নাটোর সদর উপজেলায় মদন হাট গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাল, ডাল দিয়ে রান্না করা এ শিরনি খেতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের মদন হাট গ্রামে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত উৎসবে অংশ নেন শতাধিক পরিবার। অনুষ্ঠানকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে গ্রামে গিয়েছেন জামাই-মেয়ে-নাতি-নাতনীসহ স্বজনরা। 

গাঁওয়ালী শিরনিকে কেন্দ্র করে মদন হাট গ্রামে করা হয়েছে ভোজের আয়োজন। শত বছর ধরে চলে আসছে শীতকালে ঝাল শিরনি দিয়ে গ্রামবাসীর এ উৎসব। কথিত আছে এক থেকে দেড়শ বছর আগে এই গ্রামে ডায়রিয়া-কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; পরে এক ফকির এসে শিরনির আয়োজন করার পরামর্শ দেন। সেই সময় শিরনি উৎসব পালন করা হলে গ্রামবাসী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই গ্রামের লোকজন প্রতি বছর এ উৎসব পালন করে আসছেন।

স্থানীয়রা জানায়, গাঁওয়ালী শিরনি অনুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে জামাই-মেয়ে-নাতি-নাতনিসহ স্বজনরা গ্রামে আসেন। ভোজনের আয়োজন করা হয়। ভোর থেকে দিনভর চলে এই আয়োজন। পরিবারের সদস্য ও আগত অতিথিদের সংখ্যা ভেদে ৮ থেকে ১০টি পর্যন্ত ভোজের ভাগ দেন পরিবার প্রধান। কেউ চাল কেউবা টাকা দিয়ে অংশ নিয়ে থাকেন।

মদন হাট এলাকার বাসিন্দা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ-সহকারী মো.

আব্দুল লতিফ জানান, এক সময় বছরে দুইবার এই উৎসব পালন করা হতো। শীতকালে ঝাল এবং আষাঢ় মাসে মিষ্টি শিরনি হতো। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। উৎসবে আসা আত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করা হয়। 

মদন হাট এলাকার বাসিন্দা নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ সিএ মো. নুরুল ইসলাম ছোটন জানান, অনেক বছর আগে এই গ্রামে ডায়রিয়া-কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অনেক মানুষ মারা যায়। আতাব্দি ফকির নামে এক আলেমের পরামর্শে শিরনি উৎসব করা হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন আক্রান্তরা। কিছুদিন পর গবাদি পশুও আক্রান্ত হলে একইভাবে শিরনি উৎসব করা হয়। এমনটি কথা শুনেছি আমাদের মুরুব্বীদের কাছ থেকে।

মদন হাট এলাকার বাসিন্দা মো. উসমান আলী বলেন, “বাপ দাদার আমল থেকেই এই শিরনি হয়। বালা, মছিবত, বিপদ আপদ, কলেরা থেকে বাঁচার জন্য এই শিরনি করতেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা।”

এর আগে (৬ জানুয়ারি) নাটোর সদর উপজেলার ভাতুরিয়া গ্রামে হাজারো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনির উৎসব পালন করা হয়।

মদন হাট এলাকার প্রবীণ আমজাদ মীর, মীর ইসলাম, মীর ইদ্রিস জানান, পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য হিসেবে তারা এ উৎসব পালন করে আসছেন। শত বছরের বেশি সময় ধরে এ উৎসব হয়ে আসছে।

উৎসবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম, নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিকুর রহমান তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনসহ প্রমুখ।

ঢাকা/আরিফুল/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এ উৎসব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের মঞ্চে ‘ইংগিত’

মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবে ৬৩ জেলা হতে নির্বাচিত ১৬ নাটক নিয়ে ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালায় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে উৎসবের শেষ দিনে (শুক্রবার) মঞ্চায়ন করা হয় নাটক ‘ইংগিত’।

‘ইংগিত’র নাট্য ভাবনা, পরিকল্পনা, আলো ও নির্দেশনায় ছিলেন সুবীর মহাজন। সহকারী নির্দেশনায় আছাদ বিন রহমান ও পরিবেশনায় ছিল বান্দরবান পার্বত্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি। বান্দরবানের বসবাসরত বিভিন্ন ভাষার জনগোষ্ঠীর মানুষ এত অংশ নেন।

নাটকের গল্পে দেখা যায়, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তরুণদের বড় একটি অংশ হতাশায় নিমজ্জিত। অথচ তারুণ্যই বারবার পথ খুঁজে দিয়েছে। বহুভাষার মানুষের জেলা বান্দরবানের এক তরুণ বর্তমানের নানা পারিপার্শ্বিকতায় ক্লান্ত হয়ে যখন ঘুমের রাজ্যে, ঠিক তখন তার চোখ জুড়ে ফিরে আসে শৈশব-কৈশোর। ক্লান্ত শরীর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাস্তবে। স্বপ্নের ঘোরে সে ঘুরে বেড়ায় প্রকৃতির রাজ্য বান্দরবানে, যেখানে রয়েছে জীবন ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় বিশাল ভাণ্ডার। ঘুম তাকে ফিরিয়ে দেয় সোনালী সময়। যখন বর্তমানে ফিরে আসে নানা জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিস্টেম নামে এক জগদ্দল পাথর সরাতে চায় সে। পাহাড় আর সমতলকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতার এক সুতায় মেলবন্ধন ঘটাতে যে বদ্ধ পরিকর।

১৫ দিনব্যাপী কর্মশালার মধ্যে দিয়ে নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্কার: সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • টিএসসিতে সংগীত উৎসব
  • রমজানে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল
  • মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের মঞ্চে ‘ইংগিত’