কুড়িগ্রামের চিলমারীতে এক মাসের ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদে আবারো নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে চিলমারী-রাজিবপুর নৌপথে কড়াই বরিশালের যুগ্নি ধোয়া নদের মোহনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

চিলমারী নৌ-বন্দরের নৌ ঘাট মাষ্টার সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে নৌ মাঝি বদিউজ্জামানের নৌকাটি ৩৪ জন যাত্রী নিয়ে চিলমারী থেকে রাজিবপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নৌকাটি চিলমারী ইউনিয়নের ও গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের নদের মোহনা এলাকায় পৌঁছালে নৌকাটি ডাকাতের কবলে পড়ে। এ সময় ১৫-১৬ জনের মুখোশধারী একটি ডাকাতের দল যাত্রীবাহী নৌকার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও সকল যাত্রীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। 

রাজিবপুর নৌ-ঘাটের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ডাকাতি শেষে ইঞ্জিন চালু করার হ্যান্ডেল ও তেলের ট্যাঙ্ক খুলে নিয়ে ডাকাত দল সুন্দরগঞ্জের দিকে চলে গেলে ডাকাতির কবলে পড়া নৌকাটি যাত্রীসহ চরে আটকা পড়ে। পরে খবর পেয়ে চিলমারী নৌ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে রাজিবপুর থেকে আসা একটি নৌকায় তুলে দেয়।” 

নৌকাটির যাত্রী মো.

আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি ১৬ দিন রংপুর মেডিকেলে ভর্তি ছিলাম। বুধবার বাড়ি ফেরার পথে নৌ-ডাকাতির কবলে পড়লাম। ডাকাতরা ১৫ জনের মতো ছিলো। তাদের হাতে বন্দুক, রামদা, শাবল ছিলো। আমাদের নৌকার সব যাত্রীদের জুতা, জ্যাকেট, টাকা-পয়সা, গয়না সব নিয়ে গেছে। কয়েকজনকে মারধর করেছে।”

ঘটনা এক ঘণ্টা পর চিলমারীর নৌ-থানার পুলিশ এসে ঘটনার বর্ণনা লিখে নিয়ে গেছে। পরে ডাকাতের কবলে পড়া নৌকাটি সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজিবপুর ঘাটে গিয়ে পৌঁছায়। 

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে ইজতেমায় আসার পথে অস্ত্রের মুখে একটি নৌ-ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সাক্ষী না পাওয়া ও কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। 

চিলমারী নৌ থানার উপ-পরিদর্শক সেলিম সরকার বলেন, “এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমরা বিষয়টি জানার পর যাত্রীদের জন্য আরেকটি নৌকায় ব্যবস্থা করে দিয়েছি।” 

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “২১ ডিসেম্বর নৌ-ডাকাতির ঘটনার কোনো সাক্ষী বা ভুক্তভোগী পাওয়া যায়নি।”

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ সুপার জানান, নৌ ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। নিয়মিত নৌ-পথ নিরাপদ রাখতে টহল জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা/বাদশাহ্/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ক ত র ঘটন ড ক ত র কবল ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সৌদি আরবে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ১৫২ জন অসহায় দরিদ্র নারীর সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের এক উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম শহীদুল ইসলাম। তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পেয়ে ওই নারীরা ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যাংক এশিয়ার বিভিন্ন এজেন্টের কাছে ঘুরছেন। কিন্তু কেউ তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিতে পারছেন না। টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ওই নারীরা।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর অসহায় নারী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রামের দরিদ্র নারীদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হতো। একেকজনকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। এর বিপরীতে ওই নারীরা প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখতেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে টাকা মুনাফাসহ ওই নারীদের ফেরত দেওয়ার কথা। প্রকল্পটি আওতায় দুই বছর করে একেক দলে বিভক্ত করে নারীদের সহায়তা দেওয়া হতো। প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুর জেলায় ১১ হাজার ৫১৯ জন নারীকে এ সহায়তা দেওয়া হতো। যার মধ্যে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ১৫২ জন দরিদ্র নারী খাদ্যসহায়তা পেতেন। প্রকল্পটি গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেছে।

খাদ্যসহায়তা গ্রহণ করার আগে একটি পাস বইয়ের মাধ্যমে ওই টাকা জমা দেওয়া হতো ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টের কাছে। রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা শহীদুল ইসলাম ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোক্তা। তিনি ওই নারীদের টাকা গ্রহণ করার পর ৬ মাস পর্যন্ত তা ব্যাংকের হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। এরপর আর কোনো টাকা তিনি জমা দেননি। ওই নারীদের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়ে পাস বইয়ে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি ওই টাকা ব্যাংকে জমা করেননি। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে শহীদুল ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ করে দিয়ে সৌদি আরবে চলে যান।

ডিসেম্বরে ওই সহায়তার মেয়াদ শেষ হলে নারীরা সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে ইউনিয়ন পরিষদে যান। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁদের ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। নারীরা ব্যাংকে গিয়ে দেখেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে মাত্র ৬ মাসের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮ মাসের টাকা শহীদুল জমা না দিয়ে পালিয়ে সৌদি আরবে গেছেন।

জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুস সোবাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাস বইতে টাকা জমার স্বাক্ষর নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা খাদ্যসহায়তার চাল সরবরাহ করেছি। ওই টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে কেউ আত্মসাৎ করেছেন, তা আমরা বুঝতে পারিনি। এখন আমরা কী করতে পারি?’

গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকের ভেদরগঞ্জ কার্যালয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য আসেন মিতু ও ফাতেমা নামের দুই নারী। তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের হিসাব নম্বরে ১ হাজার ৩২০ টাকা জমা রয়েছে। বাকি টাকা জমা দেওয়া হয়নি। অথচ তাঁরা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে জমা দিয়েছেন।

মিতু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বামী দিনমজুরি করে যা আয় করে, তা দিয়ে সংসার চালাই। গ্রামে কাজ না পেয়ে কয়েক মাস ধরে ঢাকায় একটি কারখানায় কাজ নিই। দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে সেখানেই থাকি। দুই বছরের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত নিতে এসে দেখি, ব্যাংকে ১৮ মাসের টাকা জমা হয়নি। কেউ টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।’

সঞ্চয়ের টাকা কবে ফেরত পাবেন, তা জানতে দক্ষিণ রামভদ্রপুর এলাকা থেকে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন রিজিয়া, কল্পনা বেগম ও পেয়ারা বেগম। কে তাঁদের টাকা আদায় করে দেবেন, কবে তাঁরা টাকা পাবেন, তা কেউ বলেননি।

রিজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাসে ৩০ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছি। এর বিপরীতে ২২০ টাকা সঞ্চয় জমা রেখেছি। তখন বলা হয়েছিল, টাকা ব্যাংকে থাকবে, মুনাফাসহ ফেরত পাব। এখন মুনাফা তো দূরের কথা, আমাদের আসল টাকাই পাচ্ছি না। ৬ মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরছি, কেউ বলছে না আমাদের টাকা কীভাবে পাব।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসহায় নারী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রামের দরিদ্র নারীদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হতো, তা আপাতত বন্ধ রয়েছে। ওই নারীরা খাদ্যসহায়তা গ্রহণ করার সময় কিছু টাকা সঞ্চয় রাখতেন, তা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। রামভদ্রপুর ইউনিয়নে ১৫২ জন উপকারভোগী নারীর সঞ্চয়ের বেশ কিছু টাকা আত্মসাতের খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ওই নারীরা যাতে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পান, সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সৌদি আরবে