আট মাসের বেতনে লাখো কর্মীর পদত্যাগ চান ট্রাম্প
Published: 29th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র সরকারে সংস্কার ও ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে আট মাসের বেতন দিয়ে কয়েক লাখ ফেডারেল কর্মীর পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এ-সংক্রান্ত ই-মেইল পাঠানো হয়। তারা প্রস্তাব গ্রহণ করে বেতন গ্রহণ সাপেক্ষে পদত্যাগ করতে চান কিনা, সে বিষয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশা, কমপক্ষে ১০ শতাংশ ফেডারেল কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। হিসাব করলে এ সংখ্যা প্রায় ২ লাখের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীর আনুমানিক সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বেতন দিয়ে চাকরিচ্যুতির প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সরকারের সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি ডলার। মার্কিন সরকারের মানবসম্পদ বিভাগের পারসনের ম্যানেজমেন্ট অফিস (ওপিএম) এ সংস্কার পরিকল্পনার দিকে নজর দিয়েছে।
২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফেরেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে তিনি কভিড মহামারি সময়ে ঘরে বসে কাজ করার চর্চা বাতিল করেছেন। ওপিএম বলছে, কেবল পোস্ট অফিস, অভিবাসন, সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া সব ধরনের পূর্ণকালীন চাকরিজীবীর জন্য এ প্রস্তাব প্রযোজ্য হবে। যারা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন, তাদের ‘পদত্যাগ’ লিখে ই-মেইল পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কর্মীদের সংগঠন এএফজিই। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এ ধরনের ‘শুদ্ধিকরণ’ পদক্ষেপের ব্যাপক ও অপ্রত্যাশিত ফলাফল রয়েছে, যা মার্কিনিদের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরাও এর সমালোচনা করছেন। দলটির সিনেটর টিম কেইন বলেন, এ ধরনের কিছু করার কোনো অধিকার ট্রাম্পের নেই। এ প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে পদত্যাগ করে ‘বোকা’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প বারবার সরকারে কাটছাঁট করার কথা বলে আসছেন। তাঁর উপদেষ্টাদের মধ্যে ধনকুবের ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী অন্যতম।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের নতুন প্রেসিডেন্সি বাস্তবে মুখ থুবড়ে পড়বে। নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহার, কেন্দ্রীয় সহায়তা স্থগিত করাসহ তাঁর নানা পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ পড়েছেন বড় সংকটে।
ট্রাম্পের প্রতি মার্কিনিদের আকর্ষণ ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরোধিতার প্রতিফলন। তিনি হয়তো বলতে পারেন, চমৎকার বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট পদে এসেছেন; পরিবর্তন করতেই পারেন। তথাপি নানা প্রশ্ন উঠছেই। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ট্রাম্প একনায়ক হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করছেন।
নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ
গাজায় গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। বুধবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এতে ট্রাম্প আমলে নেতানিয়াহু হবেন হোয়াইট হাউসে সফর করা প্রথম কোনো বিদেশি নেতা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’