জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আত্মপ্রকাশ হয়েছে সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের। এ উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংগঠনের উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, যুগান্তরের সিটি এডিটর মিজান মালিক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্টকে দক্ষিণ এশিয়ার স্মরণীয় দিন। দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ৫ আগস্ট জাতীয় নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত কয়েকবার আমরা সরকারে ছিলাম, বিরোধী দলে ছিলাম এবং আমরা ৪০ থেকে ৪৫ বছর নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। তাই আমরা বুঝি, কতদিনে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। সেজন্য আমরা বলছি, নির্বাচনী আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিন। নির্বাচন দিতে কেন বিলম্ব হচ্ছে, সেটা জনগণকে জানাতে হবে। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর ১৫ দিন পার হয়ে গেছে; এখনো রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। আমি আশা করব, দ্রুত আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকারকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য রাস্তায় আন্দোলন করতে হতে পারে। সরকারকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে কিছু উদ্যোগ নেবে বিএনপি। এসময় গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করেন তিনি।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে পাহারা দিয়েছিলো রাজনৈতিক দলগুলো। কেউ এটা ভাববেন না যে, এই আন্দোলন ১০ থেকে ১৫ দিনে হয়ে সফল হয়েছে। এটা ঠিক নয়, বিগত ১৬ বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান সফল হয়েছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি আপনাদের সাক্ষ্য দিচ্ছি, গত ১৬ বছরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন গণমাধ্যমের অধিকারের জন্য, স্বাধীনতার জন্য আমরা দীর্ঘ আন্দোলন করেছি। ২০১৩ সালে ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে কালো আইনের খসড়া তৈরি করেছে। সেখান থেকে আমাদের আন্দোলনের শুরু হয়েছে। সেখানে আমাদের বক্তব্য সব গণমাধ্যম প্রকাশ এবং প্রচার করতে পারেনি। ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ৫৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে তাদের পেটোয়া বাহিনীর হামলায়। জুলাই বিপ্লবে ৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চেয়েছিলাম তার প্রাথমিক বিজয় এসেছে। বিগত ১৬ বছরে আমরা সাংবাদিকতা করতে পারিনি আপনারা সবাই সাক্ষী। হাসিনাকে দানবে পরিণত করার জন্য সাংবাদিকদের একটি বড় ভূমিকা ছিল। আমরা গণমাধ্যমের মালিকদের বলেছি, আমরা এই দেশে একটা গণমাধ্যমও যাতে বন্ধ না হয় সেই ব্যবস্থা করবো কিন্তু আপনাদের প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী লীগকে দানবে পরিণত করেছে তাদের থাকতে দেয়া যাবেনা। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে দেখছি তারা একই জায়গায় রয়ে গেছে। যারা দালালি করেছে তারা দালাল, তারা সাংবাদিক নয়।

এ সময় বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রায়হান বলেন, জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে আগামীতে সবাই নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করবে। এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। সেই উদ্যোগেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পার্থ সারথি দাস বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা কারো তাবেদারি করবে না, তারা সব সময় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করবে। আজকের অনুষ্ঠানে সেই বার্তা আমরা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করেন।

বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আল ইমরানের সঞ্চালনায় সভায় আরও অংশ নেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আরিফুল ইসলাম, আবু হানিফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ র সদস য র জন য সরক র আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ