সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে দুই শিশু সন্তানকে বিষ পান করানোর পর মা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। পরে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে বুধবার (২৯ জানুয়ারী) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত দুই শিশু হলো কালিকাপুর গ্রামে হাসান শেখের ছেলের মাহির (৫) ও আরিয়ান (৯ মাস)। আত্মহত্যার চেষ্টা করে অসুস্থ রত্না খাতুন (৩০) তাদের মা।

শিশুদের বিষ পান করানো এবং মায়ের বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অসুস্থ হওয়ার পর স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রত্না খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সামেক) পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

দনিয়া কলেজের সামনে প্রকৌশলীকে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়ায় মেয়েকে হত্যার দায়ে বাবার যাবজ্জীবন

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্যা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিবেশীরা জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। একপর্যায়ে বাড়িতে সকলের অনুপস্থিতিতে অভিমান করে রত্না খাতুন দুই ছেলেকে বিষ পান করিয়ে নিজেও বিষ পান করেন। জানাজানি হলে দ্রুত উদ্ধার করে তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা.

সাকির হোসেন দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি। 

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ য মনগর উপজ ল ব ষ প ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙন ধরে রক্ষা বাঁধে দুর্ভোগ বাড়ে জনপদে

‘বাদলা দিন আইলেই দুই-তিনবার বাঁধ ভাইঙা পানি হামায়া। সব স্বপ্ন শেষ খরিয়া ঘর, ব্যবসা, কষ্টের ফসল ভাসিয়া যায়। তহন চেরম্যান (চেয়ারম্যান), মেম্বার, টিএনও সাব আর নেতারা আইয়া 
ছেপ-লেপ দিয়া বুঝ দেয়। তোরা সামাল দে পরে দেখমুনে। পরে আর দেখে না। আবার বান বন্যা আইলে বাঁধ ভাঙে, তারাও আসে। আবার ভুইলা যায়। ২১ বছর গেলোগ গিয়া। তারা অহনো দেখনের সময় পাইছেন না...।’
ক্ষতিগ্রস্ত কুশিয়ারা নদী রক্ষা বাঁধ আর এর সংস্কার কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি এভাবেই দিলেন সদর উপজেলার হামরকোনা গ্রামের হুমায়ূন মিয়া। একইভাবে ক্ষোভ আর হতাশায় জর্জরিত স্বাধীন মিয়া ও স্থানীয় আরও অনেকেই কথা বললেন একই সুরে।
স্থানীয় ওই প্রবীণরা জানান, বন্যা প্রতিরোধে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হামরকোনা গ্রাম থেকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা পর্যন্ত রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কুশিয়ারা নদীর ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে ১৯৭০ সালে এ বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন নবীগঞ্জের তৎকালীন এলএমএনএ আবদুল আজিজ চৌধুরী। পরে মৌলভীবাজার অংশে এলজিইডির অর্থায়নে আংশিক পাকাকরণ ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে তার কিছু অংশ ইটের সোলিং করা হয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিকায় না থাকায় এ বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কারে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয় না।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই সদর উপজেলার কিছু কিছু অংশের সড়কে পানি ওঠে। অনেক স্থানে জনবসতি, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। মৌসুমে অন্তত দুই-তিনবার এই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ধরে। এসব ভাঙন দিয়ে পানি ঢোকে। এতে হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম, নতুনবস্তি, মুসলিমনগর, শেরপুর বাজারের একাংশসহ আরও বিভিন্ন গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়ে। সে সময় এসব গ্রামে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার বাড়িভিটা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
হামরকোনা গ্রামের মুদরত আহমদ মোহন জানান, গত বন্যায় তিন দফায় বাঁধের তিনটি পৃথক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে পুরো এলাকা বানের পানিতে প্লাবিত হয়। তখন বাঁধের ক্ষত সারাতে সরকারিভাবে কোনো প্রকল্প বরাদ্দ হয়নি। হামরকোনা বয়েজ ক্লাব এবং মুসলিমনগর ঐক্য পরিষদ এলাকার বিত্তশালীদের সহযোগিতায় পানি আটকানোর জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক মেরামত ও একটি সাঁকো নির্মাণ করে।
একই গ্রামের আবদুর রহিম জানান, সর্বশেষ বন্যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর পরিষদের মেম্বারদের মাধ্যমে মাদ্রাসার কাছে ৪০ থেকে ৫০ ফুট স্থানজুড়ে ভাঙন ঠেকাতে গাইডওয়াল নির্মাণ করেন। নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই ফের উজানের পানির তোড়ে সেটি ভেঙে পড়ে।
ব্রাহ্মণগ্রামের নুরুন্নেছা বেগম জানান, বর্ষার সময় ঘরের ভেতর  আঙিনায় দুয়ারে গলাসমান পানি থাকে। ভাঙা স্থান মেরামত না করায় প্রতিবছরই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। খলিলপুর ইউনিয়নের ১-২ নম্বর ওয়ার্ডের সবক’টি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি সহ্য করেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়াহিদ জানান, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণগ্রাম ও হামরকোনার ভাঙন মেরামতে বরাদ্দ পেতে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। বরাদ্দ পেলেই বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মেরামত করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজউদ্দিন সমকালকে জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রকল্প পরিকল্পনা ও কার্যপ্রণালি নির্ধারণে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে জানতে খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল ক্রয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই ছেলেকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর পান করলেন মা
  • দুই ছেলেকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর পান করেন মা
  • ভাঙন ধরে রক্ষা বাঁধে দুর্ভোগ বাড়ে জনপদে