বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত বান্দরবান জেলা। এই জেলা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়েছে পাহাড়, ঝরনা, নদী। শহুরে কোলাহল ছেড়ে বান্দারবানে পৌঁছালে প্রকৃতি আর সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ভ্রমণকারীর মনে অবারিত শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। সম্প্রতি সহকর্মীদের সঙ্গে উপভোগ করে এলাম নীলাচলের নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত এবং নীলগিরি কুয়াশায় মোড়া ভোরে ভাসমান মেঘের খেলা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।
শুরুতেই আমরা গিয়েছিলাম নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবান শহরের কাছেই অবস্থিত এই পাহাড়ি স্থানটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হয় পৃথিবী হাতের মুঠোয়। সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। আকাশে রঙের খেলা, কমলা আর লাল রঙের অপূর্ব মিশ্রণ। এ সময় বাতাসে এক ধরনের প্রশান্তি। দূর পাহাড়ের সারি আর নীলাচলের চারপাশে মেঘের আনাগোনা আমাদের মুগ্ধ করে। ‘ইকোসেন্স’ নামক একটি স্পটে বসে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই স্বর্গীয়। প্রকৃতির এই অনবদ্য দৃশ্য জানিয়ে দেয় জীবন কতটা সুন্দর ও উপভোগ্য।
এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল নীলগিরি, যা বান্দরবানের সবচেয়ে উঁচু পর্যটন কেন্দ্র। পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আমাদের ভ্রমণকে আরও দারুণ করে তোলে। নীলগিরির চূড়ায় পৌঁছে মেঘের ভেলায় ভেসে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। মনে হলো যেন আকাশের কাছে চলে এসেছি। হিমেল হাওয়া আর মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথটা অসাধারণ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে যেতে যেতে চোখে পড়ে পাইন গাছের সারি। যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ঢেউ সমুদ্রের মতো দুলছে। ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসা প্রকৃতির মিষ্টি গন্ধ আর সূর্যের আলোয় ঝলমলে পাহাড়ি গ্রামের দৃশ্য এক অন্যরকম শান্তি দেয়। এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরল জীবনযাত্রা আরও মুগ্ধ করে।চিম্বুকের সৌন্দর্য শুধু চোখ নয়, মনও ছুঁয়ে যায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করাই চিম্বুক ভ্রমণের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।
সবশেষে আমরা যাই সাঙ্গু নদীর তীরে। পাহাড়ি স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ ছিল পুরো সফরের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ। পাহাড়ি নদীর শীতল স্রোতে ভেসে চলার সময় মনে হলো প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। নদীর দুই পাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ি গ্রামের চিত্র আর নদীর বয়ে চলার মৃদু শব্দ আর নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর কর্মব্যস্ততা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমরা ছোট্ট নৌকায় নদীতে ভেসে প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করি। সাঙ্গুর মায়াবী সৌন্দর্য যেন মনকে গভীর প্রশান্তি এনে দেয়।
এই ভ্রমণ শুধু পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এটি ছিল সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা আর বন্ধনের মুহূর্ত তৈরি করারও সুযোগ। বান্দরবানের এই সৌন্দর্যময় ভ্রমণ আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে যে প্রশান্তি, তা আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন ভ রমণ উপভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৪ সালে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রী এসেছে ১ কোটি ৮৭ লাখ, বেড়েছে ৯%
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এখন বিশ্বের অন্যতম বহুজাতিক শহর। প্রতিবছরই এই শহরে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের আগমন বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে দুবাই শহরে ১৮ দশমিক ৭২ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৮৭ লাখ আন্তর্জাতিক যাত্রী এসেছেন।
দুবাইয়ের অর্থনীতি ও পর্যটন বিভাগের সূত্রে গালফ নিউজ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে তুলনায় ২০১৪ সালে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৯ শতাংশ। এই সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হিসেবে বলা হয়েছে, দুবাই শহরের কৌশলগত বিনিয়োগের সুযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বৈশ্বিক নানা সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি।
আরব আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুবাই শহরের এই পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো দুবাই ইকোনমিক এজেন্ডা ৩৩। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুবাই শহরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অবকাশ যাপনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। বিশেষ করে দুবাইয়ের আবাসন খাত বিশ্বের ধনীদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিশ্বের প্রায় সব সেলিব্রিটি এখন দুবাই শহরে বাড়ি কিনেছেন।
দুবাই শহরে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন বৃদ্ধির সঙ্গে হোটেলের ধারণক্ষমতা বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দুবাই শহরে ৮৩২টি হোটেলে ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৬টি কক্ষ ছিল। এই শহরের হোটেলগুলোর গড়পড়তা কক্ষ বুকিংয়ের হার ৭৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগপ্রত্যাশী নীতির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটি আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য অনেকটা দরজা খুলে বসে আছে। দুবাই শহরে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা থাকলেই তিনি সেখানে বাড়ি কিনতে পারেন। এর বাইরে আর কিছু খোঁজে না আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ। সে কারণে দুবাই এখন সাধারণ বহুজাতিক নয়, বরং তা বিদেশিদের শহর হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মিলিয়নের বেশি বা ৩০ লক্ষাধিক মানুষের দুবাই শহরে আমিরাতিরা চূড়ান্ত সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে, তারা এখন মাত্র ৮ শতাংশ।
ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির হিসাব অনুযায়ী, দুবাইয়ে সম্পত্তির বাজারের আকার ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ আছে বিদেশি মালিকানায়। সার্বিকভাবে আবাসন খাতের বিদেশি মালিকের হার এর বেশিও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুবাইয়ে বিদেশিদের মালিকানাধীন সম্পত্তির মূল্য অন্তত ১৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। দুবাইয়ের অফশোর সম্পত্তির বাজার ব্যাপ্তির দিক থেকে এখন লন্ডনের দ্বিগুণের বেশি, যদিও দুবাইয়ের মোট জনসংখ্যা লন্ডনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি।