ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট
Published: 29th, January 2025 GMT
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের শত শত বাসিন্দারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি সড়ক পুনরুদ্ধারের দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে আটকে পড়া যানবাহন গুলো দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর বিকল্প সড়ক গোলড়া হয়ে সাটুরিয়া দিয়ে চলাচল করলে সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বাসের যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। তবে দফায় দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন বসলেও তারা সড়ক চালুর দাবিতে অনড় রয়েছেন।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে গোলড়া গ্রামের মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং পরে অবরোধ গড়ে তোলেন। তাদের অভিযোগ, সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের একটি শতবর্ষী সড়ক স্থানীয় দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড ও পেয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড বন্ধ করে দেয়। ফলে তাদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা নিয়ে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, সড়কটি পাকা দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় গোড়লা গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কয়েক কিলোমিটার ঘুরে স্কুল কলেজে যেতে হয়। এছাড়া কৃষকের উৎপাদিত ফসল বেচাকেনায় অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। শতবর্ষী সড়কটি দখল করে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের স্বার্থে বন্ধ করে দিয়ে এলাকার মানুষের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
অবরোধকারীদের দাবি, আওয়ামী সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগসাজশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোম্পানি দুটি রাতারাতি মানুষের চলাচল সড়কে পাকা দেওয়াল গড়ে তুলে। ফলে গ্রামবাসী তাদের ন্যায্য পথচলার অধিকার হারিয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না বন্ধ হওয়া সড়কটি পুনরায় খুলে দেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা সড়ক ছাড়বেন না।
এদিকে, অবরোধের কারণে মহাসড়কে আটকে পড়েছে দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সাটুরিয়া থানার ওসি শাহিনুল ইসলাম জানান, গ্রামবাসীরা সকাল ১১টা থেকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে, যার ফলে দুইপাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুত একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে মুষ্ঠি ভিক্ষায় সড়ক সংস্কার
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-মির্জাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ডুবাইল ও গবড়ার সড়কের এক কিলোমিটার সড়কে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।
জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের বার বার অবগত করে মেলেনি সুফল। ফলে দেলদুয়ার, মির্জাপুর ও বাসাইল উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেই দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয়রা পাঁচ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি মুষ্টি ভিক্ষার চাল তুলে সড়কের সংস্কার কাজ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ডুবাইল ও গবড়া গ্রাম দুইটি নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকে। তখন নৌকায় চলাচল করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে গ্রামীণ এই কাঁচা সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ছোট ছোট যানবাহনও চলাচল করতে পারে না। বৃষ্টি হলে কাদা-মাটির রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সড়কের দুর্গতির কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ হলে রোগী নিয়ে যেতে কষ্ট করতে হয়। রাস্তা না থাকায় এলাকার ছেলে-মেয়েদের ভাল জায়গায় বিয়েও হয় না।
বাধ্য হয়ে পাঁচ বছর ধরে দুই গ্রামের মানুষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাপ্তাহিক মুষ্টির চাল তুলছেন। সেই সাথে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে ও উত্তোলন করা মুষ্টির চাল বিক্রি করে প্রায় চার লাখ টাকা জমা হয়েছে। সেই টাকা দিয়েই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়া সড়কটি সচল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এলাকাবাসী।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ জন যুবক ও বৃদ্ধ মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টির চাল তুলছেন। দুর্ভোগ লাঘবে নারী ও পুরুষরা আধা কেজি থেকে দুই কেজি করে চাল দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আবার অনেকেই নগদ অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করছেন।
শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া বলেন, “শুকনা মৌসুমে এই সড়কে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
গৃহবধূ সুরাইয়া বেগম বলেন, “এই সড়ক নিয়ে দেলদুয়ার, মির্জাপুর ও বাসাইল উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়ক হচ্ছে স্বস্তিতে যাতায়াতের মাধ্যম। কিন্তু আমাদের এই সড়ক ভোগান্তির অন্যতম কারণ।”
হেলাল মিয়া বলেন, “গ্রামীণ সড়ক যে অবহেলিত থাকে এই সড়কটি তার জলন্ত উদাহারণ। এই সড়কটি সব সময়ই আমরা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও অনেক কাজ থাকে, সেই কাজ করতে এই সড়কটি বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হয়।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য রাশেদ বেগম বলেন, “সড়কটিতে প্রতি বছরই ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন করা হয়। এবছরও উন্নয়ন করা হবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
দেলদুয়ারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ বলেন, “দুর্ভোগ লাঘবে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও পিআইও কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
মির্জাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে সড়কটির বিষয়ে অবগত হয়েছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/কাওছার/এস