কয়েদির হাতুড়িপেটায় মাথা ফাটল সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরের
Published: 29th, January 2025 GMT
গাজীপুর জেলা কারাগারের ভেতরে নিয়মিত ‘বিচার বৈঠকে’ সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি প্রকাশ্যে ফয়েজ উদ্দিন (৫৮) নামের এক সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে বুধবার সকালে ওমর ফারুক (৩৩) নামের এক কয়েদি এ ঘটনা ঘটায়।
জানা গেছে, দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ও কাপাসিয়া উপজেলার বিল জরাইল গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক প্রকাশ্যে লোহার ঘণ্টি পেটানোর হাতুড়ি দিয়ে বিচার বৈঠকে সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টর ফয়েজ উদ্দিনের পেছন দিক থেকে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে ফয়েজ উদ্দিনের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। পরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
কারা সূত্র বলছে, সেখান থেকে দ্রুত তাকে কারাগারের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়া শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফয়েজ উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কারাগারের একাধিক সূত্র বলছে, বিচার বৈঠকে কেস টেবিলে বসে কাজ করছিলেন ফয়েজ উদ্দিন। এ সময় তার সামনে এসে ওমর ফারুক বলতে থাকে ‘আমাকে ছেড়ে দেন। বারবার কেন আমাকে এখানে এনে বন্দি করে রাখা হচ্ছে।’ ওমর ফারুক পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। এ সময় ফয়েজ উদ্দিন তার সঙ্গে পরে কথা বলবেন বলে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এর ঠিক আধাঘণ্টা পর লোহার ঘণ্টি বাজানোর হাতুড়ি নিয়ে এসে ফয়েজ উদ্দিনের পেছনে গিয়ে আঘাত করতে থাকে।
গাজীপুর জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, ফয়েজ উদ্দিন একজন পরহেজগার মানুষ। তার মতো এতো ভালো অফিসার খুব কমই পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কোনো কয়েদির বিরোধ থাকার কথা নয়। তারপরও তদন্তের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বলা যাবে।
বিচার বৈঠকে সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরের দায়িত্ব পালন করার কথা নয়। সেখানে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করার কথা। তবুও কেন সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এমন প্রশ্নে উত্তরে জেল সুপার বলেন, ৩০০ জনের ধারণ ক্ষমতার কারগারে বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৬০০ জন। লোকবলও পর্যাপ্ত নেই। তাছাড়া ফয়েজ উদ্দিন একজন অভিজ্ঞ মানুষ। এ কারণে তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিজেও আনন্দের সঙ্গে সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
কারা সূত্র বলছে, এর আগেও কয়েকবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে ওমর ফারুককে জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধডজন মামলা আদালতে বিচারাধীন।
সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি তাকে এ কারাগারে আনা হয়। জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, বিষয়টি কারা মহাপরিদর্শককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। কয়েদি ওমর ফারুক বারবার এ কারাগারে বন্দি থেকেছে। বন্দী থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে সেই বিষয়টিও মাথায় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জ ন ট ইনস ট র ক ওমর ফ র ক ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম
উনি তো বাংলাদেশের অমিতাভ বচ্চন, শোবিজ অঙ্গনে এ বাক্যটি প্রায়ই শোনা যায় তাঁর সহকর্মীদের মুখে। কেবল অমিতাভদের মতো করে কাজে লাগানো হয়নি। তাঁকে কেন্দ্র করে গল্প ভাবলে, গল্পের মূল শক্তিতে যদি তাঁকে রাখা হয়, তাহলে দারুণ কিছু পেতে পারত ঢাকার সিনেমা কিংবা নাটকের ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু ক’জন ভাবে এটা। অধিকাংশের ভাবনায় কেবল ট্রেন্ডি কনটেন্ট। ভাইরাল শিল্পী। ফলে ঢাকার শোবিজে দাপুটে অভিনেতা হয়েও অমিতাভ কিংবা রজনীকান্তদের মতো প্রভাব নিয়ে পর্দায় হাজির হতে পারছেন না। তিনি তারিক আনাম খান।
ব্যক্তিজীবনে যিনি সৌম্য, শান্ত, ধীরস্থির প্রকৃতির একজন মানুষ। অভিনয়ে প্রথাগত নন। আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য নিয়েই চলমান। তারিক আনামের সঙ্গে যারা মেশেন বা যারা তাঁকে জানেন তারা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করবেন তিনি বলেন কম, শোনেন বেশি। শোঅফ কম, করেন বেশি।
সদা গম্ভীর প্রকৃতির একজন মানুষ হয়েও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের অভিনয় সৌকর্য ও সাংগঠনিক দূরদর্শিতা দিয়ে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মঞ্চের আলোয় আলোকিত তিনি। গ্রুপ থিয়েটারের অন্যতম দল নাট্যকেন্দ্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেও নিজের ভেতর বিন্দুমাত্র অহমিকা নেই। নেই ‘অনেক কিছু করেছি টাইপ’ দৃষ্টিভঙ্গি।
নতুন বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল তারেক আনাম খান অভিনীত ‘মেকআপ’ সিনেমাটি। বহু আগে শুটিং হওয়া এ সিনেমাটি বারবার সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। মূলত দেশের শোবিজ অঙ্গনের খুঁটিনাটি বিষয় ও সম্পর্কের বিষয়গুলো চিত্রায়ণ করায় এই নিষেধাজ্ঞা। এই সিনেমায় একজন সুপারস্টার নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তারিক আনাম খান। সিনেমাটি ব্যবসা করতে পারেনি। পারছে আলোচনায় আসতে। যেটা পেরেছে সেটা তারিক আনাম খানকে নতুন করে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে। যে তারিক আনাম খানদের এই সময়ের নির্মাতারা এড়িয়ে চলেন, কিংবা শুধু বাবার চরিত্রের জন্যই কাস্ট করেন, তাদের নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন। এই ছবিতে তারিক আনাম খান সত্যি সত্যিই দেখিয়েছেন বয়স একটা সংখ্যামাত্র। তাঁকে নিয়ে বহুমাত্রিক চিন্তা করার সময় এখন। তবে সেই চিন্তা কতটা প্রসারিত হবে, তা অজানা। যদিও অভিনেতা অনেকটা কৌতুকের সুরেই বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেন, এখন তো সব সিনেমায় বাবা চরিত্রেই অভিনয় করছি। আমি তো জাতীয় বাবা হয়ে গেছি। এর থেকে মুক্তি চাই।’
তাঁর মতে, সিনিয়র শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে নির্মাতাদের আলাদা করে ভাবা উচিত। যেখানে বলিউডে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে আলাদা গল্প বলা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এটা হয় কী? আমাদের নিয়ে নতুন নতুন ভাবনার গল্প তৈরির লোক কই? কথাগুলো বলার সময় এক ধরনের আক্ষেপ ছিল বরেণ্য এই অভিনেতার। ছিল অতৃপ্তিও। তাই কথা বলতে বলতে ফিরে যাওয়া হয় অতীত স্মৃতিতে। যে স্মৃতি বর্ণিল, রঙ্গিন। যাকে সবাই সোনালি দিন বলেই সম্বোধন করেন। সেই সোনালি দিনগুলোর কথা কতটা মনে তারিক আনাম খানের? জানালেন, তিনি আসলে অতীত রোমন্থন করে তাতে মুগ্ধ থাকার মানুষ নন। বলেন, আমি অতীত মগ্ন মানুষ নই। স্মৃতি রোমন্থন করারও মানুষ নই। আমি মনে করি, বর্তমান সময়টাই সত্য।’
তারপরও অতীতের কাজের পদ্ধতি নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেতা। কথা বলতে বলতেই উঠে এলো সব। বললেন, তখনকার সময়ের কথা যদি বলি তখন ভালো ছিল এই যে, স্ক্রিপটা নিয়ে নাট্যনির্দেশকরা অনেক আগে থেকে চিন্তাভাবনা করতেন। কমপক্ষে চারদিন নাটকের রিহার্সেল হতো। একটানা তিন ক্যামেরায় কাজ হতো, আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করত। আমি এখন যদি এই একই ঢঙে নাটক নির্মাণ করি, তাহলে দর্শক গ্রহণ নাও করতে পারে। ওই সময় এবং এ সময়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ যদি করি, দেখা যাবে তখন সিরিয়াসনেসটা বেশি ছিল। হোমওয়ার্ক বেশি হতো। কোয়ালিটিও ছিল এবং ভালো কাজের যথেষ্ট সুযোগও ছিল। কোয়ালিটি কিন্তু আপেক্ষিক বিষয়।