হবিগঞ্জের জালালাবাদে ভেঙে যাওয়া খোয়াই নদীর মেরামতরত বাঁধ ফের ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। বাঁধের অক্ষত অংশের গোড়া থেকে মাটি কেটে ভাঙা অংশে নিয়ে ফেলায় এই শঙ্কা করছেন বাঁধ সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর দেওয়া অনুযায়ী, গত বর্ষায় বাঁধের ভেঙে যাওয়া ৭৮ মিটারে দুইদিকে স্লোপসহ ৯০ মিটার এবং নদীর ভিতরে ও বাইরে আরও ১২৫ মিটার ঢালু জায়গায় মাটি ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ১৭ হাজার ২৮২ ঘনমিটার মাটি প্রয়োজন এবং ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪২ লাখ টাকা। ব্যয়ের টাকা নেওয়া হবে উপজেলা প্রশাসনের কাবিটা প্রকল্প থেকে। তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) কাজের তত্ত্বাবধান করবে।

পিআইসির শর্ত অনুযায়ী ৬ হাজার ৫২০ ঘনমিটার মাটি বাঁধের ক্ষতি হয় না নদীর এমন দূরবর্তী স্থান থেকে এনে এক্সকেভেটর দিয়ে ফেলার কথা। এজন্য প্রতি ঘনমিটার ১৫৬ টাকা হিসেবে ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ ১৬ হাজার টাকা। বাকি ১০ হাজার ৭৬২ ঘনমিটার মাটি ৪৪১ টাকা দরে ট্রাকে করে অন্যত্র থেকে আনার কথা। এর ব্যয় ধরা হয় আরও ২৬ লাখ টাকা।

এখানে পিআইসির শর্ত অমান্য করে ভেঙে যাওয়া স্থানের কাছেই নদীর অভ্যন্তরে অক্ষত বাঁধের ৭০ মিটারের কাছাকাছি স্থান থেকে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফলে বাঁধের কাছেই অন্তত ১৫ ফুট গর্ত তৈরি হয়েছে। চিত্র এমন দাঁড়িয়েছে- একস্থানে বাঁধের গোড়ায় মাটি কেটে গভীর গর্তে পরিণত করে অপর স্থানের গর্ত মেরামত করা হচ্ছে।

সেখানে ১টি এক্সকেভেটর ও ৩টি ট্রাক্টর দিয়ে ৬ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে তুলে অদূরেই ভাঙা স্থানে নিয়ে ফেলছেন। কর্মরতরা জানান, বাইরে থেকে ট্রাকে করে কোনো মাটি আনা হবে না। নদীর ভিতর থেকেই ট্রাক্টর দিয়ে প্রয়োজনীয় সব মাটি ভাঙা বাঁধে ফেলা হবে।

জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা জমির আলী, রাজু মিয়া, সমুজ মিয়া জানান, বর্ষায় হবিগঞ্জ শহর রক্ষার উদ্দেশ্যে জালালাবাদে নদীর বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছিল। এজন্য প্রায় ৭ মাস ধরে বাঁধের উপরে নির্মিত সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন আবার এক স্থানে গর্ত করেই অপর স্থানের গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু এমনভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে যে, এর ফলে অক্ষত বাঁধের স্থানে বর্ষায় ভাঙন দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “নদীর বাঁধের নিকট গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া দায়িত্বহীনতার পরিচয়। নদীতে নামানো এক্সকেভেটর তুলে নেওয়া উচিৎ। অন্য নিরাপদ স্থান থেকে মাটি আনা হোক।”

পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবো এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল আজম বলেন, “কাজটা মূলত স্থানীয় উপকারভোগীদের নিয়ে গঠিত পিআইসি করছে। বাঁধের গোড়ার এত কাছ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কথা নয়। তারা যদি এমনটি করে থাকেন তাহলে  আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, গত মে মাসের বন্যায় খোয়াই নদীতে পানি বেড়ে হবিগঞ্জ শহর তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। তখন জালালাবাদের দিকে নদীর প্রায় ২০ ফুট বাঁধ কেটে দেওয়া হয় নদী থেকে পানি বের করে চাপ কমানোর জন্য। বাঁধ কেটে দেওয়ার পরদিনই হবিগঞ্জ শহর অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত হয়। সময় মেরামত না করায় বাঁধের ভাঙা জায়গা বাড়তে বাড়তে ২৫৬ ফুটে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা/মামুন/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প আইস

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ