এ ধরনের ঘটনা ঘটবে কেন, মমর অকপট প্রশ্ন
Published: 30th, January 2025 GMT
চট্টগ্রামে মেহজাবীন চৌধুরী, টাঙ্গাইলে পরীমণির পর বাধার মুখে রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করতে পারেননি চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীচরের একটি রেস্তোরাঁ উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও মুসল্লিদের আপত্তির মুখে যেতে পারেননি এই অভিনেত্রী।
পরীমণি থেকে অপু বিশ্বাস— দুটো ঘটনা কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চাপা ক্ষোভ রয়েছে শিল্পীদের মনেও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উৎসাহ যুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। মেহজাবীন, পরীমণি ও অপু বিশ্বাসের সঙ্গে ঘটা ঘটনা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
অকপটে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জাকিয়া বারী মম বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ঘটবে কেন? এ ধরনের ঘটনা ঘটাই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত। এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। সমাজ যদি সজাগ থাকে, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না।”
আরো পড়ুন:
ট্রেনে হার্ট অ্যাটাকে পরিচালকের মৃত্যু
রাজের নায়িকা ফারিণ!
একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জাকিয়া বারী মম বলেন, “আমি আমার কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। ফলে সোশ্যাল মিডিয়াতে নেই; অনেক কিছুই দেখাও হয়নি। সুতরাং আমার মন্তব্য করাও অনুচিত। তবে লোকমুখে শুনেছি। এ ঘটনা নিয়ে কী বলব? এগুলো কি কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত? অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার পর কোনো শব্দ আমার নাই। এগুলো কাঙ্ক্ষিত, আশাব্যঞ্জক কোনো ঘটনা না। যে বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হলো, তারপর এই ধরনের কার্যকলাপ কি সহনীয়? এসব কি মেনে নেওয়া যায়? গ্রহণযোগ্য? সত্যি আমার কিছু বলার নাই।”
একজন শিল্পী হিসেবে আপনার জায়গা থেকে আপনার ভাবনা জানতে চাই। প্রশ্নটি রাখার পর জাকিয়া বারী মম বলেন, “আমার কোনো জায়গা নাই, আমি কোথাও নাই। এসব খবর শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। আমি আসলে নিজের মতো নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। আমি কোনো জায়গায় থাকতেই চাই না! আমি ছোট মানুষ, পৃথিবীতে ক্ষুদ্র একটা কণিকা মাত্র। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আমি ভাষাহীন। এসব কোন শব্দে ব্যাখ্যা করা যায়, তা আমার অভিধানে নাই।”
শিল্পীরা দলছুট? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খানিকটা ব্যাখ্যা করেছেন জাকিয়া বারী মম। তার ভাষায়, “দলছুট ঠিক না। আমার একটাই দল— সেটা বাংলাদেশ। কিন্তু এ দলে কি আমরা থাকতে পারছি? এই ঘটনাগুলো কি আমাদেরকে আশা দিচ্ছে? আমার-আপনার কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়। এটা বেসিক নিডের জায়গা। আর্ট-কালচার বা আপনার-আমার অঙ্গণের কোনো ব্যাপার না। সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা, একদম বেসিক। সমাজের পরিবর্তনের জন্য, সমাজের সুস্থতার জন্য প্রত্যেক নাগরিক দায়ী। আমরা দেশকে তো ভালোবাসি না! যদি ভালোইবাসতাম তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। দেশকে ভালোবাসলে ইতিবাচক অনেক কিছু হতে পারে।”
এসব ঘটনার জন্য শিল্পী একা দায়ী নন। জাকিয়া বারী মমর মতে, “এখানে শিল্পী একা কী করবে? যে ব্যক্তি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন, তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। উনি যে বিব্রত হয়ে ফিরে আসলেন, এজন্য চারপাশের মানুষ দায়ী, এই সমাজ দায়ী। সমাজকে এটা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে, সমাজকেই প্রতিরোধটা করতে হবে। শিল্পী তো এই সমাজেরই মানুষ; শিল্পী তো আকাশ ফুড়ে বের হয় নাই।”
এসব সমস্যা সমাধের জন্য সমাজকে সচেতন হতে হবে। একজনের প্রতি আরেকজনের সম্মান থাকতে হবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। অন্যথায় সম্ভব না। এসব তথ্য উল্লেখ করে জাকিয়া বারী মম বলেন, “আমরা মূল জায়গায় ঠিক নাই। এখানে সবাইকেই কথা বলতে হবে। আমি-আপনি কথা বললে মনে হবে, আমরা কেবল পেশাদারভাবে কথা বলছি। যাদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন, তারা কেন দায় নেন নাই?”
গত মঙ্গলবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ‘সোনার থালা’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করার কথা ছিল অপু বিশ্বাসের। কিন্তু আপত্তি জানায় স্থানীয় ‘হুজুররা’। আপত্তির মুখে রেস্তোরাঁটির মালিক কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমীরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। তারা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেন, “অপু বিশ্বাসকে আনলে যদি হুজুররা বিশৃঙ্খলা করেন, আপত্তি জানান, তাহলে আমরা অপু বিশ্বাসকে আনব না। আমরা ব্যবসা করব। লোকজন নিয়ে চলতে হবে।”
রেস্তোরাঁ মালিকের এই বক্তব্য তুলে ধরা হলে জাকিয়া বারী মম বলেন, “ব্যবসা করলে তো সততার সঙ্গে করতে হবে। অন্যকে অসম্মান করে ব্যবসা করা যায় নাকি! এটা তো হয় না। হয়তো তারা ব্যবসা করবেন, টাকার ওপরে ঘুমিয়ে থাকবেন। কিন্তু বরকত হবে না। সে টাকা অন্য কোনোভাবে চলে যাবে। ব্যবসায় সততা খুবই জরুরি। আপনি একজন শিল্পীকে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে সঠিক নিরাপত্তা, সম্মান না দিতে পারা আপনার ব্যর্থতা। শিল্পী তার প্রতিশ্রুতির জায়গা থেকে কাজ করতে গিয়েছেন। আপনার শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং দায়টা আপনার। আশেপাশের আরো দশটা শোরুমের মালিক দায়ী! তারা কেন প্রতিবাদ করেন নাই? অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি! এই মুহূর্তে আমাদের যেটা নাই, সেটা হলো— সততা।”
সমাজে নারীর গুরুত্বের ব্যাপার স্মরণ করে জাকিয়া বারী মম বলেন, “যে সমাজ নারীকে সম্মান করে, সেই সমাজের উন্নতি হয়। যে সমাজ নারীকে সম্মান করে না, সেই সমাজ কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। এটা আমার পর্যবেক্ষণ। একজন নারী মা, বোন, দোকানদার, চা বিক্রেতা কিংবা প্রেমিকা হতে পারেন— অন্য যেকোনো কিছুই হতে পারেন। কিন্তু সে নারী। নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা যে সমাজ দিতে পারবে সেই বড় হবে। এটার কোনো ব্যত্যয় নেই।”
ব্যাখ্যা করে জাকিয়া বারী মম বলেন, “মানুষ মাত্রই সম্মান করা উচিত। আপনার ধারণা কী, আপনার ধর্ম কি, আপনার পেশা কি— এসব কিছুর আগে আপনি একজন মানুষ। আপনার প্রাপ্য সম্মান আপনাকে দিতে হবে। নারী সমাজের সেই প্রতীক, যাকে সম্মান করলে বোঝা যাবে সেই জাতির ভবিষ্যৎ আছে। যে জাতি নারীকে সম্মান করে না, সেই জাতির ভবিষ্যৎ নাই।”
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে জাকিয়া বারী মম বলেন, “সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে, আর্ট-কালচার করতে হবে। বাংলাদেশের দায়িত্বটা নিতে হবে। এসব দায়িত্ব কে নিবে? এই দায়িত্ব কার কাছে! পরিস্থিতি এমন কাউকে দায়ী করতে পারবনে না, অভিযোগ করতে পারবেন না। এজন্য নির্বাচনটা খুব বেশি প্রয়োজন।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র এ ধরন র ঘটন র জন য ন করত ব যবস আপন র আপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিতে থাকা পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের কড়োগ্রাম এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- এনাম ফকির, সিএনজি চালক আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল করিম আলাল।
জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান জানান, মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সিনএজি অটো রিকশায় থাকা ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
উদ্ধারকৃতদের মধ্য এনাম ফকির স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। এনামের বাবা আমজাদ ফকির গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এখান থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।”
ঢাকা/শোভন/এস