জুলাই বিপ্লবের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আগামী জুনে গণপরিষদ নির্বাচন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান এ ডাক দেন।

এ সময় জুলাইয়ের শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন, শহীদ নাইমা সুলতানার মা আইনুন নাহার ও শহীদ রানা তালুকদারের মা রুবি বেগম জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান।

সংবাদ সম্মেলনে গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপিকে গভীরভাবে ভাবার আহ্বান জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, “দেশে দীর্ঘদিন নির্বাচিত সরকার না থাকলে বিদেশি শক্তি ও পতিত ফ্যাসিবাদ নানা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। এমনকি বন্ধু দেশগুলোও লবিস্টদের দৌরাত্ম্যের কারণে ভুল পদক্ষেপের খপ্পরে পড়তে পারে। আবার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া দ্রুত নির্বাচন দিলে অশুভ শক্তি পতিত ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করে বসতে পারে।”

তিনি বলেন, “এ অবস্থায় গণপরিষদ নির্বাচন হলো একমাত্র বিকল্প। যার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে দেশ একটি নির্বাচিত কর্তৃপক্ষ পাবে। এর ফলে গণপরিষদের সম্ভাব্য বড় দল বিএনপির ক্ষমতা বিষয়ক আতঙ্ক দূর হবে। পাশাপাশি দলটি সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব পেয়ে কেমন সংস্কার করে, ভিন্নমত কতটা শোনে এবং জনগণের কতটা অধিকার দিতে রাজি হয়, তাও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো.

শফিউর রহমান, সদস্য সচিব মোহাম্মদ হাসান আরিফ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক রাবেয়া আক্তার, আবদুল আহাদ নূর, সহকারী সদস্য সচিব আবদুস সালাম, ইঞ্জিনিয়ার ইমামুল হক, গালীব ইহসান, সৌরভ শাকিল, ডা. মাসুম বিল্লাহ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মো. মেহেদি হাসান মাহি ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ ইসতেকার ইসলাম অর্ণব, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব ফরহাদ আহমেদ প্রমুখ।

তাদের দাবিগুলো হলো-

১. জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বর, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। জড়িতদের দেশ-বিদেশ থেকে বন্দী করে আনার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন। ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল এবং ৬ মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।

২. শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা।

৩. জুন ২০২৫-এ গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। গণপরিষদে শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি করতে হবে।

৪. গণপরিষদ কর্তৃক '৭২ এর সংবিধান বাতিল, রাষ্ট্রপতি অপসারণ এবং উপদেষ্টা সরকার ভেঙে দিতে হবে।

৫. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত বিপ্লবী সরকার গঠন। এ সরকারের একটি অন্তর্বর্তী মন্ত্রিপরিষদ থাকবে, যার নেতৃত্ব দিবেন গণপরিষদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী।

৬. জানুয়ারি ২০২৬ এর মধ্যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন।

৭. ড. ইউনূসকে চেয়ারম্যান এবং সেনাপ্রধানকে ভাইস-চেয়ারম্যান করে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করতে হবে। এ পরিষদ দেশ বিরোধী সকল চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল করবে, সব বাহিনীকে পুনর্গঠন করবে এবং পুনর্গঠনকালীন সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।

৮. ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন করে অর্থনীতি সচল ও সংস্কার, কালো টাকা উদ্ধার ও সিন্ডিকেট ভাঙা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের আয়ত্তের মধ্যে রাখা।

৯. আধুনিক, উন্নত মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণীর পেশা ঘোষণা করে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বেতন প্রদান, মাস্টার্স পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্য সুদমুক্ত শিক্ষা ঋণ চালু এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে উন্নত আবাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

১০. সব গরিব ও মেহনতি মানুষের চিকিৎসা খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। সব নাগরিকের জন্য ব্যয়বহুল জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে হতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সব বিভাগে একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১১. ঘণ্টা প্রতি সার্বজনীন মজুরি ঘোষণা করতে হবে। বিনা সুদে কর্মসংস্থান ঋণ প্রদানের পাশাপাশি শ্রমজীবীদের জন্য আবাসন ও সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য চ ত কর র গঠন গঠন ক সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার

কয়েক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে রিকন্ডিশন্ড যান আমদানি ও বিক্রি কমেছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হার কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। এছাড়াও গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। 

শনিবার রাজধানীর বিজয়নগর ফার্স হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক এ দাবি জানান। এ সময় সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক মোটরযান আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো এবং শুল্ক হার নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানিতে ন্যূনতম ১২৯ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ও অ্যাম্বুলেন্স আমদানির শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং পিক আপ বা ভ্যানের শুল্ক সর্বনিম্ন স্তরে নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে মানসম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক কমাতে হবে। হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করা হলে এসব গাড়ি আমদানি সহজ হবে এবং সরকারে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করে বারভিডা। 

আবদুল হক বলেন, করোনা মহামারির কারণে বারভিডার সদস্যদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ডলার সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি করা গাড়ির দামও বেড়েছে। ফলে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে রিকন্ডিশন গাড়ি। এতে এসব গাড়ি আমদানি কমেছে।

বারভিডার সভাপতি বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে দেশে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মোটরযানে ২০৩০ সাল নাগাদ ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইদানীং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হচ্ছে। তাই দেশে বৈদ্যুতিক, হাইব্রিড, প্লাগ-ইন হাইব্রিড এবং হাইড্রোজেন গাড়ি আমদানি ও ব্যবহার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। 

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং দেশে আমদানি করা নতুন গাড়ির নিবন্ধন ফি’র মধ্যে অনেক বৈষম্য রয়েছে বলে দাবি করেন বারভিডা সভাপতি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধন খরচ নতুনের চেয়ে পুরোনো গাড়িতে অনেক বেশি। দেড় হাজার সিসি সক্ষমতার গাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা বদল ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলিয়ে নতুন গাড়িতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার ৪০৮ টাকার বেশি। অন্যদিকে পুরোনো গাড়িতে এ খরচ হয় ১ লাখ ৭ হাজার টাকার বেশি। আর সাড়ে তিন হাজার সিসি সক্ষমতার নতুন গাড়িতে খরচ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৮ টাকা। একই সক্ষমতার পুরোনো গাড়ির বেলায় তা ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ টাকা।

মডেল ভেদে পুরোনো গাড়ির নিবন্ধন খরচ নতুনের তুলনায় ২৭ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকার মতো বেশি। এছাড়া আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রির সময় ‘দ্বৈত নিবন্ধন’ করতে হয়। বৈষম্যমূলক এসব সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান তারা।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে আবদুল হক বলেন, 
ব্যাটারিচালিত রিকশা পরিবেশের জন্য হুমকি ও দেশের জন্য ‘ক্যান্সারে’ পরিণত হয়েছে। গাড়ি এখন আর বিলাসিতা নয়। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। গাড়ির ব্যবহার বাড়লে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্পেন ও পর্তুগালে ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাট, সব ধরনের গণপরিবহনে বিপর্যয়
  • মাইক্রোবাসে শুল্ক প্রত্যাহার দাবি
  • হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার