ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ছয় শর্তে দ্বিতীয় দফা মেয়াদ বাড়িয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়নাধীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ৪ বছর মেয়াদী মেগাপ্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ বছর করা হয়। কিন্তু  ৪০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

এজন্য দ্বিতীয় দফায় ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করে ২০১৮ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধিত এ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আর বৃদ্ধি করা হবে নাসহ ছয় শর্তে এ প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয় কমিশন। এছাড়া এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এসব শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-

(ক) এ প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হবে না

(খ) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পের অনুকূলে বকেয়া অর্থ অতি দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা করতে হবে, বর্ধিত মেয়াদ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে ও নির্মাণ কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে সুষ্ঠুভাবে তদারকি করতে হবে।

(গ) প্রকল্প পরিচালক অনুমোদিত আরডিপিপি অনুযায়ী নির্মাণ কাজ পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী স্টিল সাটারিং, স্যানিটারি সামগ্রী, বৈদ্যুতিক তার ও অন্যান্য সামগ্রী, টাইলস ইত্যাদির গুণগতমান যাচাই করতে হবে। নির্মাণ সাইটে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি, মালামাল ও শ্রমিকের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনগাফিলতি দেখা দিলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।

(ঘ) প্রস্তাবিত বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পের সব প্যাকেজের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। 

(ঙ) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য প্রকল্প থেকে তিনটি দশতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেগুলো যাতে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে না থাকে, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাস্তবতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভবন নির্মাণ করা উচিত হবে। এতে সময় ও সরকারী অর্থের অপব্যয় রোধ করা সম্ভব হবে।

(চ) ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার অনতিবিলম্বে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী আসবাবপত্র, ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, ক্রীড়া সামগ্রী, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং সনাক্ত করার জন্য অমোচনীয় কালি দিয়ে প্রকল্পের নামকরণ করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় ক্রয় করা যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের ইনভেন্টটরি প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। 

প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২৭তম সভায় এ মেগাপ্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পের অধীনে নয়টি ১০তলা ভবন নির্মাণ ও ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ বেশকিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা রাখা হয়। নয়টি ১০তলা ভবনের মধ্যে পাঁচটি আবাসিক হল, দুটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার এবং একটি করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন রয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড.

হারুন-উর-রশিদ আসকারী ২ বছর ২ মাস দায়িত্বে থাকলেও ওই সময়ে বড় কাজগুলোতে হাত দিতে পারেননি। প্রকল্পের অর্ধেক সময়ে মাত্র ৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে ড. আসকারী প্রশাসন।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের পর আবারও কাজ শুরু হয়। তবে কিছুদিন কাজ চলার পর নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার পর কয়েক মাস বিরতি শেষে কাজে ফেরেন ঠিকাদাররা।

মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় সর্বশেষ ৫ মাস ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল দিতে না পারায় ধীর গতিতে চলে নির্মাণ কাজ। ফলে পরিকল্পনা মাফিক কাজের অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পটি শেষ করতে বর্তমানে পুরোদমে কাজ চললেও আরো ২ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল দপ্তর। ফলে সময় বৃদ্ধির জন্য একনেকে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রদবদল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সময়মতো কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন প্রশাসনের অবহেলা ও অদূরদর্শিতাকে দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, “প্রশাসনিক রদবদল, করোনা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। যেহেতু পরিকল্পনা কমিশন থেকে দেড় বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কারণ এরপর আর হয়তো মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। তখন আমরা, বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।”

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. নওয়াব আলী বলেন, “আমরা ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। আবেদন প্রক্রিয়াধীন ছিল। ইউজিসি থেকে একটি টিম সরেজমিনে দেখে গেছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন গৃহীত হয়েছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভবন ন র ম ণ ন শ চ ত করত প রকল প র ব যবস থ শ ষ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ল

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ালো ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর পূর্তির একদিন আগে এ ঘোষণা এলো। আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হয়। এরপর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের জয় পাচ্ছে। দেশের অনেক এলাকা এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে জান্তা বাহিনী এ বছর নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার জন্য একটি প্রহসন হতে পারে এ নির্বাচন। কারণ, সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখতে বহুবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মেয়াদ বাড়ানো পরিস্থিতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে জরুরি অবস্থা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রচার করে বলেছে, সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এখনো আরও অনেক কাজ বাকি আছে। বিশেষ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রয়োজন।

নির্বাচনের জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে জান্তা সরকার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। যদিও তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াইয়ে ক্লান্ত। কারণ, তারা একাধিক ফ্রন্টে সশস্ত্র বিদ্রোহকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মিয়ানমারের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রতিশ্রুতিশীল শক্তি হিসেবে দেখা হলেও এখন তা ব্যাপক চাপে রয়েছে। সামরিক বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং দেশটির জনগণের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ