রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে এবার আমরণ অনশনে বসেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার পর থেকে কলেজটির মূল ফটকের সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

এ সময় সাত দফা দাবি জানান তারা। শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম তিতুমীর ঐক্যের দাবিগুলো হলো– তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা; শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ বা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন এবং চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় আইন ও সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন।
এ ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ।

এর আগে এ কলেজে তারা ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামফলক টানিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। এ দাবিতে এখন তারা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।

‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা দাবি না মানলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে গতকাল এ কর্মসূচি থেকে সরে এসে তারা আমরণ অনশন শুরু করেন। 

অনশনে অংশ নেওয়া কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী এফ রায়হান সমকালকে বলেন, তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে স্বেচ্ছায় আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছি। তিতুমীর কলেজের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করা ও ঢাকা উত্তরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ আন্দোলন আজ সময়ের দাবি। আমাদের এই সংগ্রাম শুধু তিতুমীরের নয়, বরং সমগ্র জাতির উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের জন্য।

বেল্লাল হাসান নামের বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি করার পর আমরা অর্জনের চেয়ে হারিয়েছি বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৭ সালে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের টিয়ার গ্যাসে চিরতরে হারিয়েছিলেন তাঁর দুই চোখ। সেদিনই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, দেশে শিক্ষার জন্য আর কোনো সিদ্দিক চোখ হারাবে না। শিক্ষা হবে সবার জন্য উন্মুক্ত। 

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ‘তিতুমীর ঐক্য’। এ জোটের সংগঠক গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ সাত দফা দাবি পূরণের সরকারি ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ ত ত ম র কল জ আমরণ অনশন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রাস্তা খুঁড়ে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা

ভোলায় প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে। তিন মাসের অধিক সময় ধরে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে সড়ক ফেলে রাখায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। 
ভোলার ইলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে হাওলাদার মার্কেট পর্যন্ত সড়কের নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ করায় মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ওই  রাস্তার একাংশে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কিছু রাস্তা খুঁড়ে বালু ফেলে রাখায় মানুষের স্বাভাবিক হাঁটাচলাও বন্ধের পথে। খান্দাখন্দের কারণে বাকি অংশও এখন চলাচলের অযোগ্য। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ সড়কের সংস্কার ও বর্ধিতকরণের কাজ  শেষ করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে মাঝপথে থেমে রয়েছে উন্নয়নকাজ। ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করার 
দাবি এলাকাবাসীর।     
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ভোলা শহরের ইলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে কলঘাট, জাঙ্গালিয়া হয়ে পশ্চিম ইলিশার হাওলাদার মার্কেট পর্যন্ত পৌনে ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও বর্ধিতকরণের জন্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ১২ ফুট চওড়া রাস্তাটিকে ১৮ ফুট চওড়া করে ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএফটিসিএলের অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে ওই  সংস্কারকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে পর কাজ শুরু হয়। এর পর অনিয়মের অভিযোগে তিন মাস আগেই বন্ধ করে দেয় স্থানীয়রা। এতে ভোগান্তি কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়। 
সরেজমিন দেখা যায়, কার্যাদেশের শর্ত না মেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএফটিসিএল সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশার হাওলাদার মার্কেট থেকে 
পাঙ্গাশিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমটার পুরোনো রাস্তার পিচের কার্পেটিং এক্সক্যাভেটর দিয়ে তুলে ফেলে। পরে রোলার করে নতুন রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু করে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজ ফেলে তার দক্ষিণ দিকে আরও এক কিলোমিটার রাস্তার মাটি খুঁড়ে বেজমেন্টে বালু ফেলে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যস্ততম ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বালুর কারণে এখন মানুষ হেঁটেও চলতে পারছে না ওই রাস্তায়। 
বাঘারহাট এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও ছালাউদ্দিন জানান, শুরুতে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করছিলেন না ঠিকাদার। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে তারা কার্যাদেশ অনুযায়ী রাস্তা প্রশস্ত করা ও বেজমেন্টের কাজ শুরু করে। প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত পুরোনো রাস্তা খুঁড়ে বালু ফেলে এর পর রহস্যজনকভাবে কাজ বন্ধ করে চলে যায়। 
কলেজছাত্র আমির হোসেন জানান, আগের ভাঙা রাস্তায় হাঁটা গেলেও এখন বালুর মধ্য দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না। জরুরি প্রয়োজনে রোগী হাসপাতালে নিতে সমস্যা হচ্ছে। কৃষিপণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষার আগে রাস্তার কাজ শেষ না হলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে। 
রাস্তার কাজ বন্ধ রেখে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার প্রতিবাদে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ ও ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। তারা অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। 
এ বিষয়ে কথা বলতে কাজের সাইটে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 
কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, বলতে পারেননি সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু আশরাফুল হাসান। তাঁর ভাষ্য, রাস্তার স্থায়িত্ব বাড়াতে 
কাজের ডিজাইন পরিবর্তন করে ঢাকায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রকৌশলীরা এসে দেখে গেছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এলেই কাজ শুরু করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন
  • তিতাসের ফতুল্লা কার্যালয় ঘুষের টাকা ভাগাভাগি হয় দপ্তরে বসেই
  • রাস্তা খুঁড়ে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা
  • আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানের ১৮ দিন