১১ বছরে কমেছে শিল্প খাতের অবদান: বিবিএস
Published: 29th, January 2025 GMT
গত ১১ বছরে শিল্প খাতের অবদান কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৭৭ শতাংশ। যা ২০১৩ সালে ছিল ১১.৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৩ সালে দেশে অর্থনৈতিক ইউনিট ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টিতে। অর্থাৎ, গত ১১ বছরে দেশে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা বেড়েছে ৪০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৯টি বা ৫১.৯১ শতাংশ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানী আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৪ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড.
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে উৎপাদন খাতে মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯৭ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ হিসাবে গত অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকায়। ১১ বছরে উৎপাদন খাতের মোট উৎপাদনমূল্য প্রায় ৫.৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার প্রতিবছর গড়ে ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ধস নামার বছরেও এই খাতে ৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল। এছাড়া প্রতিবছরই উৎপাদন খাতে ডাবল ডিজিট, এমনকি কোনো কোনো বছর ১৮ শতাংশ ছুঁই ছুঁই প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। এই সময়ে মোট জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান ১৭.২৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩.১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলেও দাবি করে হাসিনা সরকার। উৎপাদন খাতের হাত ধরে শিল্প খাতে বছরের পর বছর ধরে দেখানো জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হিসাব মিলছে না বিবিএস পরিচালিত অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৪ এর প্রাথমিক ফলাফলে।
অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক হিসাব বলছে, গত ১০ বছরে উৎপাদন খাতে অর্থনৈতিক ইউনিটের (প্রতিষ্ঠান) সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১৫.৩৯ শতাংশ। অথচ ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সময়ে পরিচালিত শুমারির তুলনায় ২০১৩ সালের শুমারিতে এই খাতে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা বেড়েছিল ১০০.৪২ শতাংশ। সার্বিকভাবে দেশে অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানে তুলনামূলক কম প্রবৃদ্ধি হওয়ায় অর্থনৈতিক ইউনিটে এই খাতের অবদান ৮.৭৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে মোট অর্থনৈতিক ইউনিটে উৎপাদন খাতের অবদান ছিল ১২.১৪ শতাংশ, যা ২০১৩ সালে ১১.৫৪ শতাংশে নেমে আসে। এ হিসাবে টানা দুই শুমারিতেই কমেছে উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানের অবদান। গত ১০ বছরে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৮২ থেকে ৫৬.৬৮ শতাংশ বেড়ে এক কোটি আট লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬-এ দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। এর ফলে মোট প্রতিষ্ঠানে সেবা খাতের অবদান ৮৮.৮৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.২৩ শতাংশে।
গেল এক দশকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার বেড়েছে ৪০ লাখ কোটি টাকা। এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যুক্ত হয়েছে ৪০ লাখ ৫৮ হাজার খানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সার্ভিস তথা সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে ৩৯ লাখ ১৯ হাজারটি আর উৎপাদন খাতে যুক্ত হয়েছে মাত্র এক লাখ ৩৮ হাজারটি। এ কারণে গত ১০ বছরে মাত্র ৬২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
অর্থনৈতিক শুমারির প্রতিবেদন মতে, গত এক দশকে অর্থনৈতিক ইউনিট বেড়েছে ৪০ লাখ ৫৮ হাজারটি। এর মধ্যে সেবা খাতে বেড়েছে ৩৯ লাখ ১৯ হাজারটি আর উৎপাদন খাতে বেড়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৫টি; অর্থনৈতিক ইউনিট বাই টাইপে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। এর মধ্যে পার্মানেন্ট ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ২১৪টি, টেস্পোরারি পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬২১টি। ইকোনমিক হাউসহোল্ডে ৫০ লাখ ১২ হাজার ৫২৯টি। ঠিক এর এক দশক আগে প্রতিষ্ঠান ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে পার্মানেন্ট ছিল ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৯১টি, টেম্পোরারি ছিল চার লাখ ৮২ হাজার ৯০৩টি। আর ইকোনমিক হাউজহোল্ড ছিল ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫৭১। অর্থাৎ ৪০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৯টি অর্থনৈতিক ইউনিট বেড়েছে।
এ ছাড়া অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৬১টি, আর শহরাঞ্চলে রয়েছে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার ২০৩টি। এর আগে ২০১৩ সালে গ্রামাঞ্চলে ছিল ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৯টি, শহরাঞ্চলে ছিল ২২ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৬টি। স্থানীয় বা পার্মানেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৩৯ লাখ ৪১ হাজার ৬৮টি, শহরাঞ্চলে রয়েছে ২৩ লাখ ৪৭ হাজার ১৪৬টি; যা ১০ বছর আগে ছিল গ্রামাঞ্চলে ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫৯টি আর শহরাঞ্চলে ছিল ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩২টি। টেম্পোরারি পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬২১টির মধ্যে শহরাঞ্চলে রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯০৯টি আর গ্রামে দুই লাখ ৯১ লাখ ৭১২টি; যা ২০১৩ সালে ছিল দুই লাখ ৭৬ হাজার ৬৯৩টি।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে তিন কোটি সাত লাখ ৬১ হাজার ৩৪ জন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এর মধ্যে পুরুষ দুই কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২৯৮ জন। মহিলা ৫১ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৭ জন, হিজড়া দুই হাজার ৫৯ জন। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে কর্মসংস্থান বেড়েছিল এক কোটি ৩৩ লাখ। আর ২০১৩ সালে এসে কর্মসংস্থান দাঁড়ায় দুই কোটি ৪৫ লাখ ৮৫০। সে হিসাবে গত ১০ বছরে নতুন কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ৬২ লাখ ৬০ হাজার ১৮৪ জন। শিল্প খাতে গত ১০ বছরে এক লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ ত র অবদ ন য ক ত হয় ছ ত ১০ বছর এক ল খ ব ব এস পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে স্ট্রবেরির নতুন জাত ফ্রিডম–২৪
জাপানি ‘নিওহো’ জাতের স্ট্রবেরির সঙ্গে আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরির সংকরায়ণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাপানি জাতটি খুবই ছোট কিন্তু সুগন্ধি ও মিষ্টি। আমেরিকান জাতটি আকারে বড় কিন্তু জাপানি জাতের মতো অতটা মিষ্টি নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন ১০ বছরের চেষ্টায় এই নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। চারা উৎপাদন, নির্বাচন, ট্রায়াল চাষ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যাচাই করতে করতে তিনি ২০২৪ সালে এসে সফল হয়েছেন। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে জাতটির নাম রেখেছেন ফ্রিডম-২৪।
শীতপ্রধান দেশের আকর্ষণীয় ফল স্ট্রবেরির বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশে শুরু হয় ২০০৭ সালে। নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এ দেশে স্ট্রবেরি চাষ একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে নিয়েছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষ চাষিরা সফলভাবে স্ট্রবেরি চাষ করছেন, যা উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে লাভজনক কৃষিতে জায়গা করে নিয়েছে। মানসম্মত চারা ও আধুনিক জাতের স্ট্রবেরির স্বল্পতার কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে এর চাষ সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।
রাজশাহীতে অবস্থিত আকাফুজি অ্যাগ্রো টেকনোলজিস গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে স্ট্রবেরির এই আধুনিক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই জাত আগাম এবং উচ্চফলনশীল, আকারে বড়, দেখতে অনিন্দ্যসুন্দর, সুগন্ধযুক্ত, সুমিষ্ট ব্রিক্স-১২ (মিষ্টতা পরিমাপের একক)। মধ্য ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চের শেষ পর্যন্ত এই ফল উৎপাদন করা যায়। এই ফল যথেষ্ট শক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন ও বিপণন করা সম্ভব। সংকরায়িত অতি ক্ষুদ্র হাইব্রিড বীজ থেকে চারা উৎপাদন, নির্বাচন, ট্রায়াল চাষ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যাচাইকরণ এবং সবশেষে বাণিজ্যিকভাবে চাষ উপযোগিতা পরীক্ষায় লেগেছে ১০ বছর।
গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, এই জাতের চারা রোপণের সময় অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর। ফল উৎপাদন শুরু হয় ডিসেম্বর ১৫ থেকে ২০ থেকে। ফল উৎপাদনকাল ১৫ ডিসেম্বর থেকে মার্চ ৩১। ফলের রং ও আকার উজ্জ্বল লাল, গড় ওজন ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম। প্রতি বিঘার ফলন হিসাব করা হয়েছে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ টন। সংরক্ষণ সময় ৩ দিন (বিশেষ ব্যবস্থায় ৭ দিন), মিষ্টতার পরিমাণ ১২-১৪ ব্রিক্স। গাছের আকৃতি পাতা, বৃতি এবং ফুল—সবই বড়।
এম মনজুর হোসেন জানান, এই স্ট্রবেরি একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হবে। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে এই স্ট্রবেরি আমদানির ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাসকাটাদিঘি এলাকার স্ট্রবেরিচাষি ও ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাত চলে। নতুন এই জাতটি আকারে ফেস্টিভ্যালের চেয়ে অনেক বড়।’ আগামীবার তিনি এই জাত চাষ করবেন।
বাংলাদেশে মাত্র পাঁচটি ফসলের বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এই ফসলগুলো হচ্ছে ধান, পাট, গম, ভুট্টা ও আলু। অন্য ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন করলে তা স্বীকৃতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আর স্ট্রবেরি দেশীয় ফসল নয়। ২০০৭ সালে অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন বাংলাদেশে প্রথম চাষের উপযোগী স্ট্রবেরি জাত উদ্ভাবন করেন। এবার রাজশাহী নগরের চকপাড়া মহল্লায় ১২ কাঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ পড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। নগদে বিক্রি করেছেন ৬ লাখ টাকার বেশি। এখনো তাঁর মাঠে স্ট্রবেরি রয়েছে।