ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় দুই পক্ষের কেউই এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দেননি। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান। 

আহতদের মধ্যে রয়েছেন- ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল, রিয়াজ, শ্রমিক দল নেতা পারভেজ, যুবদল নেতা শাহীন, সুজন, হুদন, যুবদল নেতা আলা উদ্দিন আলো, নুরুল হক সোহেল, মোহাম্মদ সাঈদ, মোশাররফ, রুবেল, নেজাম মেম্বার, শহিদ ও শাহাদাতসহ অন্তত ২০ জন। 

স্থানীয় এবং দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় একটি এতিমখানায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ভাই ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করতে যান। তার পার্শ্ববর্তী স্থানে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও পরে মারামারি শুরু হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেন নেতাকর্মীরা।

দাগনভূঞা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির বলেন, “করিমপুরে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলুর বাড়ির পাশে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। তার পাশেই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও পরে মারামারি শুরু হয়। সেখানে পুলিশের সামনেও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের লোকজন পারভেজকে বেধড়ক মারধর করে সিএনজি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদেরও হেনস্তা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।” 

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, “একটি অরাজনৈতিক আয়োজনে কম্বল বিতরণের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতদিন পর তারা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। পরে তাদের অস্ত্র আর বোমাবাজি দেখে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে থানায় চলে আসে। ঘটনাস্থলে কবির আহম্মদ ডিপলু, ফটিক, বাবলু, রিয়াদসহ তাদের লোকজন আমাদের থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও মারধর শুরু করে। তারা আমাদের তিনটি মোটরসাইকেল, ২০-২৫টি মোবাইল ফোন ও আমার স্ত্রীর পাঁচ ভরি স্বর্ণের একটি ব্রেসলেট নিয়ে গেছে। ১৫-২০ জনকে মারধর করে আহত করেছে। এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” 

কমিটির দ্বন্দ্বের বিষয়ে আকবর হোসেন বলেন, “যে দলের নেতারা কেন্দ্রের কথা মানে না তারা দলের প্রতি কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার বিএনপির এই কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রদল ও যুবদল নেতা। তারা বিএনপির কেউ নয়।” 

জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক বলেন, “উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা বলেছেন। তিনিই দাগনভূঞার রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন। যারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা করেছে তাদেরকে তিনি অর্থের বিনিময়ে অবৈধ কমিটিতে জায়গা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কখনো কোনো প্রকার চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি চাঁদাবাজ বলেছেন।” 

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলু বলেন, “অনুষ্ঠানে আমি দাওয়াত পাইনি বা অবগতও ছিলাম না। আমি দুই পক্ষকে শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করেছি। সেখানে আগে থেকেই প্রশাসনের লোকজন ছিলেন। হামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” 

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে দাগনভূঞা বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের মারধরের প্রতিবাদে ছাত্রদল নেতা ফটিকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। ওইসময় বাজার এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। 

এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, “একই স্থানে দুই পক্ষের কর্মসূচির বিষয়ে অবগত হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে থানায় তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু বিকেলে সেখানে তারা দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।” 

তিনি আরো বলেন, “আগামী ৩১ জানুয়ারি সিলোনীয়া স্কুল মাঠে দু’পক্ষ আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম করবে বলে জানতে পেরেছি। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছি। দুই পক্ষই প্রোগ্রাম করার বিষয়ে অনড়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হবে।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/ইমন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক আকবর হ স ন য বদল ন ত ন ত কর ম ছ ত রদল র রহম ন য বদল র স ঘর ষ দল ন ত ম রধর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চলনবিলের খেজুরের গুড়

চলনবিল অঞ্চলে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগেই খেজুর গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন। তাদের সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে আসা গাছিরাও চলনবিল অঞ্চলে ভালো মানের খেজুর গুড় তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছেন বছরের পর বছর। মৌসুমে ভালো আয়-রোজগারও করছেন। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মনিকগ্রাম ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জামরুল ইসলাম (৪৩)। তাঁর বাবা আকবর আলী মারা গেছেন। জীবিত অবস্থায় তিনিও ছিলেন ওই এলাকার পরিচিত গাছি। আকবর আলী চোখের পলকে উঠে যেতে পারতেন যে কোনো উঁচু খেজুর গাছে। তৈরি করতেন সুস্বাদু পাটালি, বাটি, নালি ও মসলা গুড়। বাবার কাছেই অল্প বয়সে গাছিয়া হওয়ার হাতেখড়ি নেন জামরুল। রপ্ত করেছেন বাবার মতোই ভালো মানের গুড় তৈরির কলাকৌশল। এ কাজটিকে পেশা হিসেবে নিয়ে তিনিও পার করেছেন প্রায় এক যুগ। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী। 
রাজশাহী অঞ্চলে শীতকালে তেমন কাজ থাকে না। আয়-রোজগারের আশায় পুরো সময়টাই চলনবিলের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সেরাজপুর, ওয়াশিন, কাস্তা, বেত্রাশিন গ্রামে গুড় তৈরির কাজ করেন তিনি। এ বছর শীত মৌসুম শুরুর আগেই কার্তিক মাসে প্রায় ২০৭টি খেজুর গাছ টাকা নয়, গুড়ের বিনিময়ে লিজ নিয়ে দিব্যি বাবার মতোই নজরুল ইসলাম ও মকবুল হোসেন নামের অভিজ্ঞ দুই গাছিকে সঙ্গী করে তৈরি করছেন সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের খেজুরের গুড়। জামরুলের গুড় কিনতে এলাকার বাইরে থেকেও লোকজন আসেন তাড়াশের সেরাজপুর গ্রামের কৃষক সাত্তারের বাড়ির উঠানে গেঁড়ে বসা অস্থায়ী আস্তানায়। মৌসুমি এ কাজে যে আয় হয় তাতেই বছরের কয়েক মাস খাওয়া-পরাসহ সাংসারিক খরচ মেটাবেন জামরুলসহ অন্য গাছিরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে এবার দুই শতাধিক গাছি চলনবিল এলাকায় এসেছেন।
তাড়াশের পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার দোবিরগঞ্জ গ্রামে প্রায় ৩০০ খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গুড় তৈরি করছেন নাটোর জেলার বাগাতীপাড়া উপজেলার পাকা গ্রামের আবুল কাসেম। এ কাজের সঙ্গী স্ত্রী ও দুই কিশোর ছেলে। একটু সচ্ছলতার মুখ দেখতে প্রায় সাড়ে চার মাসের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হচ্ছে গাছিদের। যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার তৈরি খেজুরের গুড় বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব গাছি মনছের সরদার জানান, কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে ধারালো ছেনি, বাটাল কিনে ও শান দিয়ে, রসের হাঁড়ি বা ডুকি, তাওয়া বা কড়াই, হরপাট, হাদা বা দা, মাটির তৈরি বাটি, খাদা, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বিছানাপত্র ও নানা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে আসেন চলনবিলের কোনো এক গৃহস্থের বাড়িতে। সেখানে বানান থাকার মতো টংঘর। প্রথমে গাছে উঠে নিজের নিরাপত্তার জন্য মোটা রশি বা তাদের ভাষায় শক্ত করে ডোড়া বেঁধে লোহার তৈরি দা কিংবা ছেনি দিয়ে লিজ নেওয়া গাছের অপ্রয়োজনীয় ডাল-পাতা ছেঁটে ফেলেন। তারপর রস বের করতে নিখুঁতভাবে ধারালো বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের উপরিভাগে অল্প অল্প করে গাছিদের ভাষায় কপালি বা কোটর কাটতে থাকেন। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহেই রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। এর আগেই মাটির বড়সড় আখা বা চুলা, জ্বালানি হিসেবে মরা ডালপালা, খড় কিংবা বর্তমান সময়ে গার্মেন্টসের ঝুট সংগ্রহ করে রাখতে হয়। রস এলেই শুরু হয় গুড় তৈরি।
কাসেম গাছি জানান, গাছিরা বেলা ১১টার দিকে খাবার খেয়েই রসের জন্য ছেনি-বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের কপালি কাটতে গাছে উঠে যান। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটে একেকটি গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলাতে পারেন তারা। এভাবে বিকেলের মধ্যেই গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলানো শেষ করে ফেরেন টংঘরে। পরে রান্না করে সন্ধ্যার পরপরই খাবার খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে যান। আবার রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে জেগে একেকটি খেজুর গাছ থেকে রসভরা হাঁড়ি নামিয়ে আনার কাজ শুরু করেন; যা ভোর হওয়ার মধ্যে শেষ করতে হয়। পড়ে আখা বা চুলায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় কড়াই বা তাওয়ায় মণ পাঁচেক ওজনের রস ঢেলে শুরু হয় চুলায় জ্বাল দেওয়া। একসময় রসের জ্বাল দেওয়া পাত্রের রসে বলক উঠতে থাকে। তখন রসের ফেনা ফেলে দেওয়া, কাঠের তৈরি লম্বা হাতলের সাপরপাট দিয়ে অবিরাম নাড়ানাড়ি চলতে থাকে। এরপর গুড়ের রং এলে তা গাঢ় হওয়া পর্যন্ত রস চুলায় জ্বাল দেন। পাশাপাশি সেখান থেকে অল্প পরিমাণ গাঢ় গুড় নিয়ে গরম তাওয়ায় সারপাট দিয়ে মলে মলে তৈরি হয় গুড়ের বীজ। সে বীজ পুরো তাওয়ায় রাখা গুড়ে মিশিয়ে দিয়ে পাটালি বা বাটি আকারের পাত্রে রেখে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে তা শক্ত হয়ে গেলে হয় পরিপূর্ণ পাটালি খেজুর গুড়। তখন পাত্র থেকে তুলে কাগজ বা প্লাস্টিকের কার্টনে ভরে সে গুড় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। নালি বা ঝোলা গুড় তৈরিতে গুড়ের বীজ মেশাতে হয় না। 
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চলনবিল এলাকায় চাঁচকৈড়, মীর্জাপুর, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, সলঙ্গা, নিগাছি, কাছিকাটা, সাইকোলাসহ ১৫ থেকে ২০টি হাটে সাপ্তাহিক হাটবারে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার গুড় বিক্রি হয়। তা থেকে যে আয় আসে তাতে গাছি বা কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ার ফুটপাত থেকে অভিজাত রেস্তোরাঁ—সবখানেই বাহারি ইফতারির পসরা
  • ‘বিতর্ক সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে শক্তি দেয়’
  • লক্ষ্মীপুরে যুবদলের কমিটি ঘোষণা, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সংবাদ সম্মেলন
  • চলনবিলের খেজুরের গুড়
  • মা-বাবার পাশে শায়িত নোমান