০ জানুয়ারি) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, সৌদি আরবে তিন মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা। তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-টিটিসি পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং কিছু নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে দক্ষতা স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিবেচনা করার আহ্বান জানান। সৌদি পক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয় এবং সম্ভাব্য টিটিসি মূল্যায়নের সম্মতি জানায়।

বৈঠকে মূলত উচ্চ ইকামা নবায়ন ফি এবং এর ফলে কর্মীদের চাকরিহীন হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সৌদি পক্ষ জানায় যে, শ্রম আইন সংস্কার করা হচ্ছে যাতে উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষিত হয়। এ ছাড়া কর্মীরা যাতে বাংলাদেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে তাদের নিয়োগ চুক্তি নিশ্চিতভাবে পায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়াও, ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে পেশাদার সার্টিফিকেট সত্যায়ন-সংক্রান্ত সমস্যা উত্থাপন করা হয়। কালচারাল অ্যাটাশের অনুপস্থিতির কারণে এই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে, তাই এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়। সৌদি পক্ষ নিশ্চিত করেছে, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।

সৌদি কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ শ্রমিক সমস্যা এবং নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম দূর করতে শিগগিরই একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি যৌথ টিম গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। বৈঠকে গৃহকর্মী প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে বাংলাদেশ প্রশিক্ষণের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করে গুণগত মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ড.

নজরুল সৌদি আরবের মেগা প্রকল্পগুলোতে আরো দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সৌদি ভাইস মিনিস্টারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠকে, বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে নিরাপত্তা ও অভিবাসন সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করায় সৌদি সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।

বৈঠকে অনিয়মিত অভিবাসন রোধ এবং বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া উন্নত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। উপদেষ্টা অনিয়মিত অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সৌদি সরকারের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানান। সৌদি ভাইস মিনিস্টার বিষয়টি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ সরকার শ্রম শোষণ রোধ ও ন্যায্য নিয়োগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অধিকতর নজরদারি ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেয়। সৌদি পক্ষ জানায়, যে সৌদি শ্রম আইন উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির ভিত্তিতে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। উভয়পক্ষ মানবপাচার, অনিয়মিত অভিবাসন এবং অর্থপাচারসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়।

বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর করার পাশাপাশি শ্রম অভিবাসন ও নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত হয়।

এ ছাড়াও, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ওমানের শ্রম উপমন্ত্রী সালিম আল-বুসাইদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মীদের জরিমানা ছাড়া বৈধকরণের অনুরোধ জানান, এতে ওমানের মন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন।  

ওমানে ৩১ অক্টোবর ২০২৩ থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত থাকা ওয়ার্ক ভিসা পুনরায় চালুর জন্য উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ওমানের মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। ওমানের শ্রম উপমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদার কারণে তার দেশের জনগণের চাপ রয়েছে এবং তারা এর সমাধান খুঁজছেন।  

উপদেষ্টা বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী যেমন প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নার্সরাও যাতে করে ওমানের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে, এর জন্যও ওমানের মন্ত্রীর সহযোগিতা চান। এ ছাড়াও নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ সরক র ন শ চ ত কর র মন ত র উপদ ষ ট সরক র র আরব র ম সহয গ ত র জন য ত কর র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

এডিপির আকার কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছে সরকার। ফলে এখন চূড়ান্ত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এডিপির মূল আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি কমানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে।

সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) উপস্থাপন করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এনইসি সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানান।

আরএরডিপিতে বরাদ্দ কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাত। এই তিন খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। কিন্তু আরএডিপিতে সেখান থেকে ১২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সেই হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যা আরএডিপিতে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
অন্যদিকে, শিক্ষা খাতে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা ছিল মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আরএডিপিতে শিক্ষা খাত থেকে ১১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে, সেই হিসেবে আরএডিপিতে মাত্র ৯.৪২ শতাংশ বরাদ্দ থাকছে শিক্ষা খাতে।

সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আরএডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ১০টি খাত। এখাতগুলোর জন্য মোট বরাদ্দে প্রায় ৮১ দশমিক ৩১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। খাত ভিত্তিক বরাদ্দের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য শিক্ষার মতো সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া প্রায় সবখাতেই কমবেশি বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। শুধুমাত্র পরিবেশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে কমানো হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৪ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ৮ হাজার ৮৫৪ কোটি , গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাত থেকে ৫ হাজার ২২৩ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন থেকে ১ হাজার ৩৩ কোটি, কৃষি থেকে ৩ হাজার ৫৮৮ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাত থেকে ২ হাজার ৪৩ কোটি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ৪৫৯ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। তবে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ৫৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এতে এই খাতে আরএডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।

জানা গেছে, আরএডিপিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ২১ হাজার ৪৭৫ কোটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ১৮ হাজার ৬২৪ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ১২ হাজার ৭৬৪ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ১২৯ কোটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার ২২৭ কোটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার ২১১ কোটি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৭ হাজার ১৫৩ কোটি, সেতু বিভাগের জন্য ৫ হাজার ৮৪৮ কোটি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এএ

সম্পর্কিত নিবন্ধ