ব্যাংক খাতে চুরিতে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে
Published: 29th, January 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “বিগত সরকারের সময়ে আমাদের ব্যাংকগুলো থেকে টাকা চুরি হয়েছে। এটা কিন্তু ঘটনাক্রমে হয়নি। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলেই এটা পেরেছে।”
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার (এপোস্টিল কনভেনশন ১৯৬১ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মো.
সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার মতো অন্যান্য পদ্ধতিতেও যেন দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকে, সে বিষয়ে জোর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এটা একটা ছোট পদক্ষেপ। এ ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। দুর্নীতির সুযোগ যেখানে থাকে, সেখানে দুর্নীতি একেবারে বন্ধ করা খুব কঠিন। কাজেই সুযোগ যাতে না থাকে, সেটা আনতে হবে। দুর্নীতির সুযোগ যাতে কমে যায়, সেভাবে আমরা এগোবো।”
ইতালিতে ৬০ হাজার বাংলাদেশির পাসপোর্ট আটকানোর তথ্য তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “৬০ হাজার পাসপোর্ট আটকা আছে ইতালিতে। কেন আটকা আছে? কারণ, কাগজ-পত্রের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য। প্রতিটা কেসে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। আমাদের এক দালাল ওখানকার একটা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে এসেছে, কিন্তু আসলে তার ওখানে কাজ করার মতো অবস্থা নেই।”
বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ নিয়ে কথা বলেন মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশি সংসদ সদস্যদের বিদেশে গ্রেপ্তারের উদাহরণ দেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয় না। একদিনে শেষও হয় না। যারা ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা যায়, তাদের মধ্যে যখন আমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন ভালোভালো কথা বলে ইমেজ রক্ষা করতে পারবেন না। আবার যখন আপনার একজন ট্যাক্সিচালক টাকা পেয়ে ফেরত দেয়, তখন কিন্তু অটোমেটিক্যালি আপনার ইমেজ ওপরে ওঠে। আপনার এমপি যখন দুর্নীতির দায়ে আরেক দেশে গিয়ে জেলে যায়, আপনার ইমেজ রক্ষা করা সেখানে কঠিন। সার্বিকভাবে আমরা যা করব, সেটা নিয়ে আমাদের ইমেজ হবে, হুট করে কিছু হবে না।”
বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে লোকবল সংকটের কথা তুলে ধরেন মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি কাতারের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যে মিশন ৩০০ পাসপোর্ট বিতরণ করবে, তার পক্ষে অন্য কোনো সার্ভিস দেওয়া সম্ভব? আমাদের এখান থেকে নাইডগার্ড হিসেবে যিনি যান, তাকে দিয়েও পাসপোর্টে সিল মারাতে হয়। এটা হতে পারে না। এটার জন্য একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, মিশনে লোকবল বাড়ানো। আমাদের ডিজিটাইলড কিছু করতে হবে। পাসপোর্টের জন্য মিশনে আসতে হবে না। পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতার কাছে পৌঁছে যাবে সঠিক কাগজপত্রসহ।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কারবিষয়ক সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ল
শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইকুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ানো হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক জরুরি সভায় আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত দিন বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির জরুরি সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, এই সুবিধা নিতে হলে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে তাদের ঋণাত্মক ঋণ হিসাব বা অনিরূপিত (আনরিয়ালাইজড) লোকসানের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে। যারা এই পরিকল্পনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দেবে, তারা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাবে।
শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে একেক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা একেক রকম। কারও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বা প্রভিশনিং করতে হবে বেশি, কারও কম। এই বাস্তবতায় শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অতীতে সর্বজনীনভাবে বারবার সময় বাড়ানোর পরও প্রতিষ্ঠানগুলো এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিজে থেকে এই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য শর্ত আরোপ করেছে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সময় বাড়ানো হলেও পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের এই সমস্যা তৈরি হয় মূলত ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর। ওই ধসের পর শেয়ারের ব্যাপক দরপতনের কারণে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া বিপুল ঋণ আর আদায় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার শেয়ারের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করেও পুরোপুরি ঋণ সমন্বয়ের সুযোগ নেই। সে জন্য এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে এত দিন নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ে ছাড় পেয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে এই সময় শেষ হয়। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণাত্মক ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা দেখা দেয়। আবার ঋণ সমন্বয় করতে গিয়ে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রির চাপও তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব সমন্বয়ে আরও সময় চায় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ডিবিএ ও বিএমবিএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এ নিয়ে শেয়ারবাজারের শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা গত মঙ্গলবার বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকও করেন।
বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও লোকসানে থাকা ডিলার হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড়ের দাবি জানিয়েছিলেন।