ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে আসা মহারশি নদী শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এই নদীর এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দুটি সেতু। একটি ঝিনাইগাতী বাজারে, অপরটি নলকুড়া ইউনিয়নের রাবারড্যাম এলাকায়।

সেতু দুটির মাঝখানে রয়েছে ১৫টি গ্রাম। কোনো সেতুই তাদের কোনো উপকারে আসছে না। ফলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয়ে থাকে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা।

দীর্ঘদিন একটি সেতুর দাবি করে এলেও আমলে নিচ্ছে না কেউ। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, নীতিমালা অনুযায়ী একটি সেতু থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরেকটি সেতু নির্মাণের অনুমতি নেই। ফলে এলজিইডি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠালেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

জানা গেছে, নলকুড়া ভারুয়া, জামতলা, কুসাইকুড়া, গজারিকুড়া ডাকাবর রামেরকুড়া, নুনখোলা, শালচুড়া, ডেফলাই, ফাকরাবাদ, বনকালি, মরিয়মনগর, জারুলতলাসহ ১৫ গ্রামের হাজারো মানুষকে প্রতিদিন ঝিনাইগাতী সদরে আসতে হয় এবং সেখান থেকে জেলা সদরে যেতে হয়। নদীতীরবর্তী কৃষিপ্রধান গ্রামগুলোতে করলা, শিম, শসা, কাঁকরোল, লাউ, ঝিঙেসহ নানা সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে বাসিন্দারা। এসব গ্রামের শিক্ষার্থীদের নদী পার হয়েই যেতে হয় স্কুল-কলেজে। অসুস্থ হলে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুরা ঝুঁকি নিয়েই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। অথচ সেতু থাকলে এক কিলোমিটার সড়ক পার হলেই উপজেলা সদরে যাতায়াত করা যেত। বর্ষাকালে উপজেলা সদরে যেতে হয় ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে।

শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হলেও বর্ষাকালে যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়ে যায়। পাহাড়ি মাটি সাধারণত এঁটেল। সেই মাটির সড়ক বর্ষাকালে পিচ্ছিল হয়ে যায়। হেঁটে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে এ পথ পাড়ি দিয়ে নৌকায় যেতে হয় শহরে। এতে শিক্ষার্থী ও গবাদি পশু পারাপারে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কথা হয় মরিয়মনগর গ্রামের শিলা ম্রং ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবেতা মংয়ের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, বাপ-দাদার কাছে শুনেছেন, সেতু হবে। কিন্তু হবে হবে করেই কেটে গেছে ৫৩ বছর। আরও কত বছর যাবে, বলতে পারেন না তারা।

ডাকাবর গ্রামের কৃষক শহিদুল বলেন, ভোট এলে সবাই ওয়াদা করেন– সেতু করে দেবেন। ভোটের পর কেউ খোঁজ-খবর রাখেন না। এভাবেই যুগের পর যুগ ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামানের ভাষ্য, দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে। উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি অনেকবার আবেদন-নিবেদন করেছেন। আশ্বাসও পেয়েছেন, কিন্তু সেতু হয়নি। এখন ভোটারদের কাছে যেতে বিব্রত বোধ করেন তারা।

কথা হয় ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে দুটি সড়কে মানুষ যাতায়াত করে তা কাঁচা। এর পর নদী পার হতে হয়। এতে কষ্ট হচ্ছে মানুষের। এ নদীর এক পাশে রাবারড্যাম এবং ঝিনাইগাতী বাজারে আরেকটি সেতু আছে।’ তাঁর দাবি, একটি সেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো সেতু নির্মাণের বিধান নেই। তাই সমস্যা হচ্ছে। একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ভালো কিছু হবে বলে আশা তাঁর। সেতু তৈরিতে ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকা লাগবে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক ক ল ম ট র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইফতার করতে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচবিবিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব গোলাম নাছির (বিপ্লব) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আজ সোমবার বিকেলে ইফতার করতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার ফিচকারঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পাঁচবিবি থানার ওসি মইনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহত গোলাম নাছির পাঁচবিবি উপজেলার মধ্য মালঞ্চ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা গোলাম নাছির পারিবারিক কাজে সোমবার পাঁচবিবি উপজেলা সদরে এসেছিলেন। তিনি ইফতার করতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ইফতারের আগে ফিচকার ঘাট এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সড়কে ঘোরানোর সময় মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গোলাম নাছির মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে সড়কের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাঁকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম সোমবার রাত সোয়া দশটায় প্রথম আলোকে বলেন, ইফতার করতে বাড়িতে যাওয়ার সময় পাঁচবিবি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ