রংপুরকে হারের স্বাদ দিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল খুলনা
Published: 30th, January 2025 GMT
হারলেই বিদায়, জিতলেই টিকে থাকবে আশা। এমন বাঁচা-মরার লড়াইয়ে খুলনা টাইগার্সের সেরা পারফরম্যান্স বেরিয়ে এলো। এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যাদের বিপিএলে শুরুতে আট ম্যাচে জয়ের কীর্তি। এরপর টানা তিন হার। সেই সংখ্যাটাকে এবার চারে নিয়ে গেল খুলনা
মিরপুর শের-ই-বাংলায় ৪৬ রানের বিশাল জয়ে প্লে’ অফের আশা টিকে থাকল খুলনার। যে জয়ের নায়ক নাঈম শেখ। তার সেঞ্চুরি পাওয়া ১১১ রানের ইনিংসে ভর করে ৪ উইকেটে ২২০ রান করে খুলনা টাইগার্স। জবাবে সৌম্য সরকারের ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংসের পরও রংপুরের ইনিংস থেমে যায় ৯ উইকেটে ১৭৪ রানে।
আরো পড়ুন:
চার-ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে নাঈমের সেঞ্চুরি
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে রংপুরের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে খুলনা
সেঞ্চুরিয়ান নাঈম আজ ছিলেন দুর্দান্ত। যেভাবে চাচ্ছিলেন সেভাবেই রান পাচ্ছিলেন। পেসার কিংবা স্পিনার যাকে পাচ্ছিলেন তাকেই শাসন করছিলেন সিদ্ধহস্তে। তার ব্যাটিং তোপে পুড়েছেন স্পিনার ইফতেখার আহমেদ। টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়ে হাত খোলা শুরু করেন। শেষটাও তাকে দিয়ে। ইনিংসের শেষ ওভারে ইফতেখার বোলিংয়ে এসে ছক্কা হজম করেন প্রথম বলে। ৭ চার ও ৮ ছক্কা হাঁকিয়ে মাঠ মাতিয়ে রাখেন। ক্যারিয়ার সেরা ১১১ রানের ইনিংসটি সাজান ৬২ বলে।
বাঁহাতি ওপেনার ধারাবাহিক রান পাচ্ছিলেন। আজকের সেঞ্চুরির আগে শেষ তিন ইনিংসে দুইটি ফিফটি পেরোনো ইনিংস ছিল। আজ ভালো শুরুর পর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তুলে নেন চতুর্থ ফিফটি। এরপর দ্যুতি ছড়িয়ে সেটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেন। যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন নাঈম। পরের ২২ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
এই ইনিংস দিয়ে নাঈম জাতীয় দলের ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে ছাপিয়ে এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে উঠেছে। ঢাকার ওপেনার তানজিদের ১১ ইনিংসে রান ৪২৭। নাঈমের সমান ইনিংসে রান ৪৪৪।
নাঈম বাদে খুলনার হয়ে রান করেছেন উইলিয়াম বোসিস্তো ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। বোসিস্তো ২১ বলে ৩৬ এবং মাহিদুল ১৫ বলে ২৯ রান করেন। এছাড়া শুরুতে ১২ বলে ২১ রানের কার্যকরী ইনিংস উপহার দেন খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে রংপুরের বিপক্ষে বিশাল পুঁজি পায় খুলনা।
রংপুরের বোলারদের মধ্যে সাইফ উদ্দিন ছিলেন বাজে। ৩ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। রান তো হজম করেছেনই। সঙ্গে ২ ওয়াইড ও ৪ নো বল করেছেন। ১টি করে উইকেট নেন মাহেদী, আকিফ ও ইফতেখার আহমেদ।
সৌম্যর ব্যাটে জবাব দেয় রংপুর। বাকিরা ছিলেন নিষ্প্রভ। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরা সৌম্য ৪৮ বলে ৭৪ রান করেন ৬ চার ও ৫ ছক্কায়। হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত ইয়র্কারে সাজঘরে ফেরার আগে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। এছাড়া ইফতেখার আহমেদ ১৫ বলে ১৯, মাহেদী ১৪ বলে ২৭ এবং সাইফ উদ্দিন ১০ বলে ১৮ রান করেন। শেষ দিকে রাকিবুল ৬ বলে ১৪ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন।
খুলনার হয়ে আজই প্রথম মাঠে নামেন মুশফিক হাসান। নয় মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন। দলের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন এই ডানহাতি পেসার। এছাড়া মোহাম্মদ নেওয়াজ ২ এবং হাসান ও নাসুম ১টি করে উইকেট নেন।
খুলনার পরের ম্যাচ ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে। ১১ ম্যাচে তাদের জয় ৫টি। শেষ ম্যাচে জিতলে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্লে’ অফে যাবে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ইফত খ র র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
পানির বোতল কত দিন পরপর পরিষ্কার উচিত
পানির বোতলে প্রতি চুমুক পানি খাওয়ার মানে হলো, প্রতিবারই বোতলের ভেতর ব্যাকটেরিয়া জমা করা। আর এভাবে সারা দিন চলতে থাকলে লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়া জমা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী, সে ব্যাপারে হয়েছে নানা গবেষণা।
তেমনই একটি গবেষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যনিরাপত্তা–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কার্ল বেহেনকে। নিজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলটি কতটা পরিষ্কার, তা নিয়ে ভাবনা থেকেই গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। শুরুতে বোতলের ভেতরে কিছু টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখেছিলেন বেহেনকে। এর পর যা দেখলেন, তাতে তিনি হতভম্ব হয়ে যান।
বেহেনকে বলেন, টিস্যুগুলো বের করে আনার আগপর্যন্ত এগুলো সাদা ছিল। তিনি বুঝতে পারেন, বোতলের ভেতরের গায়ে যে পিচ্ছিল ভাব মনে হচ্ছিল, তা বোতলের ধরনের কারণে নয়। বরং সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর কারণে এমন হয়েছে।
এরপর গবেষণার পরিকল্পনা তৈরি করেন বেহেনকে। এর অংশ হিসেবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি করিডরে পথচারীদের থামাতে থাকেন এবং তাঁদের কাছ থেকে পানির বোতলগুলো চেয়ে নেন। বোতলগুলো কতটা পরিষ্কার, সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য এগুলো সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায় যে বোতলগুলো ব্যাকটেরিয়ায় ভরপুর।
২০২৪ সালের হিসাব অনুসারে, বিশ্বব্যাপী পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলের বাজারের আকার প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। ইতালীয় স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাঁদের অর্ধেকই পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতল ব্যবহার করেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ৫০ থেকে ৮১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বোতল ব্যবহার করেন।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলে আসলে কী থাকে
যুক্তরাজ্যের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক প্রিমরোজ ফ্রিস্টোন বলেন, রান্নাঘরের কল থেকে বোতলে পানি ভরে কয়েক দিন রেখে দিলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। তিনি বলেন, ঘরের তাপমাত্রায় (প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) যতক্ষণ পর্যন্ত একটি পানিভর্তি বোতলকে ফেলে রাখা হবে, তত বেশি ব্যাকটেরিয়া জন্মাবে।
সিঙ্গাপুরে ফোটানো পানি নিয়েও একটি গবেষণা হয়েছিল। পানি ফোটানোর সময় বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া মরে যাওয়ার কথা। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, দিনভর ব্যবহারের পর বোতলের ভেতর ফোটানো পানিতেও দ্রুত ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।
গবেষকেরা দেখেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বোতলের ভেতরের পানিতে সকালের দিকে গড়ে প্রতি মিলিলিটারে প্রায় ৭৫ হাজার ব্যাকটেরিয়া ছিল, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতি মিলিলিটারে ১০ থেকে ২০ লাখের বেশি হয়ে গেছে।
ফ্রিস্টোনের মতে, ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমানোর একটি উপায় হলো, বোতল থেকে পানি পানের মধ্যবর্তী বিরতিতে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা। তবে এতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হবে না।
পানির বোতলে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর পেছনে ওই পানির কিছু দায় থাকলেও বেশির ভাগ দূষণ তৈরি হয় ব্যবহারকারীর মাধ্যমেই। ফ্রিস্টোন বলেন, কর্মস্থলে, ব্যায়ামাগারে, এমনকি বাড়িতে যেখানেই পানির বোতল নিয়ে যাওয়া হোক না কেন, বোতলের বাইরের অংশে অনেক জীবাণু থাকে। এসব জীবাণু সহজেই বোতলের ভেতরে স্থানান্তরিত হয়। এ ছাড়া প্রতিবার চুমুক দিয়ে পানি পানের সময় ব্যবহারকারীর মুখ থেকে বোতলের পানিতে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।
পানির বোতল ব্যবহারকারীদের যাঁরা নিয়মিত হাত পরিষ্কার করেন না, তাঁদের বোতলে ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে বলেও মত দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।
ব্যাকটেরিয়া কী প্রভাব ফেলে?
মাটি, বায়ু বা দেহ—আমাদের চারপাশেই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। তবে বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়াই ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী। যে পানিতে ই. কোলাই–এর মতো ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে, তা পান করলে ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে। তবে সব সময়ই যে এমনটা ঘটবে, তা নয়। ই. কোলাই হলো এমন এক ব্যাকটেরিয়া, যা প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশে বিরাজমান। তবে মানুষের অন্ত্রেও এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে। এটি কেবল তখনই ঘটে, যখন ব্যাকটেরিয়া রোগজীবাণুতে পরিণত হয়।
ফ্রিস্টোন বলেন, বেশির ভাগ অণুজীবই মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি হতে পারে। এ ছাড়া পেটে জীবাণুর সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হলে কিছু ক্ষেত্রে অন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন হতে পারে। তবে ফ্রিস্টোন মনে করেন যে পানির বোতলে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে শরীরে কখনোই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না।
এ ছাড়া যেসব মানুষ সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছেন এবং যা তাদের পেটের অণুজীবের ওপর প্রভাব ফেলেছে, তাদের শরীরেও বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। তারা অন্য সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
কীভাবে বোতল পরিষ্কার করতে হবে
পানি পানের সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীরে যেন প্রবেশ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত ও যথাযথভাবে বোতল পরিষ্কার করতে হবে।
ফ্রিস্টোন মনে করেন, ঠান্ডা পানি দিয়ে বোতল ধোয়াটা যথেষ্ট নয়। কারণ, এতে বোতলের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয় না।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতলগুলো গরম পানি (৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) দিয়ে পরিষ্কার করার সুপারিশ করেছেন ফ্রিস্টোন। তাঁর মতে, বোতলগুলো তরল ডিশওয়াশার দিয়ে নাড়াচাড়া করে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর বোতলে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো ঠেকাতে এটিকে বাতাসে শুকিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। কারণ, অণুজীবগুলো আর্দ্র পরিবেশ পছন্দ করে।
ফ্রিস্টোন মনে করেন, প্রতিবার ব্যবহারের পরই এ প্রক্রিয়ায় বোতল পরিষ্কার করা উচিত। অন্ততপক্ষে সপ্তাহে কয়েকবার বোতল পরিষ্কার করতে হবে। বোতল থেকে দুর্গন্ধ বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ বিশেষজ্ঞের মতে, বোতল থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করার মানে হলো, এটি ফেলে দেওয়ার সময় এসে গেছে।
বোতল ধোয়া হলে এটি ধরার আগে হাত পরিষ্কার করার বিষয়টিও মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।