শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়ার গতি হতাশাজনক
Published: 30th, January 2025 GMT
দেশে শিল্প খাতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। তবে শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়ার গতিতে বড় ধরনের পতন হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ে ১০০ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ার প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে কমেছে। এ ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শিল্প খাতের অংশ ক্রমশ কমে আসছে। বাড়ছে সেবা খাতের অংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ১০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকলল্পনা সাজাতে সহায়তা করতে বিবিএস প্রতি ১০ বছর পর অর্থনৈতিক শুমারি করে থাকে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
বেক্সিমকোর উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য ছিল রাতারাতি বড় হওয়া। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেগুলো অচল হয়ে আছে, তার গরিব শ্রমিকরাই আন্দোলন করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মূলধন কিছুই নেই। আছে শুধু ঋণ আর ঋণ। বেক্সিমকোর শ্রমিকরা তিন থেকে চার মাস মাঠে আছে। সরকার তাদের অর্থায়ন করছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো পুঁজিই নেই।
তিনি বলেন, দেশে বৈষম্য কোন পর্যায়ে গেছে তার নিদারুণ চিত্র হলো, এত উদ্যোক্তা, এমনকি শহরের চেয়েও গ্রামে উদ্যোক্তা বেশি। কিন্তু সামান্য যে অর্থায়ন প্রয়োজন, সেটিও তারা পায় না। অথচ শহরে ভুঁইফোঁড়, রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রতিষ্ঠান অগণিত। ব্যাংকের টাকা কীভাবে জলে গেছে, কেউ জানে না।
শিক্ষা খাত প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এমপিওভুক্ত গরিব শিক্ষকদের নিজেদের সঞ্চয় একটা ফান্ডে থাকে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের সঞ্চয়ের ছয় হাজার কোটি টাকা সম্পূর্ণ দেউলিয়া একটা ব্যাংকে রেখেছে। এ টাকা এখন তারা পাচ্ছে না।
অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পুঁজির অভাবকে ব্যবসা পরিচালনার প্রধান সমস্যা বলে জানিয়েছে। ৩৪ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ঋণ পেতে সমস্যায় পড়তে হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, তৃতীয় বড় সমস্যাটি হচ্ছে অবকাঠামোর ঘাটতি। ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এ সমস্যার কথা বলেছে। এ ছাড়াও দক্ষ শ্রমিক ও কাঁচামালের অভাব, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পণ্য বাজারজাতকরণের অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যার কথাও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১০ বছরে গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালে দেশে মোট অর্থনৈতিক ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। ২০১৩ সালে যা ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এ হিসাবে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৯টি বেড়েছে।
২০২৪ সালে উৎপাদন বা শিল্প খাতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬টি। মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যা ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২ হাজার ৫৮৩টি, যা মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০০৩ সালে শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৪টি। মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের যা ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
শিল্পের তুলনায় সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি হারে বাড়ছে। এ খাতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬টি। মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানই এখন ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর আগে ২০১৩ সালের শুমারিতে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৮২। এটি তখনকার মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৪। এর আগের জরিপে ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫০ জন।
অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৬১টি, আর শহরাঞ্চলে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার ২০৩টি। এর আগে ২০১৩ সালে গ্রামাঞ্চলে ছিল ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৯টি, শহরাঞ্চলে ২২ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৬টি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের সভাপতি ড. কেএস মুর্শিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক এসএম শাকিল আখতার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
পুঁজিবাজারের বিমা খাতে তালিকাভুক্ত মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। ফলে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারহোল্ডারা।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এই লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে রবিবার (২০ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তার ভিত্তিতে লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তথ্য মতে, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ১৮ জুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ প্রদানে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৮ মে।
সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৩১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.২৯ টাকা।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪.২৬ টাকা।
এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্যসীমা থাকবে না।
ঢাকা/এনটি/ইভা