প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খোরশোদের জন্ম ১৯৬০ সালে কুমিল্লায়। সম্পাদনা, অনুবাদ ও মৌলিক রচনা মিলিয়ে ২০টির অধিক বইয়ের রচয়িতা তিনি। নোবেল বিজয়ী কবি ভিস্লাভা শিম্বর্স্কার ‘ত্রিশটি কবিতার অনুবাদ’, মূল স্প্যানিশ থেকে অনূদিত বোর্হেস ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আলাপচারিতা ‘ভাষা, নারী, সাম্প্রদায়িকতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’, ছোটগল্প সংকলন ‘যাদুবাস্তবতার গাথা’, নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গোর নাট্যানুবাদ ‘গির্জাবিয়ে’, ভার্জিনিয়া উল্‌ফের A Room of One’s Own-এর অনুবাদ ‘নিজের একটি কামরা’ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে আলম খোরশেদ লেখালেখির পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে তার নিজের গড়া সংস্কৃতি কেন্দ্র বিস্তার পরিচালনা করেন। অনুবাদ সাহিত্যে অবদান রাখায় ‘বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন’ প্রবর্তিত ‘অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ অর্জন করেছেন আলম খোরশেদ। ২০২৫ বইমেলায় তার অনুদিত একাধিক গ্রন্থ পুনর্মুদন হচ্ছে এবং একাধিক নতুন বই প্রকাশ হচ্ছে। প্রকাশিতব্য বই নিয়ে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনুবাদসাহিত্য ও সাহিত্যিকের বাস্তব অবস্থা কেমন; এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: ২০২৫ বইমেলায় আপনার অনুবাদসমগ্র প্রথম খন্ড, বোর্হেস, বোর্হেস, নৈঃশব্দ্যের নামগান: লাতিন আমেরিকার কবিতা  এবং অ্যারাইজ আউট অভ দ্য লক: ফিফটি বাংলাদেশী উইমেন পোয়েটস ইন ইংলিশ (দ্বিভাষিক সংস্করণ)আসছে। এতগুলো বইয়ের কাজ একযোগে কীভাবে এগিয়ে নিয়েছেন?
আলম খোরশেদ:
এগুলোর মধ্যে দুয়েকটির পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে। আর বাকিগুলোর কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিলাম বলে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রকাশকের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করতে হয় বৈকি। 

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশের অনুবাদকদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠন বা খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের যোগাযোগ স্থাপনের বাস্তব চিত্র কী? আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
আলম খোরশেদ:
বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সত্যি বলতে কি আমরা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের হাতে গোনা কয়েকজন অনুবাদকের সঙ্গে হয়তো দুয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার সম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা কিংবা কর্মকাণ্ডের কথা আমার জানা নেই। আমি নিজেও যে এ-বিষয়ে খুব একটা পারঙ্গম, সেটা বলতে পারি না। 

আরো পড়ুন:

‘আত্মার আওয়াজ’ সুফি ঘরানার কবিতা দিয়ে সাজানো: জব্বার আল নাঈম

‘উপন্যাসটির বিষয়বস্তু বিহারিদের ক্যাম্পজীবনের মধ্যে আবদ্ধ থাকেনি’

রাইজিংবিডি: কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে আক্ষরিক নাকি ভাবানুবাদকে বেশি প্রাধান্য দেন? কেন?
আলম খোরশেদ:
কবিতার অনুবাদ খুব জটিল ও দুরূহ কাজ। এটা খোদ কবিরা, নিদেনপক্ষে কবিতার নিবিড় পাঠকেরা, করলেই সবচেয়ে ভালো হয়। সাহিত্যে আমার শুরুটা যেহেতু কবিতা দিয়েই হয়েছিল, এবং কবিতার ভাষা, ব্যাকরণ, ছন্দ, শৈলী ইত্যাদির ওপর আমার একধরনের সহজাত দখল থাকাতে আমি এই কাজটাতে খুব সচ্ছন্দ বোধ করি। আক্ষরিক কিংবা ভাবানুবাদ নয়, কবিতার অনুবাদের সময় আমি মূল কবির মন ও তার কবিতার আত্মাটির প্রতিই সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকতে চেষ্টা করি।

রাইজিংবিডি: আমাদের নিজেদের সাহিত্যকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে প্রকাশনা সংস্থা, বাংলা একাডেমি, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভূমিকা নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট? এই সব প্রতিষ্ঠান  অনুবাদ সাহিত্য সম্প্রসারণে কেমন উদ্যোগ নিতে পারে?
আলম খোরশেদ:
না, একেবারেই নয়। কিন্তু এটি খুব দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বিদেশি প্রকাশক, লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে আমাদের একটা কার্যকর ও ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন সাহিত্য উৎসব, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন; বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি-বিদেশি সাহিত্যিকদের জন্য আবাসন তথা রেসিডেন্সি কর্মসূচি চালু করা; বিদেশি বইমেলা ও এজাতীয় অনুষ্ঠানসমূহে নিয়মিত অংশগ্রহণ; বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে এই কাজের জন্য বিশেষ সেল গঠন করে সাংস্কৃতিক কূটনীতিকে আরও শক্তিশালী করা; নিয়মিত নানাবিধ প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। 

রাইজিংবিডি: ‘বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন’ প্রবর্তিত ‘অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পেয়েছেন। পুরস্কার প্রাপ্তিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন।

আলম খোরশেদ: পুরস্কার প্রাপ্তি একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে তেমনি দায়িত্বেরও বটে। এটি নিজের কাজের স্বীকৃতি শুধু নয়, তার একপ্রকার আনুষ্ঠানিক সনদও বটে। এটা তাই প্রকারান্তরে লেখককে আরেকটু বেশি দায়িত্বশীল এবং তার নিজের কাজের প্রতি আরও যত্নশীল করে তোলে।

রাইজিংবিডি: অ্যারাইজ আউট অভ দ্য লক: ফিফটি বাংলাদেশী উইমেন পোয়েটস ইন ইংলিশ- সম্পর্কে জানতে চাই।
আলম খোরশেদ:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর আমার অনুবাদক বন্ধু, কলকাতার মানুষ, ভেঙ্কটেশ্বর রামস্বামী আমাকে এই কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ করেন। মূলত তার এবং হায়দ্রাবাদনিবাসী বাঙালি অনুবাদিকা নবীনা দাশের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতার ফসল এই ‘অ্যারাইজ আউট অভ দ্য লক’ গ্রন্থটি। এটি বাংলাদেশের সাহিত্যকে, বিশেষ করে আমাদের নারীদের সৃষ্টিশীলতাকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে বলে আমার বিশ্বাস। 

রাইজিংবিডি: কেমন বইমেলা চান?
আলম খোরশেদ:
আমাদের একুশে বইমেলাটি এখন একটি বারোয়ারি, বাণিজ্যিক মেলাতে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে একটি প্রকৃত লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা ও কর্মপাটাতন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের। এর জন্য একটি সুচিন্তিত ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি পেশাদার, দায়িত্বশীল ও অগ্রসর চিন্তার প্রকাশকদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান; গ্রন্থের মানোন্নয়ন; সমাজে লেখকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা; মেলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহের মানবৃদ্ধি ও তাতে শ্রোতা, দর্শকদের পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ; এবং সর্বোপরি মেলার সামগ্রিক বিন্যাস, পরিসর, পরিকল্পনা, পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। এর জন্য মেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির পরিবর্তে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও প্রকাশক সমিতির ওপর ন্যস্ত করাটাই সমীচীন হবে মনে করি।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

আসক্তিহীন ব্যথানাশক নতুন ওষুধের অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র

আসক্তিমূলক নয় ( নন-ওপিওয়েড) এমন একটি ব্যথানাশক ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। প্রাপ্তবয়স্কদের স্বল্পমেয়াদি ব্যথার চিকিৎসায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

ব্র্যান্ড নাম জারনাভ্যাক্স হিসেবে পরিচিত সুজট্রিজিন নামে এই ওষুধটি মানুষের শরীরের ব্যথার সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছানোর আগেই কাজ করতে শুরু করে। খবর বিবিসির

প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, এই ওষুধটিতে আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদান ওপিওয়েড নেই। এটি মাঝারি থেকে গুরুতর ব্যথার উপশম করতে পারে।

বছরের পর বছর ধরে ব্যথানাশক ওষুধের আসক্তিজনিত সমস্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।

মানুষের শরীরে নতুন ব্যথানাশক ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই পরীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এফডিএ বলেছে, অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে জারনাভ্যাক্স কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এই ওষুধের অনুমোদন দেওয়াকে জনস্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর আসক্তি উদ্রেগকারী ওপিওয়েড ব্যবহারের কারণে দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। ২০২২ সালে মাত্রাতিরিক্ত ওপিওয়েড ব্যবহারের কারণে ৮২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।


সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ সীমান্ত করারোপ করবেন। চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপেরও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। চীনের ফেন্টানিল রপ্তানিকে একটি কারণ উল্লেখ করে এই হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ওপিওয়েড শরীরের ব্যথার সংকেতগুলোকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে দেয় না। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন মস্তিষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনে ভরে যায়। এটি আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। আর এসবের মধ্য দিয়ে ওপিওয়েড অনেক বেশি আসক্তি তৈরি করে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা সারাতে প্রায় ৮ কোটি মানুষকে ওষুধ খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ভারটেক্সের প্রধান নির্বাহী রেশমা কেওয়ালরামানি এই অনুমোদনকে ঐতিহাসিক মাইলফলক বলেছেন।

কোম্পানিটি বলেছে, জারনাভ্যাক্সের প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম পড়বে সাড়ে ১৫ ডলার করে। তবে ওষুধটি শিশুদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা এখনো জানা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ