ভেতরে কর্মশালা, বাইরে কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 30th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপি নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন দলের একাংশের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলাকালে শিল্পকলার বাইরে থেকে এভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে পদ বঞ্চিত ও অবমূল্যায়িত নেতাকর্মীরা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল দশটা থেকে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এ কর্মসূচি সামনে রেখে দলের অবমূল্যায়িত ও পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা বেলা সাড়ে বারটায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল দশটা থেকে শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে কর্মশালা চলতে থাকে। অপর দিকে বেলা বারটার দিকে শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে জড়ো হয়ে শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শহরের এনএস রোড প্রদক্ষিণ করে সাড়ে বারটার দিকে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে যায়। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেতাকর্মীরা ফটকের সামনে শ্লোগান দিতে থাকে। হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেহাবুর রহমান পুলিশ নিয়ে ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে যান। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কেউ কেউ জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনেই সমাবেশ করেন তারা। বেলা সোয়া একটার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে তারা চলে যান।
এর আগে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল অনশন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও অবমূল্যায়িত নেতা আইনজীবী শামিমুল হাসান অপু বলেন, “দলের নিবেদিত প্রাণ ও আওয়ামী দুঃশাসনের হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে আজকে সারা কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় যে চাদাবাজি, দখলদারিত্ব, মসজিদের জায়গা দখল, চালের মোকামে চাঁদাবাজি- এসব কারণে আজকে চালের দাম বেড়ে গেছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর ম এক ড ম র ব এনপ র শ ল পকল কর ম র
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ১৩৪ জনের
গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, সংঘর্ষ, হামলা, নারী ও নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে ১৩৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামে একটি সংস্থা এই তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত কমপক্ষে ৭৫৫ জন। এসব সহিংসতার ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৫৮টি ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের ও আহত হয়েছে ৪৯৪ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জন নিহত ও ১১৫ জন আহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৯ জনের মধ্যে বিএনপির পাঁচজন, আওয়ামী লীগের একজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একজন নিহত হয়েছেন। অপর দু’জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীর হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন, বিএনপির পাঁচজন, জামায়াতের একজন নারী সদস্য ও চরমপন্থি দলের তিনজনসহ অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
এতে বলা হয়, এ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যাম্পাসে কমপক্ষে ছয়টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হয়ে আবুল কাসেম নামে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী। কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল ও যুবদলের সংঘর্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ মাসে সারাদেশে কারাগার ও হাজতে কমপক্ষে ১২ জন আসামি মারা গেছেন। গণপিটুনির ১৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন। এ ছাড়া ১৯টি হামলার ঘটনায় ৩৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাঁচটি মামলায় ১১ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা ছয় মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০ জনকে।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিএসএফের সাতটি হামলার ঘটনায় একজন বাংলাদেশি নিহত, ছয়জন আহত ও ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তিনটি হামলার ঘটনায় ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। ২৬টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৭ জন। দুর্ঘটনায় ৯ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১০৭ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন ও ১৩ জনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। অন্যদিকে ১০৪ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯ জন। এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৫ জন শিশু।