প্রবাসীদের নথি সত্যায়নে ভোগান্তির অবসান হচ্ছে
Published: 30th, January 2025 GMT
বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বা বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন নথি সত্যায়ন করিয়ে নিতে হয় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সত্যায়ন করতে একাধিক মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে যেতে হয়; পোহাতে হয় ভোগান্তি। সেই ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এপোস্টিল কনভেনশনে যোগ দিয়েছে। এতে নথি সত্যায়ন বাবদ বছরে বাংলাদেশিদের কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনা সেবার (এপোস্টিল সেবা) উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিদেশগামী অথবা বিদেশে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট সত্যায়নের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে প্রচলিত ম্যানুয়াল প্রথার বদলে সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করা হয়েছে। এপোস্টিল সেবা হলো একটি সার্টিফিকেট, যা এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১ এর নিয়ম মেনে কোনো নাগরিকদের নথি সত্যায়নের সনদ হিসেবে দেওয়া হয়। এটি সেই নথির উৎপত্তির সঠিকতা প্রত্যয়ন করে। এপোস্টিল সার্টিফিকেটের ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে এপোস্টিলকৃত নথি উৎপত্তির সঠিকতা যাচাই করা যায়। এ কনভেনশনের পক্ষভুক্ত দেশের বর্তমান সংখ্যা ১২৭টি। তবে বর্তমানে ১১৭টি দেশে বাংলাদেশ থেকে সত্যায়নকৃত দলিল গ্রহণ করবে। ১০টি দেশ এ মুহূর্তে গ্রহণ করবে না।
বিদেশগামী ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে একাডেমিক সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট বর্তমানে সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট বা ডকুমেন্ট প্রদানকারীসহ একাধিক কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন শেষে ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস, বিদেশ গমনের পর সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সত্যায়ন করতে হয়। তা ছাড়া যেসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সমবর্তীভাবে নিয়োজিত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দূতাবাস থেকে ডকুমেন্ট সত্যায়নের জন্য বাংলাদেশি সেবাপ্রার্থীদের সেসব দেশে যেতে হয়। ডকুমেন্টেশনের এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নাগরিকদের অনেক সময় শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়।
নাগরিকদের এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১তে পক্ষভুক্ত হয়েছে। এপোস্টিল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাবলিক ডকুমেন্ট সত্যায়নের সনদ হিসেবে এপোস্টিল সার্টিফিকেট দেবে। এই এপোস্টিল সার্টিফিকেট ব্যবহার করলে সেবাপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ ব্যয় করে বিদেশি দূতাবাস এবং বিদেশে গমনের পর ওই দেশে অবস্থিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।
ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলো প্রতি পাতা ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সার্ভিস ফি নিয়ে থাকে। এপোস্টিল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হলে বিদেশি দূতাবাসে সার্ভিস ফি দিয়ে ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে হবে না। এতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ডকুমেন্টের হার্ড কপিতে ম্যানুয়ালি সত্যায়নের সময় সেবাপ্রার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন; দালালের খপ্পরে পড়েন। এপোস্টিল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হলে সব রকম দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী সম্পূর্ণরূপে দূর হবে; জাল বা নকল সিল ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে সত্যায়নের প্রবণতাও থাকবে না।
বিদেশ গমনেচ্ছু ছাত্রছাত্রী ও পেশাজীবীরা তাদের নথিপত্র সত্যায়নে মাইগভডটজিওভি (www.mygov.bd) পোর্টালে গিয়ে এপোস্টিল সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন। ডকুমেন্ট ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ যাচাইপূর্বক সত্যায়ন শেষ করে তা নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। ওই মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টটি প্রতিসত্যায়ন করে অনলাইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এপোস্টিল কনভেনশনের নিয়ম মেনে ডকুমেন্টে প্রতিসত্যায়ন করবে এবং সত্যায়নের সনদ হিসেবে অনলাইনে ই-এপোস্টিল সার্টিফিকেট দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যায়ন কার্যক্রম শেষ করলে সেবাপ্রার্থীর রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বরে নোটিফিকেশন যাবে এবং সেবাপ্রার্থীরা তাদের মাইগভ পোর্টালের ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ডের ‘ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করে ই-এপোস্টিল সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নাগরিকদের তথ্যের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে আনেন। তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হয়েছে। এটা ঘটনাক্রমে হয় নাই। এটা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলেই পেরেছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, সবাই বলাবলি করছে, ওমুক ব্যাংকটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, একটা ভালো ব্যাংক থেকে সমানে খারাপ ঋণ দেওয়া হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি সমর্থন না থাকত তাহলে এটা সম্ভব হতো না।
সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার মতো অন্যান্য পদ্ধতিতেও যেন দুর্নীতির সুযোগ না থাকে, সে বিষয়ে জোর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটা একটা ছোট পদক্ষেপ। এ ধরনের ছোট পদক্ষেপ আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। দুর্নীতির সুযোগ যেখানে থাকে সেখানে দুর্নীতি দমন একেবারে বন্ধ করা খুব কঠিন। কাজেই সুযোগ যাতে না থাকে, সেটা আনতে হবে।
ইতালিতে ৬০ হাজার বাংলাদেশির পাসপোর্ট আটকে থাকার তথ্য তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৬০ হাজার পাসপোর্ট আটকা আছে ইতালিতে। কেন আটকা আছে? কারণ, কাগজপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য। প্রতিটা কেসে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। এক দালাল ওখানকার একটা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে এসেছে। আসলে তার ওখানে কাজ করার মতো অবস্থা নেই।
বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ নিয়ে কথা বলেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বাংলাদেশি সংসদ সদস্যদের বিদেশে গ্রেপ্তারের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয় না; একদিনে শেষও হয় না। যারা ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা যান, তাদের মধ্যে যখন আমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন ভালো ভালো কথা বলে ইমেজ রক্ষা করতে পারবেন না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট র জন য অবস থ ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।