বাংলাদেশের ৪০টি জনগোষ্ঠীর ভাষিক প্রতিনিধিবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ‘মাল্টিলিংঙ্গুয়াল ক্লাউড: ডিজিটাল রিসোর্সেস ফর ল্যাঙ্গুয়েজেস অফ বাংলাদেশ’ বিষয়ক কর্মশালা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড.

মুহাম্মদ মেহেদি হাসান। 

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম।
 
বিশেষ অতিথি আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়ব ভিডিও বার্তায় বলেন, “বিশ্বের প্রায় ৭১০০ ভাষার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভাষাই বিপন্ন হতে চলেছে। ভাষার টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চর্চা ও ডিজিটাল সংরক্ষণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশন ও ট্রাইলিঙ্গুয়াল ডিকশনারি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা ভাষার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভাষাগত সংরক্ষণ নিয়ে প্রধান অতিথি শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের ভাষাগুলো শুধুমাত্র ভাষাগত পরিচয়ের অংশ নয় বরং এরা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই ভাষাগুলোর সংরক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।” 

তিনি এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ভাষিক মিলের লক্ষ্যণীয় দিকগুলো তুলে ধরেন। এই আলোকে বিপন্ন ভাষাগুলোকে কীভাবে প্রাণবন্ত করা যায়, এদিকে গুরুত্ব আরোপ করে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

কর্মশালায় ভাষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় পর্বে, ম্রো ভাষার ব্যাকরণ প্রণেতা ইয়াঙগান ম্রো তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “ম্রো ভাষার কিবোর্ড ও ফন্ট তৈরির ফলে আমাদের ভাষা সংরক্ষণ ও প্রচারের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই উদ্যোগ আমাদের ভাষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব, কারিগরি অধিবেশনে কমিউনিটি-ভিত্তিক ভাষা উন্নয়ন এবং ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মনিপুরি মৈতৈ ভাষার প্রতিনিধি একে শেরাম ইউবোর্ডে মনিপুরি মৈতৈ লিপি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া তিনি অঞ্চলভিত্তিতে ভাষা বিষয়ক কর্মশালা ও বাংলাদেশের ভাষার কিবোর্ড, ইউবোর্ডকে তরুণ প্রজন্মের সাথে পরিচয় ও তাদের মাঝে এর ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আহবান জানান।

উক্ত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জফির উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম সুমন।

অধ্যাপক ড. জফির বলেন, “একটি জাতির ভাষা মৃত্যুর সাথে সাথে সেই জাতির সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চারও মৃত্যু হয়, তাই যে ভাষাগুলোর ডিজিটাইজেশন করা হলো তার যে শব্দ, বাক্য, রূপমূল রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, বয়স্ক ব্যক্তি যে কিনা ঐ ভাষা থেকে দূরে আছে, সেক্ষেত্রে তার ভাষা নেওয়ার জন্য তার কাছে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা সেটা এই প্রকল্পে কতটা অনুসরণ করা হয়েছে, তা দেখার বিষয়।”

অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার একটি লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, “যেখানে সব ভাষাভাষী এই প্ল্যাটফর্মের আলোকে ভাষাগুলো শিখতে আগ্রহী হবে।” 

একই সাথে প্রত্যেকটি ভাষার আইপিএ সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ধাপে যদি এই প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বিভিন্ন ভাষার ধ্বনিগত দিক বিশ্লেষণ করে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করা যাবে।” 

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদ ভাষা সংরক্ষণ করার পাশাপাশি ভাষার প্রয়োগও নিশ্চিত করনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই ডিজিটাল রিপোজিটরির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান।

অনুষ্ঠানটিতে ধারণাপত্র উপস্থাপন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নানা মন্তব্য ও প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করেন প্রকল্পের পরামর্শক, সঞ্চালক মামুন অর রশীদ। 

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা ভাষার ডিজিটাইজেশনের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা/হাসান/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর

তারল্যসংকট, কারসাজি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে গত বছরজুড়ে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম ছিল খুবই দুর্বল। চলতি বছরও তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেয়ারবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার সম্পর্কে এমন মতামত বা ধারণা তুলে ধরেছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের কোনো আস্থা নেই। সাড়ে ৩৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের কিছুটা আস্থা আছে এই নেতৃত্বের প্রতি। মাত্র ১০ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁরা আস্থাশীল।

দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শেয়ারবাজার নিয়ে এসব মতামত উঠে এসেছে।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়। জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সেবা খাত, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

শেয়ারবাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত নিয়েও বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করে আসছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী। জবাবে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ বছর অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ৫৯ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ৫৬ শতাংশ ব্যাংক খাতের সংকটকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাত সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাড়ে ৬৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, এসব নীতি গ্রহণের ফলে কিছুটা আস্থা ফিরবে।

জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর কোন বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, জবাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নবগঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কোনটি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৮ শতাংশ মতামতকারী জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের যে জরিমানা করা হয়েছে, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছর শেষে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬১ শতাংশই এ ধারণা পোষণ করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারী বলেছেন, চলতি বছর শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো। এরপরের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মনে করেন শেয়ারবাজারে প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে ব্যাংক খাতের। আর ৩৬ শতাংশ মনে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে টেলিকম খাতের। আর ২৭ শতাংশ মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভালো অবদান রাখবে।

শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন চলতি বছরও বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশই এই ধারণা পোষণ করেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন লেনদেন ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কেউই মনে করেন না এ বছর শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর