প্লে-অফে কে কার প্রতিপক্ষ: চ্যাম্পিয়নস লিগ
Published: 30th, January 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের নাটকীয় শেষ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বুধবার (২৯ জানুয়ারি, ২০২৫) রাতে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী ৩৬ দল থেকে শীর্ষ আট দল সরাসরি স্থান করে নিয়েছে সেরা ষোলোতে।দুর্দান্ত কিছু সমীকরণ মিলিয়ে পরের ১৬টি দল জায়গা করে নিয়েছে প্লে-অফে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে ১২টি দলের।
বুধবারে চয়াম্পিয়নস লিগের নানান সমীকরন মেলানোর রাতে নিশ্চিত হয়েছে কোন দলগুলো ৯তম স্থান থেকে ২৪তম স্থানে থাকবে। এই ১৬টি দলই খেলবে প্লে-অফে। সেখান থেকে দুই লেগের মুখোমুখি লড়াই জিতে স্থান করে নিবে সেরা ষোলোতে।
স্বাভাবিকভাবেই এবার নকআউট পর্বের ড্রয়ের জন্য অপেক্ষা। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫) বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে প্লে-অফ পর্বের ড্র। শেষ ষোলোর ড্র হবে প্লে-অফ পর্ব শেষে।
আরো পড়ুন:
বিরতির পরের নাটকীয়তায় প্লে-অফে সিটি
চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৮ ম্যাচের মহারণ, দলগুলোর শেষ সমীকরণ
বুধবার রাতে প্রথম পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরেই অবশ্য দলগুলো জেনে গেছে প্লে-অফ বা শেষ ষোলোর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের নাম। এবার লিগ পর্বের পয়েন্ট তালিকায় অবস্থানের ভিত্তিতেই কে কার মুখোমুখি হবে, সেটি নির্ধারিত হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি নয়, সব দলেরই সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ দুটি করে। প্লে-অফে জায়গা পাওয়া ১৬ দলের মধ্যে পয়েন্ট তালিকার ৯ থেকে ১৬ নম্বরকে নির্ধারন করা হয়েছে বাছাই দল হিসেবে। অন্যদিকে ১৭ থেকে ২৪ নম্বর দল গুলো আছে অবাছাই হিসেবে। প্লে-অফে বাছাই দলগুলো খেলবে অবাছাই দলগুলোর বিপক্ষে।
এবারের প্লে-অফের নিয়ম অনুযায়ী ৯ ও ১০ নম্বরে থাকা দল প্লে-অফে পাবে ২৩ বা ২৪ নম্বর দলকে। এভাবে ১১/১২ খেলবে ২১ বা ২২, ১৩/১৪ খেলবে ১৯ বা ২০ ও ১৫/১৬ খেলবে ১৭ বা ১৮ নম্বর দলের বিপক্ষে। আগামীকাল ড্রতে নির্ধারিত হবে কে কোন দলের বিপক্ষে।
ড্রয়ের এমন নিয়মের কারণেই ম্যানচেস্টার সিটি যেমন জেনে গেছে, প্লে-অফে তাদের প্রতিপক্ষ হয় রিয়াল মাদ্রিদ, নয় বায়ার্ন মিউনিখ। পয়েন্ট টেবিলে রিয়ালের অবস্থান ১১, ১২ নম্বরে আছে বায়ার্ন। খাদের কিনারা থেকে ম্যাচ জিতে প্লে-অফ নিশ্চিত করা সিটি আছে ২২ নম্বরে। ফলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নের বাদ পড়ে যাওয়ার আশংকা আছে প্লে-অফেই। তাছাড়া বায়ার্ন ও সিটিও আসর টির সাবেক শিরোপাধারী। অন্যদিকে ২১ নম্বর হওয়া সেল্টিকও প্লে-অফে রিয়াল অথবা বায়ার্নকে পেতে পারে। ড্রতে নির্ধারিত হবে বিষয়গুলো।
শেষ ষোলোতে সরাসরি ওঠা আটটি দলও সম্ভাব্য চার প্রতিপক্ষের নাম জেনে গেছে। যেমন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল লিভারপুল ও বার্সেলোনা শেষ ষোলোতে খেলবে পয়েন্ট তালিকার ১৫ থেকে ১৮ নম্বর হওয়া চার দল পিএসজি, বেনফিকা, মোনাকো কিংবা ব্রেস্তের বিপক্ষে। এটাও নির্ধারিত হয়ে গেছে যে শীর্ষ দুই দল লিভারপুল ও বার্সেলোনার ফাইনালের আগে দেখা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্লে-অফে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ
পিএসজি/বেনফিকা—মোনাকো/ব্রেস্ত
আতালান্তা/ডর্টমুন্ড—স্পোর্তিং/ব্রুগা
রিয়াল মাদ্রিদ/বায়ার্ন—সেল্টিক/ম্যান সিটি
এসি মিলান/পিএসভি—ফেইনুর্ড/জুভেন্টাস
শেষ ষোলোর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ
লিভারপুল/বার্সেলোনা—পিএসজি/বেনফিকা/মোনাকো/ব্রেস্ত
লিল/অ্যাস্টন ভিলা—আতালান্তা/ডর্টমুন্ড/স্পোর্তিং/ব্রুগা
আতলেতিকো/লেভারকুসেন—রিয়াল মাদ্রিদ/বায়ার্ন/সেল্টিক/ম্যান সিটি
আর্সেনাল/ইন্টার মিলান—এসি মিলান/পিএসভি/ফেইনুর্ড/জুভেন্টাস
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল চ য ম প য়নস ল গ চ য ম প য়নস ল গ পর ব র দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ই-কমার্সে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গ্রাহক আস্থা
পর্ব–২
ই-কমার্সের প্রাণভোমরা হলো আস্থা। যখন একজন ক্রেতা নিজের মোবাইল ফোনে বা ল্যাপটপে ক্লিক করে একটি অর্ডার দেন, তখন তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর পছন্দের পণ্য ঠিকঠাক পৌঁছে যাবে। এই বিশ্বাসের ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, তাহলে ই-কমার্সের অগ্রযাত্রা থমকে যায়। বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গ্রাহক আস্থা নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে ই-কমার্স নিরাপত্তা পরিস্থিতি
ই–ক্যাব ও লাইটক্যাসল পার্টনার্সের যৌথ জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশের ই-কমার্স ক্রেতাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ এখনো অনলাইন লেনদেনে শঙ্কা অনুভব করেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতে, ২০২৩ সালে ই-কমার্স সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার। প্রধানত পণ্য না পাওয়া, ভিন্ন পণ্য সরবরাহ, টাকা ফেরতে বিলম্ব এবং গ্রাহকের তথ্য অপব্যবহার ছিল অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
কেন গ্রাহক আস্থা হারাচ্ছে?
* অনলাইন লেনদেন ঝুঁকি: ফিশিং, স্ক্যাম, ক্লোনড পেমেন্ট পোর্টালের কারণে গ্রাহক আস্থা কমছে।
* ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা সংকট: অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানার মতো তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে না।
* ফেক অফার ও প্রতারণা: ভুয়া পেজ, ছাড়ের নামে প্রতারণা ই-কমার্সকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
* রিফান্ড ও রিটার্ন নীতির জটিলতা: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত (রিফান্ড) না পাওয়া গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে।
বিশ্ব অভিজ্ঞতা: সফল নিরাপত্তা মডেল
চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ই-কমার্স ইকোসিস্টেমে নিরাপত্তা ও আস্থা বিষয়ক কিছু কার্যকর মডেল অনুসরণ করা হয়।
* চীন: আলিবাবার বায়ার প্রটেকশন প্রোগ্রাম।
* ভারত: অ্যামাজনের এ টু জেড গ্যারান্টি ও ইউপিআই সিস্টেমে ফ্রড রেজোলিউশন সেন্টার।
* ইন্দোনেশিয়া: টকোপিডিয়ার সেলার ভেরিফিকেশন ও ইজি রিটার্ন পলিসি।
ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য মূল করণীয়
* ভেরিফায়েড সেলার প্রোগ্রাম চালু করা।
* সাইবার নিরাপত্তা মান বাধ্যতামূলক করা।
* ক্রেতার যাচাই করা রিভিউ ও রেটিং সিস্টেম চালু।
* কেন্দ্রীয় অভিযোগ নিষ্পত্তি সিস্টেম তৈরি (আইসিটি বিভাগ ও ই–ক্যাব)।
* ট্রাস্ট ব্যাজ ও ডিজিটাল সার্টিফিকেশন চালু করা।
গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য করণীয়
* রিফান্ড ও রিটার্ন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করা।
* অনলাইন লেনদেন সুরক্ষায় ব্যাংক ও এমএফএস সহযোগিতা বাড়ানো।
* ক্রেতা সুরক্ষায় ডিজিটাল ভোক্তা অধিকার আইনের বাস্তবায়ন।
* সচেতনতামূলক প্রচারণা: ‘বাই ফ্রম ভেরিফায়েড সেলার’ প্রচারণা চালু করা।
বাংলাদেশ সরকার ও ই-ক্যাবের ভূমিকা
* সাইবার সিকিউরিটি সেল সক্রিয় করা (আইসিটি বিভাগ)।
* ই–ক্যাবের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসার সুশাসন নিশ্চিত করা।
* সেলার ব্ল্যাকলিস্ট ডেটাবেজ তৈরি করা।
* ব্যাংক ও লেনদেন গেটওয়ের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে প্রতারণা প্রতিরোধ করা।
ফিনটেকের ভূমিকা
ফিনটেক ইকোসিস্টেমের সঙ্গে ই-কমার্সের সংযোগ আরও জোরদার করতে হবে। ডিজিটাল লেনদেন নিরাপত্তায় বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে হবে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
* ২০২৫ সালের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ ই-কমার্স লেনদেন সুরক্ষিত ডিজিটাল মাধ্যমে করা।
* ১০০ শতাংশ ই-কমার্স সাইটে এসএসএল সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা।
* রিফায়েড সেলারের সংখ্যা ১ লাখে উন্নীত করা।
* ই–ক্যাব সদস্যভুক্তদের জন্য বাধ্যতামূলক সাইবার নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স চালু করা।
ই-কমার্স কেবল প্রযুক্তির খেলা নয়, এটি মানুষের আস্থার খেলা। যেখানে নিরাপত্তা আছে, সেখানেই বাণিজ্য টেকে। বাংলাদেশের ই-কমার্স বিপ্লব সফল করতে হলে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হতে হবে গ্রাহক আস্থা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
(চলবে)
ড. মোহাম্মদ নূরুজ্জামান: ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ সিইও ও গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ