আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায় পুলিশ সদরদপ্তরের সামনে এ অবরোধের ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী। বিকেল ৫টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।

গতকাল সকালে সদরদপ্তরের সামনের ফুটপাতে ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান’ কর্মসূচি পালন শুরু করেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা। দাবি মানার কোনো আশ্বাস না পেয়ে তারা দুপুর ২টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা স্লোগান দেন– নতুন স্বাধীন বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; আমার পোশাক ফিরিয়ে দে, নইলে বিষ কিনে দে; দাবি মোদের একটাই, নির্বাহী আদেশ চাই।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ছয় মাস ধরে চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) এম সাখাওয়াত হোসেন চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ সদরদপ্তরকে আদেশও দিয়েছিলেন। তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

সাবেক পুলিশ সদস্যরা সড়ক অবরোধ করলে অর্ধশতাধিক পোশাকধারী পুলিশ সদস্য সেখানে অবস্থান নেন। অবরোধের কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবাজার এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। পরে পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট) ড. শোয়েব রিয়াজ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনা করে। শেষে তিনি আন্দোলনকারীদের আইনি প্রক্রিয়ায় এগোনোর পরামর্শ দেন। 

চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল জাহিদ হাসান বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ২০২০ সালে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অথচ আমার বাবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এখনও ভাতা পাচ্ছেন। এ বিষয়ে সব প্রমাণ দেওয়ার পরও আমাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সমকালকে বলেন, তাদের দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশ সদরদপ্তর একটি কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটি কাজ করছে। আজ তাদের একটি বৈঠকও রয়েছে। এর মধ্যে এভাবে আন্দোলন কতটা যুক্তিযুক্ত তারাই বলতে পারবেন। কার কী কারণে চাকরি গিয়েছিল, তা যাচাই-বাছাই না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ কর চ য ত প ল শ প ল শ সদস য অবর ধ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

‘এই টাকা দিলে মান-সম্মান থাকে?’ বলা সেই ওসিকে বদলি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওসি এনায়েত হোসেনকে ফরিদপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আদেশে।

বদলি আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওসির টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, জিডি বা অভিযোগের কাগজের সঙ্গে স্টেপলার করে রাখা কিছু টাকা হাতে নিয়ে ওসি এনায়েত হোসেন এক ব্যক্তিকে বলছেন, ‘এই টাকা দিলে মানসম্মান থাকে?’ এ সময় ওসির সামনে আরও দুই-তিনজনকে বসে থাকতে দেখা যায়।

জানা গেছে, উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে ওসির কথোপকথনের ভিডিওটি কেউ ধারণ করেন। কোনো ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৯ এপ্রিল দিনব্যাপী কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপরই তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হলো।

এর আগে গত বুধবার ওসি এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে ডাকযোগে অভিযোগ দেন যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি সম্পাদক সালাউদ্দিন মোল্লা ও ভূক্তভোগী এক নারী। অভিযোগপত্রে সালাউদ্দিন বলেন, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে গত ১১ এপ্রিল শ্যামলদী গ্রামে অনুমোদনহীন বাউল গানের আসর টাকার বিনিময়ে চলার অনুমতি দেন।

এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে সরে যান ওসি এনায়েত হোসেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা মুখে পড়েন ওসি। এ ছাড়া অনিয়ম, দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় জিসাসে’র সহসাংগঠনিক রিয়াজুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী আনোয়ারা আক্তার বেবী।

অভিযোগে আনোয়ারা উল্লেখ করেন, তার স্বামী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তারের অনুসারী। দুপ্তারা বাজারে তার ছবি সংবলিত ব্যানার টানাতে গেলে প্রতিপক্ষ বাধা দেয়। এর প্রতিবাদ করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা। রাতে তোরণটি ভেঙে অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালান। ফাঁকা গুলি ছুড়ে ঘণ্টাব্যাপী এলাকায় তাণ্ডব চালান হামলাকারীরা। 

এ ঘটনার পর আড়াইহাজার থানায় অভিযোগ দিতে গেলে না নিয়ে উল্টো টাকা দাবি করেন ওসি এনায়েত হোসেন। পরবর্তীতে থানার সহযোগিতা না পেয়ে এলাকা ছেড়ে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ করেন আনোয়ারা আক্তার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ