বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিভিন্ন সময়ে শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় বাকৃবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য ছিল সীমাহীন।

তাদের ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপত্ব্যের কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের মর্মান্তিক এসব কালো স্মৃতি স্মরণে বাকৃবির আশরাফুল হক হলে সাময়িকভাবে নির্মিত হয়েছে ‘টর্চার কর্নার’। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের শরীরের জখমের চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। 

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাইজিংবিডির কাছে নির্যাতনের এসব বর্ণনা তুলে ধরেন আশরাফুল হক হলের কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

আশরাফুল হক হলের আবাসিক ছাত্র রিফাত বিন শায়েকুজ্জামান বলেন, ‘২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে ক্লাস করে হল থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ এক সিনিয়র আমাকে গেস্টরুমে নেওয়ার পর আমার সঙ্গে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। একের পর এক লেভেলের ভাইরা ঢুকে, কেনো আমি হল ছেড়েছি, তা জিজ্ঞেস করছে আর লাথি, থাপ্পড় মারে। প্রথম দফা মারের পর দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় আমাকে হলের তৃতীয় তলায় বিশেষ এক পলিটিক্যাল রুমে নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়।”

তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে আমাকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়, প্লাস দিয়ে আঙুল চেপে ধরা হয়। থাপ্পরের এক পর্যায়ে আমার কানের পর্দা ফেটে গিয়ে নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। ওই অবস্থাতেই আমার পরিবারকে কল করতে বলা হয় এবং সামনের নির্বাচনে কাকে ভোট দিবে জিজ্ঞেস করতে বলা হয়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা অমানবিক নির্যাতনের পর সিদ্ধান্ত নেয়, আমাকে হলে রাখা যাবে না। অজ্ঞাত কারণে অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হলেও পরে আর আনা হয়নি।”

কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “১৩ ডিসেম্বর ২০২২ এ সন্ধ্যায় আমাকে গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানতে পারি হলে ছাত্রদল সন্দেহে কয়েকজনকে ধরা হয়েছে এবং তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাকে গেস্টরুম থেকে ২৩৪ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পর প্রথমেই সালমান মোস্তফার থাপ্পড় খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যাই। এরপর আজহার এসে আমার হাঁটুতে সজোরে রডের আঘাত করে।”

তিনি বলেন, “তারা আমার ফোন চেক করে ছাত্রদলের মিথ্যা ট্যাগ দেয়। কার্যত আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। শারীরিক নির্যাতনে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, আমি বমি করি। পরে আমাকে দুই ডোজ ওষুধ খাওয়ার পর আবারো আমাকে ১০-১২ জন থাপ্পড় ও রডের বাড়ি দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। আমি হেলথ কেয়ারে চিকিৎসার জন্য গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠায়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ক্লাস শেষে আবাসিক আশরাফুল হক হলে ফেরার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে মোবাইল তল্লাশি করে। তল্লাশির পর ছাত্রদলের লোকজন আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে কেন এবং রেটিনা কোচিংয়ের পেজে লাইক দেওয়ার কারণ দেখিয়ে শিবিরের সদস্য বলে চিহ্নিত করে। পরে আমাকে সালমান ভাইয়ের রুমে (২৩৬ নম্বর) নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ, আল মামুন এবং দুর্জয় শারীরিকভাবে আঘাত করতে শুরু করে। এ ছাড়াও নুহাশ, অন্তর, মিনহাজুল, অন্তর চৌধুরী গিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে।”

তিনি বলেন, “পরে সালমান কয়েকটি থাপ্পড় দেওয়ার পর আজহার রড দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আমার দুই কানের টিমপ্যানিক মেমব্রেন ফেটে যায়। সাত দিনের মতো বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। কানের অবস্থা এতই খারাপ ছিল, আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অপারেশন করাতে হয়। আমি ঘটনার সুস্থ বিচার চাই এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনু্যায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

রাগবি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, ফুটবলের পর ক্রিকেট—কোন খেলায় নেই তিনি

‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।’

জেমস থমাসের নিশ্চয়ই সুনির্মল বসুর কবিতা পড়া নেই। পড়া থাকলে কবিতার এই লাইনকে খানিকটা ঘুরিয়ে নিজের মতো করে তিনি বলতে পারেন, ‘খেলার ভুবন পাঠশালা মোর, সব খেলার আমি ছাত্র।’

কেন? সে কথা বলতে গিয়ে সবার আগে জানিয়ে রাখা ভালো, ৪২ বছর বয়সী এই ভদ্রলোক এখন নিজে আর খেলেন না। কিন্তু খেলাধুলার জগতে বিভিন্ন ক্লাব বা সংস্থা পরিচালনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর মজাটাও ঠিক এখানেই। নিজে ছিলেন পেশাদার রাগবি খেলোয়াড়। সেখান থেকে পা রাখেন ক্রীড়া শিক্ষকতায়। তারপর ব্যবস্থাপক হিসেবে অ্যাথলেটিকস দিয়ে শুরু করে বক্সিং, জুডো ও জিমন্যাস্টিকস হয়ে এখন ফুটবল দুনিয়ায়। তবে এখানেই থাকছেন না; সামনে তাঁর পা পড়তে যাচ্ছে ক্রিকেটেও।

অর্থাৎ থমাসের পেশাদার কাজকর্ম শেখা বা করার পাঠশালা কোনো নির্দিষ্ট একটি খেলা নয়, বরং খেলাধুলার পুরো জগৎই। আর কে না জানে, যেকোনো কাজে জড়ালেই সেখান থেকে যেমন কিছু না কিছু শেখা যায়, তেমনি বিভিন্ন খেলায় মাঠের বাইরের কাজকর্ম থেকে থমাসও তো কিছু না কিছু শিখছেন!

সেই পথে থমাসের পা এখন ক্রিকেটে পড়ার অপেক্ষায়। ভদ্রলোক আপাতত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পারফরম্যান্স ডিরেক্টর। আগামী জুনে সিটি ছেড়ে ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল ওয়ারউইকশায়ারের পারফরম্যান্স ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেবেন। ওয়ারউইকশায়ার তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেছে, টমাস ‘খেলাধুলার অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় হাইপারফরম্যান্স বিশেষজ্ঞ’

ইংল্যান্ডের নর্থইস্ট থেকে উঠে আসা থমাস রাগবি খেলেছেন লিডসে। ২০০৪ সালে বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পোর্টিং এক্সিলেন্সে শিক্ষক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে থমাস ওয়েলশ অ্যাথলেটিকসে পারফরম্যান্স পাথওয়েজ ম্যানেজারের দায়িত্ব পান। এরপর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন হুইলচেয়ার রাগবির সঙ্গেও নিজেকে জড়ান টমাস। সেখানে হেড অব অপারেশনসের দায়িত্বে ছিলেন।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওয়েলস অ্যামেচার বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনে পারফরম্যান্স ডিরেক্টরের পদ সামলান টমাস। সেখান থেকে ব্রিটিশ জুডো অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দিয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পারফরম্যান্স পাথওয়ের সিনিয়র ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত সেখানে স্পোর্টস কনসালট্যান্সির পদও ধরে রেখেছিলেন থমাস। এর মধ্যেই আবারও অন্য খেলার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন তিনি। এবার ব্রিটিশ জিমন্যাস্টিকসের পারফরম্যান্স ডিরেক্টর, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন থমাস।

ব্রিটিশ জিমন্যাস্টিকসেও ছিলেন জেমস টমাস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নকল করায় নোবিপ্রবির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ শুরু ৪ মার্চ
  • আবার বন্ধ ১২ দেশে সুতা রপ্তানি করা সেই কারখানা
  • খুশিতে বগল বাজাচ্ছেন পুতিন
  • রাগবি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, ফুটবলের পর ক্রিকেট—কোন খেলায় নেই তিনি