সিরিয়ায় ছয় দশক ক্ষমতায় থাকা আসাদের বাথ পার্টি বিলুপ্ত
Published: 30th, January 2025 GMT
সিরিয়ায় ক্ষমতা ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বুধবার দেশটির নতুন সামরিক পরিচালনা খাতের মুখপাত্র কমান্ডার হাসান আবদেল গনির এক ঘোষণায় দলটিকে বিলুপ্ত করা হয়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার বরাতে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সামরিক পরিচালনা খাতের মুখপাত্র কমান্ডার হাসান আবদেল গনি বলেছেন, নির্বাচন হওয়ার আগপর্যন্ত আল-শারাকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করা হয়েছে। তাকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগপর্যন্ত আইন পরিষদ কার্যকর থাকবে।
আবদেল গনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী, নিরাপত্তাবাহিনী এমনকি আল শারার নিজের সশস্ত্র সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামসহ (এইচটিএস) সিরিয়ার সব সামরিক গোষ্ঠী বিলুপ্ত করা হয়েছে। একইভাবে দেশটির সংবিধান এবং বাশার আল-আসাদের দল বাথ পার্টিকেও বিলুপ্ত করা হয়েছে। বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে দলটি সিরিয়ার ক্ষমতায় ছিল।
দামেস্কে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আল-শারাকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করার ঘোষণা আসে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আল-শারার এইচটিএসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী লড়াই করেছে, সেগুলোর কমান্ডারদের নিয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাশার আল-আসাদ সরকারের অবশিষ্ট অংশগুলোও ভেঙে দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে পার্লামেন্ট, সিরিয়ার পুরোনো সংবিধান এবং আল-আসাদের আরব সমাজতান্ত্রিক বাথ পার্টি।
বাথ পার্টির ঘোষিত লক্ষ্য ছিল, আরব রাষ্ট্রগুলোকে এক জাতিতে পরিণত করা। সিরিয়ার দুই আরব জাতীয়তাবাদী মিশেল আফলাক এবং সালাহ আল-দিন আল-বিতার দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে দলের প্রথম নীতিমালা গৃহীত হয়েছিল। এক সময় দলটি দুটি আরব দেশ ইরাক এবং সিরিয়া শাসন করেছিল।
সিরিয়ায় বাথ পার্টি বাশার আল-আসাদের পরিবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছিল, যারা ১৯৭০ সালে দেশটির ক্ষমতায় আসে। কয়েক দশক ধরে পরিবারটি সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে দলটিকে এবং এটির প্যান আরব মতাদর্শকে ব্যবহার করেছে। অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক পদে এই পরিবারের সংখ্যালঘু আলাউত সম্প্রদায়ের সদস্যরা অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং দলের সদস্যপদকে সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে জাতীয়তাবাদী চরিত্র দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার বাথ পার্টির অনেক নেতা গা ঢাকা দিয়েছেন কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। একটি প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবে সিরিয়ার নতুন শাসকেরা দামেস্কে বাথ পার্টির সাবেক প্রধান কার্যালয়কে একটি কেন্দ্রে পরিণত করা হয়, যেখানে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ও নিরাপত্তাবাহিনী সারি বেঁধে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেন এবং অস্ত্র সমর্পণ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদ শাসনের অবসান হয়। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষমত য় পর ব র আল শ র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট জেলা কমিটির সদস্যসচিবের স্বাক্ষরে আহ্বায়ককে অব্যাহতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান খুরশেদকে। গতকাল বুধবার রাতে সংগঠনের সিলেট জেলার সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে ওই সিদ্ধান্ত ভুয়া দাবি করে আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে অব্যাহতি দিতে হলে যাঁরা কমিটি গঠন করেছেন, সেই কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসতে হবে। সংগঠনের সদস্যসচিবের স্বাক্ষরে আহ্বায়ককে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার নেই।’ এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানান তিনি।
গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২২ মার্চ জাতীয় নাগরিক পার্টির ইফতার মাহফিলে লিডিং ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়। সেই মামলায় আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়। পরে তিনি গ্রেপ্তার হন। এ কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার নির্বাহী কমিটি ও কনভেনর বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেট জেলার আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত সাংগঠনিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলা থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় বা সাংগঠনিক কার্যক্রম করা থেকে বিরত থাকবেন।
এ ব্যাপারে সংগঠনের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্রাম হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে ও তাঁকে অবহিত করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির ৩৮ জনের মধ্যে ২৩ জন এ সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্বাক্ষর দিয়েছেন। অন্য চারজন সিলেটের বাইরে রয়েছেন, তাঁরা আজই স্বাক্ষর দেবেন। নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি সাত সদস্যের নির্বাহী বোর্ডও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।