নাছির উদ্দিন চৌধুরীর বয়স এখন ৫৮ বছর। তার বয়স যখন ২৩/২৪, তখন তার নামের আগে যুক্ত হয় শিবির। নানা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম নগর এবং পুরো উত্তর চট্টগ্রামে ‘শিবির নাছির’ ছিল এক আতঙ্কের নাম। ৩৬টি মামলায় আলোচিত এই শিবির নাছিরকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে দীর্ঘ ২৬ বছর। 

সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এই নাছির নিজেই অভিযোগ করলেন, ‘শিবির নাছির’ নাম ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি করছে। 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার রাইজিংবিডিকে বলেছেন, তার নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন মহলকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাদেররকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি। 

আলাপকালে নাছির উদ্দিন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার জীবনের যৌবনকাল আমি কারাগারেই কাটিয়ে দিয়েছি। দীর্ঘ ২৬ বছর আমি জেলে ছিলাম। এখন আমি মুক্তি পেয়ে সব কিছু থেকে দূরে স্বাভাবিক জীবন কাটানোর প্রচেষ্টায় আছি। টুকটাক ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবন যাপন করতে চাই। কিন্তু এই সময়েও আমার নাম ব্যবহার করে কতিপয় ব্যক্তি/গোষ্ঠি বিভিন্ন মহলে হুমকি ও চাঁদাবাজি করছে বলে আমার কাছে অভিযোগ আসছে। এ ব্যাপারে আমি পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।” 

নাছির জানান, তার বিরুদ্ধে ডাবল, ট্রিপল মার্ডারসহ মোট ৩৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ৩১টি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। দুটির মামলার সাজা হয়েছিলো এবং সেই সাজার মেয়াদও কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছেন। বাকি তিনটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। এর পর গত আগস্ট মাসে তিনি কারামুক্ত হয়েছেন।

নাছির বলেন, “আমি ভালো হওয়ার শপথ নিয়ে কারগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বের হয়েছি। আমি কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কোনভাবেই জড়াতে চাইনা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে খবর পাচ্ছি আমার নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-চাকরিজীবী, বন্দর সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীসহ অনেকের কাছেই একটি মহল হুমকি ধমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে।” 

এসব কোন কিছুর সাথেই তার সম্পৃক্ততা নাই উল্লেখ করে নাছির জানান, যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে ইতিমধ্যে থানায় সাধারণ ডায়রি এবং পুলিশ কমিশনারকেও বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। 

সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাছির বলেন, “যারা আমার নাম ব্যবহার করে হুমকি বা চাঁদা দাবি করবে তাদের ব্যাপারে সাথে সাথে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে অনুরোধ করছি।”  

প্রসঙ্গত নাছির উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী এলাকার এলাহী বক্সের ছেলে। গত বছরের ১১ আগস্ট ২৬ বছর কারাভোগ করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। 

ঢাকা/রেজাউল/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ

বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।

জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।

জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।

আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।

বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ