ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
Published: 29th, January 2025 GMT
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, এমন কাজ করা যাবে না।’’
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্র্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোন জাদু বা ম্যাজিক নয় যে, বলব আর হয়ে যাব। এজন্য জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। শুধু তাই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব। আমি প্রতিবারই বলছি, সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, এমন কোন কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’’
আরো পড়ুন:
জামায়াত-বিএনপির মধ্যে কোনো সংঘাত নেই: দুদু
বিএনপি মামলা বাণিজ্য শুরু করেছে: ইব্রাহীম মোল্লা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও গত ১৬ বছর গুম-খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যারা আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। তালিকা করে শহীদ ও আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মানুষকে সংগঠিত করে কীভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয়, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই দেশের প্রতিটি কমবেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। এটি বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ততদিন এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও এই ঈমানের মধ্যে পড়ে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুন-গুম, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপির দ্বারাই হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহীদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।’’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি ৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল। আরেকটি দল মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে।’’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সকল নেতাকর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।’’
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদের জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদের শুধরাতে হবে। দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই, আগামীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না।’’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল প্রতিশোধ নেব। আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এজন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘পলাতক স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের প্রশ্রয়ে কিছু মানুষ ঋণের নামে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকার ব্যাংকগুলোকে আইন ও ব্যাংকিং নীতির আলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ করছে। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ, জনগণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে সরকার কাজ করবে। আমরাও এটা নিয়ে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।’’
তিনি বলেন, ‘‘পলাতক স্বৈরাচারের দলীয় আদর্শের না হওয়ায় লাখ লাখ যুবক চাকরি পায়নি। বিএনপি সেই সকল যুবকদের নিয়ে চিন্তা করছে। পতিত স্বৈরাচারের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পরিবারে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড দেব। যে কার্ডের মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্য প্রতিটি পরিবারের মাঝে যেন পৌঁছে দিতে পারি।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ নারী। নারীদের সুরক্ষার জন্য দলীয়ভাবে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হবে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের নারীরা এখন সচেতন। এখন নারীদের দৃঢ়ভাবে দেশ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘পলাতক স্বৈরাচার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এর পেছনে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের স্বার্থ জড়িত ছিল বলে ধারণা করা যায়। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। কারণ, স্বনির্ভর দেশ গড়তে সুস্থ-সবল নাগরিকের গুরুত্ব অনেক বেশি।’’
‘‘২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, ৫ শতাংশের বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট সরকার কোটাপ্রথার লাগামহীন ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়েছিল। বিএনপি সেটা করবে না। আমি বারবার বলেছি, কোটা নয় মেধার মূল্যায়ন করা হবে। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তরা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা বসে নেই। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করা হবে।’’
৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব।’’
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.
ঢাকা/নাজমুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন র ষ ট র ক ষমত য় ন ত কর ম দ র ব এনপ র স ষড়যন ত র দ শ গঠন র রহম ন ক জ কর র জন য পর ব র ব স কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কখনো বলিনি, আগে নির্বাচন, পরে সংস্কার: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমরা কখনো এ কথা বলিনি যে, আগে নির্বাচন, তার পরে সংস্কার। এটা যদি কেউ বলে, তাহলে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সংস্থার দরকার, সেটা করতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “যারা সংস্কার করতে এসেছেন, তারা জনগণের বাইরে গিয়ে কিছু করলে বিএনপি তা সমর্থন করবে না। জনগণ যেটা চাইবে, আমরা সেটাকেই সমর্থন করব।”
বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা সুশাসনের জন্য ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে। এটাই একমাত্র ব্যবস্থা, যেখানে মানুষের বক্তব্য বিবেচনায় নেওয়া হয়, নির্বাচিত সরকার দেশ চালায়। এই যে আমরা একটা ভয়ে থাকি যে, রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরাচার হয়ে যায়। স্বৈরাচার হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে। সুতরাং, এখানে গণতন্ত্রের কোনো দোষ নেই। গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা, তা না হলে আওয়ামী লীগের মতোই অবস্থা হবে, ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিএনপির সময়ে কখনো ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়নি বা কর্তৃত্ববাদের উত্থান হয়নি।
সংস্কার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশজুড়ে একটা প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, বিএনপি আগে নির্বাচন চায়। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমরাই সংস্কারের প্রবক্তা, আমরাই সংস্কার চেয়েছি।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হিমেল/রফিক