উন্নত চিকিৎসার সুযোগ হাতছাড়া দীপঙ্করের!
Published: 30th, January 2025 GMT
মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র দীপঙ্কর বালা (২৬)। পরদিন থেকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে কয়েকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।
সে অনুযায়ী তুরস্কে যাওয়ার সব ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে তিনি দেশটিতে যেতে পারছেন না। গত সোমবার ফ্লাইট থাকলেও তাঁকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। বুধবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটের ৬১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীপঙ্করের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তিন মাস ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে আশ্বাসের পর ২৭ জানুয়ারি তুরস্কে যাওয়ার জন্য তাঁকে বিমানের টিকিট দেওয়া হয়। তা ছিল ইকোনমি ক্লাসের টিকিট। তাঁকে বসানো অবস্থায় দীর্ঘ ফ্লাইটে নেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। আবার কবে টিকিটের ব্যবস্থা হবে, কবে বিদেশে যেতে পারবেন, সে আশায় হাসপাতালে দিন কাটছে এই কলেজছাত্রের। এদিকে যত দিন যাচ্ছে, তাঁর পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। গোড়ালির দিকে ছোট ছিদ্র দিয়ে অনবরত পুঁজ পড়ছে। পা নাড়াতে পারছেন না সহজে।
মাদারীপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর। রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর পাখুল্লা গ্রামে পরেশ চন্দ্র বালা ও বিনা রানী বালা দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
দীপঙ্কর বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই মাদারীপুর সদরে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের শটগানের গুলি আমার বাঁ পায়ে লাগে। এতে পায়ের একপাশের মাংস উড়ে যায়। হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত তিন জায়গায় হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এ পর্যন্ত আমার পায়ে অন্তত ছয়টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। পায়ে রড লাগানো রয়েছে। এখানকার চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিয়েছেন। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে যেতে হবে।’
তিন মাস ধরে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ঘুরাতে থাকেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন। অবশেষে তুরস্কে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়। টিকিট কাটা হয় ইকোনমি ক্লাসের। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তুর্কি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা দীপঙ্করের অবস্থা দেখে জানান, ইকোনমি ক্লাসের সিটে তাঁকে বসিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ পা নিচু করলেই অনবরত রক্ত পড়ছিল। এ কারণে তারা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি। শুইয়ে ছাড়া নেওয়া সম্ভব নয়। তাই বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
দীপঙ্কর বলেন, ‘বিদেশে পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন এসে আমাকে কয়েকবার দেখে যান। তখন আমার পরিবারের লোকজন তাদের বলে, আমাকে বসিয়ে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়, শুইয়ে নিতে হবে। কিন্তু ইকোনমি ক্লাসের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিটের সামনে টুল বসানো হবে। ২৭ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর অবস্থা দেখে তুর্কি এয়ারলাইন্সের লোকজন ফিরিয়ে দিল।’
এ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে কয়েক লাখ টাকা খরচ করেছে দীপঙ্করের পরিবার। তাঁর বাবা আগে কৃষিকাজ করতেন। কয়েক বছর আগে স্ট্রোক করে আর কাজ করতে পারেন না। সংসার চলে বড় ভাই দীপক বালা ও দীপঙ্করের টিউশনির টাকায়। কিন্তু ১৯ জুলাইয়ের পর থেকে দীপঙ্কর হাসপাতালে। এ অবস্থায় তাদের পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দীপঙ্করের ছোট ভাই অনার্স পড়ুয়া দিগন্ত বালা বলেন, ‘নভেম্বর মাসে জুলাই ফাউন্ডেশনে অনুদানের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। যাচাই-বাছাইয়ের পর জানুয়ারির শুরু দিকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।’
দিগন্তের অভিযোগ, বিজনেস ক্লাসের টিকিট না দিয়ে ইকোনমি ক্লাসের টিকিট দেওয়া হয়েছে। এ রকম রোগীকে বসিয়ে বিদেশ নেওয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়ের
লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি। বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসার পর যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ল কজন র জন য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
উন্নত চিকিৎসার সুযোগ হাতছাড়া দীপঙ্করের!
মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র দীপঙ্কর বালা (২৬)। পরদিন থেকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে কয়েকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।
সে অনুযায়ী তুরস্কে যাওয়ার সব ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে তিনি দেশটিতে যেতে পারছেন না। গত সোমবার ফ্লাইট থাকলেও তাঁকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। বুধবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটের ৬১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীপঙ্করের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তিন মাস ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে আশ্বাসের পর ২৭ জানুয়ারি তুরস্কে যাওয়ার জন্য তাঁকে বিমানের টিকিট দেওয়া হয়। তা ছিল ইকোনমি ক্লাসের টিকিট। তাঁকে বসানো অবস্থায় দীর্ঘ ফ্লাইটে নেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। আবার কবে টিকিটের ব্যবস্থা হবে, কবে বিদেশে যেতে পারবেন, সে আশায় হাসপাতালে দিন কাটছে এই কলেজছাত্রের। এদিকে যত দিন যাচ্ছে, তাঁর পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। গোড়ালির দিকে ছোট ছিদ্র দিয়ে অনবরত পুঁজ পড়ছে। পা নাড়াতে পারছেন না সহজে।
মাদারীপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর। রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর পাখুল্লা গ্রামে পরেশ চন্দ্র বালা ও বিনা রানী বালা দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
দীপঙ্কর বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই মাদারীপুর সদরে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের শটগানের গুলি আমার বাঁ পায়ে লাগে। এতে পায়ের একপাশের মাংস উড়ে যায়। হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত তিন জায়গায় হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এ পর্যন্ত আমার পায়ে অন্তত ছয়টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। পায়ে রড লাগানো রয়েছে। এখানকার চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিয়েছেন। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে যেতে হবে।’
তিন মাস ধরে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ঘুরাতে থাকেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন। অবশেষে তুরস্কে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়। টিকিট কাটা হয় ইকোনমি ক্লাসের। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তুর্কি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা দীপঙ্করের অবস্থা দেখে জানান, ইকোনমি ক্লাসের সিটে তাঁকে বসিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ পা নিচু করলেই অনবরত রক্ত পড়ছিল। এ কারণে তারা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি। শুইয়ে ছাড়া নেওয়া সম্ভব নয়। তাই বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
দীপঙ্কর বলেন, ‘বিদেশে পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন এসে আমাকে কয়েকবার দেখে যান। তখন আমার পরিবারের লোকজন তাদের বলে, আমাকে বসিয়ে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়, শুইয়ে নিতে হবে। কিন্তু ইকোনমি ক্লাসের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিটের সামনে টুল বসানো হবে। ২৭ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর অবস্থা দেখে তুর্কি এয়ারলাইন্সের লোকজন ফিরিয়ে দিল।’
এ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে কয়েক লাখ টাকা খরচ করেছে দীপঙ্করের পরিবার। তাঁর বাবা আগে কৃষিকাজ করতেন। কয়েক বছর আগে স্ট্রোক করে আর কাজ করতে পারেন না। সংসার চলে বড় ভাই দীপক বালা ও দীপঙ্করের টিউশনির টাকায়। কিন্তু ১৯ জুলাইয়ের পর থেকে দীপঙ্কর হাসপাতালে। এ অবস্থায় তাদের পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দীপঙ্করের ছোট ভাই অনার্স পড়ুয়া দিগন্ত বালা বলেন, ‘নভেম্বর মাসে জুলাই ফাউন্ডেশনে অনুদানের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। যাচাই-বাছাইয়ের পর জানুয়ারির শুরু দিকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।’
দিগন্তের অভিযোগ, বিজনেস ক্লাসের টিকিট না দিয়ে ইকোনমি ক্লাসের টিকিট দেওয়া হয়েছে। এ রকম রোগীকে বসিয়ে বিদেশ নেওয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়ের
লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি। বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসার পর যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান সমকালকে বলেন, দীপঙ্করকে স্ট্রেচারে করেই তুরস্কে নেওয়া হবে। আগামী শনিবারের টিকিটের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।