কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী শিমা আক্তারের ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিমার হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন তিনি। টাকার অভাবে এ মেধাবী শিক্ষার্থীর ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।

শিমা আক্তার বলেন, ‘‘মেডিকেলে পড়ব সেই স্বপ্ন ছোট থেকেই ছিল। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য চূড়ান্ত হলেও টাকার অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছিল। পরে জেলা প্রশাসন ও কমলনগর উপজেলা প্রশাসন ভর্তির জন্য আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে। যেভাবে সবার সহযোগিতা পেয়েছি, একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে আমিও অন্যদের সহযোগিতা করব।’’

শিমার মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘‘দুই ছেলে কৃষিকাজসহ দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। অভাবের সংসারে টানাপোড়নের মাধ্যমে শিমাকে পড়ালেখা করিয়েছি। সে এখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবে। আমি চাই, সেও যেন ভবিষ্যতে অন্যের উপকারে এগিয়ে আসে।’’

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী শিমা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছিল। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। প্রাথমিকভাবে ভর্তিসহ আনুসাঙ্গিক খরচের জন্য আমরা তাকে সহায়তা করেছি। ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজন জেলা প্রশাসন ও কমলনগর উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে। শুধু শিমার ক্ষেত্রেই নয়, জেলার প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষাজীবনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য যা প্রয়োজন জেলা প্রশাসনের সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’’

শিমা আক্তার লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালীয়া গ্রামের আলী আহমেদের মেয়ে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে শিমা পঞ্চম।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি শিমা। এবার মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪৩১৬তম স্থান অর্জন করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

ঢাকা/লিটন/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ড ক ল কল জ র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দিনে খাবারের দোকান বন্ধ রাখতে হুঁশিয়ারি, দুর্ভোগ

রমজানের ‘পবিত্রতা’ রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব জায়গায় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারে রমজানে দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেই ৩ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দিয়ে নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় বণিক সমিতি। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত  বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ছেংগারচর পৌর সমবায় সমিতি। আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে।

নোটিশে সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান লস্করের স্বাক্ষর রয়েছে। একই রকম আদেশ জারি করেছে উপজেলার সুজাতপুর বাজারের বণিক সমিতি। তবে এই বাজারে খাবারের দোকান খোলা রাখলে জরিমানা হবে ১ হাজার টাকা। 

ছেংগারচর  পৌর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকানগুলো বন্ধ। চর অয়েস্টার থেকে ছেংগারচর বাজারে চিকিৎসা নিতে আসা রহমত মিয়া (৬৫) খাবার খেতে গিয়ে দেখেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। তিনি বলেন, রোগীর জন্য এটা খুব কষ্টকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্তোরাঁ ও চা ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ। এবার ঈদ করা তাদের জন্য কষ্টকর হবে। ছেংগারচর পৌর বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল মান্নান দোকান বন্ধের আদেশ এবং জরিমানার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘বিষয়টি জানি না। বণিক  সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব।’

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি ও হাজী শরীয়তুল্লাহর বংশধর পীরজাদা হানজালা রমজান মাসে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রমজান শুরুর আগে তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  ভিডিওতে হানজালাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজানের হেফাজত করা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ জন্য রমজান মাসকে কেন্দ্র করে শিবচরের ১৯টি ইউনিয়নে হাজী শরীয়তুল্লাহ সমাজকল্যাণের লোকজন কাজ করবে। এটা বাংলাদেশ, এটা ভারত নয়, মনে রাখতে হবে। রমজান মাসে সকালে চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ খোলা থাকবে– এটা হতে পারে না। তার সঙ্গে এটা হাজী শরীয়তুল্লাহর মাটি। এখানে এ কাজ হতে পারে না, হতে দেওয়া হবে না।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আপনাদের দোকান দিনে বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাদের নেতৃবৃন্দ দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হবে।’ তিনি নারীদের ‘বেপর্দায়’ বাজারে ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে হানজালা সমকালকে বলেন, ‘রমজান সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে যদি কেউ দিনে চা-সিগারেট বা অন্য কিছু খায়, বিষয়টা অনেক দুঃখজনক।’ এই ঘোষণায় অন্য ধর্মের মানুষরা বিপাকে পড়বেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য ধর্মের যারা আছেন, তারা তাদের মতো করে চলবেন, তাদের মতো করে খাবেন। আমার বার্তা ছিল মুসলমানদের প্রতি। তারা যেন এ মাসে বেহায়াপনা না করেন।’ বেহায়াপনা বলতে কী বুঝিয়েছেন তা জানতে চাইলে বলেন, অন্যান্য মাসে চায়ের দোকানে আড্ডা কিংবা বেহায়াপনা চলে। এটা বন্ধে কথা বলেছি।

এ বিষয়ে শিবচরের ইউএনও পারভীন খানম বলেন, কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করেননি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মতলব ও শিবচর প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ