মডেল তিন্নি হত্যার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী মেলেনি
Published: 30th, January 2025 GMT
২৩ বছর আগে মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। আদালতকে এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক। এ হত্যা মামলায় আসামি সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক গোলাম ফারুক অভির খালাসের রায়ে এ তথ্য উল্লেখ রয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায়ে আসামি অভিকে খালাস দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহীনুর আক্তার। সম্প্রতি এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
রায়ে উল্লেখ রয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষী সানজিদুল হাসান ইমনের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষী শুনানিতে আদালতে বলেছেন, তিন্নি হত্যার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
আদালত বলেন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় আসামিকে শাস্তি দিতে হলে আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে হয়। কেবল পলাতক হওয়ার কারণে কোনো আসামিকে দোষী বিবেচনা করার সুযোগ নেই। সাক্ষীদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে, তিন্নির সঙ্গে আসামি গোলাম ফারুক অভির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভি ও তিন্নি একই বাসায় থাকতেন। প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে রায়ে তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিন্নি তাঁর ফুফুর বাসায় যান। এর আধা ঘণ্টা পর অভি সেই বাসায় আসেন। পরদিন সকাল পর্যন্ত ছিলেন, যা গৃহকর্মী শেফালী ও বীণার বক্তব্যে প্রমাণিত হয়।
আদালত রায়ে আরও বলেন, আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তিন্নিকে হত্যা করে ১ নম্বর বুড়িগঙ্গা বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু থেকে ফেলে দিয়ে আসেন। কিন্তু মামলার ঘটনার যে তারিখ দেখানো হয়েছে, সেই তারিখে অভির অবস্থান তিন্নির বাসায় ছিল, যা সাক্ষীদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালতের প্রধান পিপি ইকবাল হোসেন।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১-এর নিচে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাঁকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ও কন্যা’ গায়ক সোহাগ এখন লড়ছেন গানের মালিকানা নিয়ে
ক্যারিয়ারের দুই যুগ পার করেছেন সংগীতশিল্পী শরিফুজ্জামান সোহাগ। এ সময়ে একক, মিক্সডসহ এই গায়কের অ্যালবামের সংখ্যা ৫৮, গানের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০–এর বেশি। ঝুলিতে আছে ‘ও কন্যা’, ‘কাইন্দো না’, ‘কন্যা মন দিলা না’, ‘পরান বন্ধুয়া’ ও ‘লাল শাড়ি’র মতো সুপার হিট গান। ক্যারিয়ারে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছালেও সোহাগের আছে আক্ষেপ। এখন পর্যন্ত কোনো গানের মেধাস্বত্ব থেকে কানাকড়িও পাননি বলে অভিযোগ এই গায়কের। সোহাগের ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত ও অজানা কথা শুনেছেন নাজমুল হক।
শূন্য দশক—বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির স্বর্ণালি সময়। এ দশকের শুরুতে অনেক নতুন গায়কের উত্থান হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। মিক্সড অ্যালবামে জনপ্রিয় গায়কদের সঙ্গে সুযোগ পেতে থাকেন নতুন শিল্পীরা। ২০০২ সালে নতুন মুখ হিসেবে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু সোহাগের। সেবার জনপ্রিয় চারটি মিক্সড অ্যালবামে সুযোগ পান তিনি। প্রতিটি অ্যালবাম পায় জনপ্রিয়তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সফলতা। সোহাগ পৌঁছে যান শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায়।
২০০২ সালে ‘ফাটাফাটি প্রেম’ মিক্সড অ্যালবামে পান্থ কানাই ও বিপ্লবের সঙ্গে অভিষেক হয় সোহাগের। এরপর প্রকাশ পায় মিক্সড অ্যালবাম ‘পানি’, যেখানে বিপ্লব ও মাস্টার সোহেলের সঙ্গে গান করেন সোহাগ। তৃতীয় মিক্সড অ্যালবাম ‘নদী’তে সোহাগ গান করেন পথিক নবী ও মাস্টার সোহেলের সঙ্গে। প্রথম তিন অ্যালবামে বিপ্লব, পান্থ কানাই আর পথিক নবীদের আড়ালে থেকে গেলেও সোহাগ তাঁর সাফল্যের গল্পটা লেখেন চতুর্থ অ্যালবামে। সংগীতশিল্পী হাসানের সঙ্গে ‘ও কন্যা’ অ্যালবাম সোহাগের ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে দেয়। অ্যালবামটির ‘ও কন্যা কাইন্দো না’ এই গায়কের জীবনের প্রথম জনপ্রিয়তা পাওয়া গান। এ ছাড়া অ্যালবামটির ‘পালকি করে’, ‘তুমি আসো না কেন রে’, ‘রাত তুমি’ ও ‘একটু একটু প্রেম’ সোহাগকে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।
‘ও কন্যা’ অ্যালবামের সাফল্যে পরের বছর হাসানের সঙ্গেই সোহাগ বাজারে আনেন তাঁর পঞ্চম অ্যালবাম ‘ও কন্যা মন দিলা না’। অ্যালবামের ‘কন্যা মন দিলা না’, ‘ও বন্ধুরে’, ‘কাইন্দ না ময়না’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই গায়কের তথ্যমতে, ৬৪ লাখের বেশি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল অ্যালবামটির। স্মৃতি হাতড়ে সোহাগ বলেন, ‘হাসান ভাইয়ের সঙ্গে আমার চতুর্থ অ্যালবাম “ও কন্যা” ব্যাপক হিট হয়। রাস্তাঘাটে বের হলেই গানগুলো শুনতাম। তবে পঞ্চম অ্যালবাম “কন্যা মন দিলা না” আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ হিট। দোকান থেকে রাস্তাঘাট, গাড়ি, যেখানেই গেছি, অ্যালবাম দুটির গান শুনতে পেয়েছি।’
মিক্সড অ্যালবামের এ সাফল্যে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে সোহাগের। দেশব্যাপী কনসার্টের ডাক পেতে থাকেন এই গায়ক। তখন একটি ব্যান্ড গড়ার কথা চিন্তা করেন তিনি। ২০০৩ সালে ‘রক্ত আলতা পায়’ অ্যালবাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের পরিচিত করান ‘ভাটিয়াল’ ব্যান্ডের সঙ্গে। বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় এ অ্যালবামের ‘লাল শাড়ি পরিয়া’, ‘ও পরান বন্ধুয়া’, ‘বন্ধু আমার চিঠি দিয়ো’, ‘রক্ত আলতা পায়ে’, ‘বেদনা’সহ সব কটি গানই শ্রোতাদের মুখে মুখে জায়গা করে নিয়েছিল। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও অ্যালবামটির গানগুলোর আবেগ এখনো কমেনি। একই বছর সোহাগের একক ‘প্রেম জুয়াড়ি’ ও হাসানের সঙ্গে তৃতীয় মিক্সড অ্যালবাম ‘সোহাগী কন্যা’ও ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। পরের কয়েক বছরে একক, মিক্সডসহ সোহাগ প্রকাশ করেন ৫০টির বেশি অ্যালবাম।
ইউটিউব আসার পর সবার মতো কমতে থাকে সোহাগের অ্যালবামের সংখ্যা। তাঁর পুরোনো গানগুলো ইউটিউবে প্রকাশ করতে থাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি জোন। আর তা বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতারা লুফে নিতে থাকেন। তবে সোহাগ দিলেন অবাক করা তথ্য। জানান, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গানগুলো প্রকাশ করে এ প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল এ মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। সোহাগ বলেন, ‘২০০২–০৭ সাল পর্যন্ত কে টি সিরিজের সঙ্গে আমার লিখিত চুক্তি হয়। কিন্তু ইউটিউব এলে অনুমতি ছাড়া সব গান সিডি জোনের কাছে তারা ডিজিটাল চুক্তিতে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু কে টির সঙ্গে কিন্তু আমার ডিজিটাল চুক্তি ছিল না। জালিয়াতি করে আমার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। এক টাকাও আমি পাইনি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
সংগীতশিল্পী শরিফুজ্জামান সোহাগ