সরকারি ব্যয়ের ৬১ শতাংশই সুদ বেতন পেনশনে
Published: 30th, January 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন এবং ঋণের সুদ পরিশোধে গেছে ৮৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা; যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৬১ শতাংশ। চার মাসে সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওমায়ী লীগ সরকার। সেই বাজেটই অব্যাহত রেখেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের দুটি অংশ থাকে– উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম চার মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৯৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
তবে এ সময়ে উন্নয়ন ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশে। টাকার অঙ্কে যা ১৬ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে বাস্তবায়ন হার ছিল ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ছিল ২৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।
সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়বে, পেনশনও দিতে হবে। তবে সুদ পরিশোধে ব্যয় মারাত্মক গতিতে বাড়ছে। তাই সরকারকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে কর ফাঁকি রোধ করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে সৃষ্টি হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ থাকলেও গত সরকারের নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তাছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি।
করোনা মহামরি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ থাকায় গত কয়েকটি অর্থবছরে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের ঘোষণা দেয় সরকার। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পরিচালন বাজেট বাস্তবায়নের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়ন ছিল ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৭ এবং ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এদিকে সম্প্রতি অর্থ বিভাগ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থার উদ্দেশে চিঠি দিয়ে বাজেট বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য নেই। রাজস্ব আহরণ ও সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা না থাকার কারণেই এমন হয়েছে। এতে আর্থিক শৃঙ্খলা যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তেমনি বছরজুড়ে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়, যার জন্য বড় অঙ্কের সুদ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকে।
অর্থ বিভাগের চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতারও খুব মিল পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুসারে, গত জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে সংস্থাটির মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কম হয়েছে ১ হাজার ৫৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এনবিআর বহির্ভূত রাজস্বেও আশানুরূপ সাড়া নেই। চার মাসে এ খাত থেকে আয় এসেছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধেই গেছে বাজেটের ৪৭ শতাংশ
বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত দাঁড়িয়েছে সুদ পরিশোধ। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারি ব্যয়ের ৪৭ শতাংশ অর্থাৎ ৫৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৫১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৩১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে তুলনায় এবার ব্যয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ ৭ শতাংশ।
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়; যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ।
চার মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২০ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এদিকে চার মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প নশন র ট ক সরক র র পর ম ণ য় হয় ছ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
মুনাফায় বেক্সিমকো ফার্মা, লোকসানে বেক্সিমকো-শাইনপুকুর
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২৪) ও অর্ধবার্ষিক (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো লিমিটেড ও শাইনপুকুর সিরামিক্স লিমিটেড।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য প্রন্তিকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে। বাকি দুইটি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান বেড়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস: কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৪.১০ টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩.২১ টাকা। এতে করে মুনাফা বেড়েছে ০.৮৯ টাকা বা ২৮ শতাংশ। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৭.৮৭ টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৬.৬৯ টাকা। এতে করে মুনাফা বেড়েছে ১.১৮ টাকা বা ১৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১১.৩৫ টাকায়।
বেক্সিমকো: কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (২.৫৮) টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ০.৮২ টাকা। এতে করে কোম্পানিটি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (৩.৭৮) টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ০.০৩ টাকা। এতে করে কোম্পানিটি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮২.৫৭ টাকায়।
শাইনপুকুর সিরামিক্স: কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১.০১) টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। এতে করে কোম্পানিটি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১.৩৫) টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ০.০২ টাকা। এতে করে কোম্পানিটি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৯.৭৭ টাকায়।
ঢাকা/এনটি/ইভা