বরিশাল নগরীসংলগ্ন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী বাজারে খাস খতিয়ানের জমি রয়েছে ছয় একর। এর মধ্যে আছে দুটি পুকুর, প্রতিটি এক একর আয়তনের। আওয়ামী লীগ আমলে এসব ভোগদখল করতেন দলটির স্থানীয় নেতারা। মাছ বাজার, বালুর খলা ও স্পিডবোট ঘাট বসিয়ে আয় করতেন লাখ লাখ টাকা। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের দখলদাররা পালানোয় সেগুলো রক্ষা ও ভোগের দায়িত্ব নিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। 

বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড থেকে সড়কপথে তালতলী বাজারের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় বিনোদনপিপাসুদের কাছে এলাকাটি জনপ্রিয়। বাজারের সঙ্গে নদীর তীর ঘেঁষে গণপূর্তের ৯ একর জমি ছিল। কয়েক বছর আগে ওই জমি থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা মডেল মসজিদের জন্য প্রায় সাড়ে তিন একর অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি ৬ একর ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করে জেলা প্রশাসনের অধীনে নেওয়া হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গণপূর্তের অধীনে থাকাকালেই ওই জমি আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে যায়। তারা মাছের পাইকারি বাজার ও মেহেন্দীগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী স্পিডবোট ঘাট স্থাপন করেন। বড় অংশজুড়ে বসানো হয় বালুর খলা (বালু বিক্রির দোকান)। 

সর্বশেষ দুই বছর আগে উচ্ছেদের পর শেখ রাসেল মিনি মার্ক স্থাপনের জন্য সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু হয়েছিল। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। ওই সীমানার মধ্যে মাছের পাইকারি বাজার ও স্পিডবোট ঘাটের ব্যবসা চালাতেন আওয়ামী লীগের দখলদাররা। ৫ আগস্টের পর এসব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তালতলী বাজার কমিটির নামে।

কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য ও চরবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুরুজ আহমেদ। তিনি এখন সব নিয়ন্ত্রণ করেন। চাঁদা ওঠে বাজার কমিটির নামে। 

চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাহীন আলম জানান, নদীর তীর ঘেঁষে চার একর জমিতে শেখ রাসেল শিশুপার্ক করার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ চলমান। সড়কের পাশে থাকা মাছ বাজারটি পার্কের মধ্যে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগে স্পিডবোট ভেড়ানো হতো তালতলীর বাজারসংলগ্ন পাকা ঘাটে। এখন পার্কের জমিতে ঘাট স্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ডেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।

ইউএনও ইকবাল হাসান বলেন, ‘আমাদের জমি অবৈধ দখলে নিয়ে স্পিডবোট ঘাট ও মাছের বাজার করা হয়েছে। দখল উচ্ছেদ করতে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ 

বাজার কমিটির সভাপতি সুরুজ আহমেদ বলেন, ‘সব নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। আমরা কোনো দখলে নেই। এর চাইতে বেশি কিছু বলব না।’

এদিকে মাছ ঘাট ও স্পিডবোট ঘাট ইজারা চেয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেছেন উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নিয়াজ মোর্শেদ। তিনি বলেন, সরকারি জমিতে থাকা বাজার ও ঘাট ইজারা দেওয়া হলে সরকার রাজস্ব পাবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল কম ট র ত লতল র দখল উপজ ল আওয় ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নির্বাচনে পিআর সিস্টেমে ভোট চান জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে মূল কর্তৃত্ব থাকবে নিম্নকক্ষের হাতে। এটি হবে বর্তমান পদ্ধতিতে, আর উচ্চকক্ষ হবে পিআর সিস্টেমে। উচ্চকক্ষ যদি পিআর সিস্টেমে হয় তাহলে নিম্নকক্ষ কেন হতে পারবে না। একই দেশে দুই পদ্ধতির প্রয়োজন কী। পৃথিবীর ৬২টি দেশ পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করে। ইউরোপের ২৬টি দেশের মধ্যে ১৬টি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করে। এই সুফল যদি তারা যুগ যুগ ধরে পেয়ে থাকে, তাহলে এ সুবিধা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করার কে। এটা যারা মানবেন না মনে করতে হবে, তারা হলো বিচার মানি; কিন্তু তালগাছটা আমার। 

আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি আরও বলেন, নারী অধিকার সংস্কারের নামে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট জমা হয়েছে। সেই রিপোর্টের বেশ কিছু জায়গায় কোরআন ও সুন্নাহর সম্পূর্ণ খেলাপ কিছু সুপারিশ জমা হয়েছে। কিন্তু যারা এই সুপারিশ পেশ করেছেন; তারা এ দেশের সাড়ে ৯ কোটি মায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা যে জায়গায় সমাজকে নিতে চান; সেটা হতে দেওয়া হবে না। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেই এটি বাতিলের জন্য আহ্বান জানানো হবে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ইউরোপ সফরকালে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষকে বলেছি, বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতিবাজরা ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। এই টাকা আমাদের জনগণের। পাচার হওয়া টাকা আমাদের ফেরত দিতে হবে। সেইসঙ্গে যেসব দুর্নীতিবাজরা আপনাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরকেও বাংলাদেশের ফেরত পাঠাতে হবে। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই; যেখানে কোনো শোষণ, জুলুম ও মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না। এমন একটি বাংলাদেশ চাই; যেখানে আর আমরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবো না। একই বাংলাদেশে সবার একই অধিকার থাকবে। 

প্রায় অর্থ লাখ জনতার উপস্থিতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ইসলামের প্রশ্নে আমরা সবাই এক আছি। কোনো বাধার মুখে আমরা থেমে যাবো না। আমরা একমাত্র আল্লার ওপর ভরসা করি। তার শক্তিতে বিজয় আসবেই। এই বিজয়ের মাধ্যমে কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সবার জন্য এক ধরনের বিচারব্যবস্থা চাই। বিচার ব্যবস্থা প্রভাবশালীদের জন্য একরকম আর সাধারণত এর জন্য আরেক রকম, এটা আমরা চাই না। 

দ্রব্যমূল্য রমজানে থাকলেও বাজার এখন আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে। আমরা সরকারকে বলব, সেদিকে নজর দেন। সমাজের শৃঙ্খলা বিনষ্টের যারা কারণ তাদেরকে পাকড়াও করুন। যারা সাড়ে ১৫ বছর এবং শেষ মুহূর্তে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালিয়েছে তাদের কাউকেই আইনের বাইরে রাখবেন না। 

মহানগর জামায়েতের আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দসহ অন্যরা।

সম্মেলনটি সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮টা থেকে জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা মিছিলে মিছিলে সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হন। সম্মেলনে ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ