অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া, একই অভিযোগে তার স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দুই শ্যালকের সম্পদ বিবরণীর নোটিশ দিয়েছে সংস্থা‌টি।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

দুদক জানায়, সা‌বেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে ১২টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪২ কোটি ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ৪০৯ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি শরীফ আহমেদের স্ত্রী শেফালী বেগম, শ্বশুর গোলাম মোস্তফা, শাশুড়ি জাহানারা বেগম, শ্যালক মো.

শাহআলম ও মোহাম্মদ শামীমের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া তাদের ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। 

লেনদেন করা অর্থের উৎস কী তা জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেওয়া হলেও তারা বক্তব্য দিতে হাজির হননি। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

বিপুল পরিমাণ লেনদেনকৃত অর্থ দিয়ে অন্য কোনো মাধ্যমে তারা কোনো অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন কি না, ওই সম্পদ শরীফ আহমেদের নিজের কি না, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। এ অবস্থায়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ব্যাপক লেনদেনের বিষয়টি আরো যাচাইয়ের জন্য শরীফ আহমেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিদের নামে আলাদা সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বোয়ালমারীর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ঘোষপুর ইউনিয়নের গড়াই নদীর লংকারচর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। বুধবার রাতে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।  

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা রবিন মোল্যার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সঙ্গে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মেসিতে আসেন জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারাল অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এ সময় তিনি পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে আমার ফার্মেসিতে এসে হামলা চালায়। 

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯টি সিডিউল বিক্রি হলেও সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সহায়তায় মাত্র একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহাল ইজারা পান বোয়ালমারী যুবলীগের সদস্য মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। এই বালুমহাল ইজারার ১৯ জন সিডিউল ক্রেতার সঙ্গে কৃষকদল সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের নেতৃত্বে ইজারা দরপত্র (নিকো) বোর্ড করে একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে রবিউলকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৮ জন ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা করে নিকোর টাকা নির্ধারণ করা হয়। দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এ বিষয়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহালের ইজারা পেলেন যুবলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর। ৩৬ লাখ টাকা বেশি দিয়ে ইজারা নেন রবিউল। 

স্থানীয় এক সিডিউল ক্রেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও ডিসির কাছে দেওয়া অভিযোগকারী) জানান, ১৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও ১৫ দরপত্র দাতাদের মাঝে এবং কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্র দাতাদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভাগাভাগির টাকা বণ্টনের দায়িত্ব দেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদের ওপর। তবে জুয়েল বিশ্বাস নামে একজন দরপত্র ক্রেতা অভিযোগ করেন তার পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে সালিশ বৈঠকে বসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা। 

বৈঠক শুনানির সময় দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে মা ফার্মেসিতে আক্রমণ চালায়। এতে রবিন মোল্যা ও রিয়াজ মৃধা আহত হন। 

জুয়েল বিশ্বাস জানান, বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সেই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে এবং আমার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিন আঘাত পান। 

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে তিনি পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসেন। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা তার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ