ভুল বোঝাবুঝি থেকে হৃতিক-সুজানের বিচ্ছেদ: রাকেশ রোশান
Published: 30th, January 2025 GMT
সুজান খানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন বলিউডের ‘গ্রিক গড’ হৃতিক রোশান। ২০১৩ সালে ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন তারা। এরপর এক যুগের বেশি সময় কেটে গেছে। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের কারণ জানাননি এই জুটি। দীর্ঘ দিন পর হৃতিকের বাবা রাকেশ রোশান জানালেন— ভুল বোঝাবুঝি থেকেই সংসার ভেঙেছে হৃতিক-সুজানের।
কয়েক দিন আগে যুবার সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন পরিচালক-অভিনেতা রাকেশ রোশান। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “যা ঘটেছে তা এই দম্পতির মধ্যেই ঘটেছে। আমার কাছে সুজান সুজানই। তারা প্রেমে পড়েছিল, তাদেরই ভুল বোঝাবুঝি ছিল এবং তাদেরকেই এটি সমাধান করতে হবে। সুজান আমাদের বাড়িতে এসেছিল, এখনো সে আমাদের বাড়িরই একজন সদস্য।”
তবে কী নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল হৃতিক-সুজানের, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’খ্যাত এই পরিচালক।
আরো পড়ুন:
‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ সিনেমার রজত জয়ন্তী: স্মৃতির ডায়েরি খুললেন হৃতিক
বলিউডের প্রাক্তন প্রেমিক-প্রেমিকাদের ‘পুনর্মিলনী’
পুত্র হৃতিকের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে কথা বলেন রাকেশ রোশান। তার ভাষায়, “হৃতিক ও আমার মেয়ে আমাকে একটু ভয় পায়। কেন ভয় পায় তা আমি জানি না। সম্ভবত, আমি একজন সুশৃঙ্খল মানুষ। আমি খুব বদমেজাজি মানুষ নই। কাউকে তিরস্কার করার মতো মানুষ আমি নই। কিন্তু আমি খুব নিয়মনিষ্ঠ। ওরা যখন ছোট ছিল, তখন আমার সঙ্গে ওরা অকপটে কথা বলত না, এখন বলে। বাড়িতে আমরা বন্ধুর মতো।”
২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভালোবেসে ঘর বাঁধেন হৃতিক রোশান ও সুজান খান। ২০০৬ সালে জন্ম হয় এই দম্পতির প্রথম সন্তান হৃহানের। ২০০৮ সালে জন্মগ্রহণ করে তাদের দ্বিতীয় সন্তান হৃদান। কিন্তু এ জুটির চলার পথে ছন্দপতন ঘটে। ২০১৩ সাল থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের সময় সুজান ৪০০ কোটি রুপি খোরপোশ দাবি করেন। সর্বশেষ ৩৮০ কোটি রুপি গুণতে হয় হৃতিককে।
সংসার ভেঙে গেলেও প্রায়ই দু’জন মিলে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান হৃতিক-সুজান। দুই পুত্রকে নিয়ে বিদেশে অবসর কাটাতেও দেখা গেছে। ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাতে প্রাক্তন স্ত্রীকে নিয়ে দুবাইয়ে উড়ে গিয়েছিলেন হৃতিক।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হাতে ভাজা মুড়ি, শাশুড়ির পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্চনা
হাঁটতে হাঁটতে তিতাস নদীর পাড় পর্যন্ত যেতেই কানে এলো মুড়ি ভাজার শব্দ। কয়েকজন নারী মুড়ি ভাজছেন। পুরাতন পদ্ধতিতে গরম বালুর সঙ্গে খোলায় ভাজা চালের স্পর্শে হাড়িতে মট-মট শব্দে ফুটে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ি।
এখানে হাতে ভাজা মুড়ির মূল কারিগর অর্চনা দাস (৫৫)।
অর্চনা দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পাইকপাড়া পাটগুদাম রোড দাস পাড়ার ঝান্টু দাসের স্ত্রী। ঝান্টু দাস পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ি। অর্চনা দাসের চার মেয়ে ও একজন ছেলে। চার মেয়েকেই দিয়েছেন বিয়ে এবং ছেলে এই বছর বিবিএ শেষ করেছে।
অর্চনা দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই শাশুড়ি তরঙ্গ বালা দাস হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতেন। শাশুড়ি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। শাশুড়ির কাছাকাছি থাকতে থাকতে আমিও মুড়ি ভাজা শিখে ফেলেছি। শাশুড়ি ২০১৯ সালে মারা গেলে ছেলেমেয়েরা মুড়ি ভাজতে নিষেধ করেছিল কিন্তু শাশুড়ির ৫০ বছরের পেশাটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই মুড়ি ভাজার দায়িত্বটা আমি কাঁধে নেই।”
মুড়ি ভাজতে উপকরণ হিসেবে তিনি বলেন, “হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতে দেশি চাউল দিয়েও হয় তবে রমজান আসলে মুড়িগুলো সুন্দর করতে ‘শান্তি সিলভার’ নামে এক কোম্পানির চাউল আছে, সেটা ব্যবহার করি। আমি চালগুলো লবণ পানি দিয়ে মেখে দেই। আমার ভাইয়ের মেয়ে সুলেখা দাস লবণ পানি দেওয়া চালগুলো তাওয়াতে ৪-৫ মিনিট গরম করে। তারপর আমার ভাসুরের ছেলের বউ বন্দনা দাস গরম বালুতে সেই চাউলগুলো ঢেলে চিকন কাঠি দিয়ে হাতে নাড়া দিলেই হয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি।”
অর্চনা দাস বলেন, “আমার শাশুড়ির বাড়িতে এসে আমি দেখেছি ১৯৯০ সালে এক কেজি মুড়ি ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন। এখন মুড়ি বিক্রি করি ১২০ টাকা দরে।”
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এক বস্তা চালের দাম ৩৪০০ টাকা, লবণ লাগে ৩০ টাকা, রিকশাভাড়া ৩০ টাকা, ভাজা খরচ ১৪০ টাকা। এক বস্তা চাউলে ৩৮ কেজি মুড়ি হয়। রমজান মাসে এক দিনে ৬০ কেজি মুড়ি বিক্রি করতে পারি। রমজান মাস ছাড়া ২৫ কেজি বিক্রি হয়।”
পাইকার ব্যবসায়িরা এক কেজি মুড়ি ৯৫ টাকা ধরে কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা কেজি প্রতি ১২০ টাকা বিক্রি করেন।
প্রতিবেশি নিদু দাস বলেন, “আমরা ২০ বছর ধরে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতাম। বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারণে পেশাটাকে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের যা কাস্টমার ছিল এখন অর্চনা থেকে মুড়ি নিয়ে যায়। কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই আসে মুড়ি নিতে। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকে। আগে এখানে ১০টা পরিবারের মতো হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করতেন কিন্তু বর্তমানে লোকবল সংকটের কারণে এই পেশা থেকে মানুষ দূরে চলে গেছে।”
মুড়ি ক্রেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে তাদের বাড়ি থেকে মুড়ি কিনি। সুস্বাদু ও কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় আমার পরিবারের পছন্দ এই মুড়ি। দুই কেজি মুড়ি ২৪০ টাকা দিয়ে কিনেছি।”
কুমারশিল মোড়ের নিউ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী হৃদয় রায় বলেন, “পাইকপাড়া থেকে হাতে ভাজা মুড়ি আমরা কিনে রাখি। হাতে ভাজা মুড়ি পুরাতন কাস্টমার যারা আছে তারা কিনে নিয়ে যায়। ক্যামিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই নিয়ে যায়।”
ঢাকা/টিপু