শান্তর নিরাশ আঁধারে আশার আলো দেখালেন মিরাজ
Published: 29th, January 2025 GMT
হায়দার আলীর চার ছক্কার ঝড় সীমানায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বিসিবির ইনডোরের আউটডোরে ব্যাটিং অনুশীলন শেষে মাঠ দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন। চিটাগং কিংসের জয়ের পরপরই দ্রুত ব্যাট-প্যাড রেখে মাঠের কয়েক চক্কর কাটেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। কিন্তু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। গ্যালারি থেকে শুনতে হয় ‘ভুয়া-ভুয়া’ দুয়োধ্বনি। এর আগে একই কাণ্ডের শিকার চট্টগ্রামে হতে হয়েছিল লিটন কুমার দাসকে।
সাম্প্রতিক সময়ে শান্ত ফর্মে নেই। ফর্মে তো নেই-ই, ফরচুন বরিশাল একাদশে সুযোগ হচ্ছে না তার। অথচ সামনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় আসর। বরিশালের কম্বিনেশনের কারণে শান্ত সুযোগ পাচ্ছে না। শুরুতে সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি। ৫ ম্যাচে রান করেছেন ৫৬। সর্বোচ্চ ৪১। বাকি চারটিতেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। তার ফর্ম নিয়ে রীতিমত হচ্ছে প্রবল সমালোচনা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বেই তিন ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বিপিএলই একমাত্র ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির জায়গা। নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে মিরাজ আশার কথা শোনাতে পারলেন না, ‘‘আমাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় খেলছে। অনেকে ভালো খেলছে। অনেকে ভালো করতে পারছে না। আমার কাছে মনে হয় আরও কিছু জায়গায় ভালো করতে হবে। আত্মবিশ্বাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই প্রতিযোগিতা যদি ভালো করতে পারে, ভালোভাবে শেষ করতে পারে, রান করতে পারে তাহলে ভালো একটি আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের।’’
আরো পড়ুন:
শততম ওয়ানডেতে মিরাজের নেতৃত্বের অভিষেক
প্রস্তুতি ভালো ছিল, দিনটা আমাদের ছিল না: শান্ত
যে আত্মবিশ্বাস পাওয়ার কথা মিরাজের কণ্ঠে সেখান থেকে অনেক দূরে শান্ত। প্লে’ অফ নিশ্চিত করা শান্তর আজও সুযোগ হয়নি ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে। অন্য দলের পরিকল্পনা, রণ কৌশল নিয়ে মিরাজ মন্তব্য করতে চাইলেন না। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলে মনোবল হারাবে তা বলতে দ্বিধা করলেন না, ‘‘দেখেন, আপনি যেটা বললেন সেটা সম্পূর্ণ টিম কম্বিনেশন বা টিমের যারা আছে তারাই ভালো বলতে পারবে। যেহেতু ও ম্যাচ খেলছে না, এটা অবশ্যই একটা আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার। মোরাল ডাউন হবে একটা খেলোয়াড়ের।’’
তবে শান্তকে নিয়ে বেশ আশাবাদী মিরাজ, ‘‘ও এটা কীভাবে নিজেকে মানসিকভাবে সেট করেছে, কিভাবে মানিয়ে নিয়েছে এবং এখান থেকে কিভাবে উন্নতি হবে সেই সিদ্ধান্ত ও-কেই নিতে হবে। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রথম দিকে সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু যে ধরনের খেলায়াড় ওই অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি। কিন্তু আমি আশা করি যে, এখনও অনেক ম্যাচ আছে বিপিএলে। যখন খেলবে, পারফর্ম করবে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে যদি একটু দুইটা রান করতে পারে তাহলে ওরও আত্মবিশ্বাস ভালো থাকবে।’’
২০১৭ সালে সবশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলেছিল। এবার কেমন করবে বাংলাদেশ? এবারও কী সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ? মিরাজ সেই আশাই দেখালেন, ‘‘আমরা তো খেলেছিলাম ২০১৭ সালে সেমিফাইনাল ইংল্যান্ডে। অবশ্যই আশা করি যে সেমিফাইনাল খেলবো।’’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলার পর পাকিস্তানে গিয়ে দুই ম্যাচ খেলবে দল। আসরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মিরাজ বলেছেন, ‘‘দুইটা দুইরকম কন্ডিশন। দুবাইয়ে আমরা যেখানে খেলেছিলাম, ওখানে একটু কন্ডিশনটা অন্যরকম। উইকেটটা অন্যরকম থাকে, ওয়েদার একটু গরম থাকবে, উইকেট অনেক সময় বোলিংও এডভান্টেজ থাকে, ব্যাটিংও থাকে।’’
‘‘রাওয়ালপিন্ডিতে অবশ্যই আমাদের জন্য বড় একটা সুযোগ থাকবে। যেহেতু আমরা পাকিস্তানে দুটা টেস্ট ম্যাচ একই মাঠে খেলেছি। ওই কন্ডিশনটা আমরা জানি, ওখানে উইকেটটা কী রকম আছে। এটা একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে। বিশেষ করে আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে যেহেতু আমি ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলাম ওখানে। উইকেট অনেক ভালো থাকবে। অনেক চ্যালেঞ্জিং থাকবে বোলারদের জন্য। অবশ্যই আমরা বোলাররা ওটা চিন্তা করবো যে কীভাবে ওখানে ভালো করতে পারি।’’- যোগ করেন মিরাজ
ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট
আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।
পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।
এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা
এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও।
রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।
প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”
অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”
অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”
গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”
কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”
স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ