ভারতে মহাকুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে ১৫
Published: 29th, January 2025 GMT
ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপতে মহাকুম্ভ মেলায় পদদলনের শিকার হয়ে নিহত বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মৌনী অমাবস্যায় ‘অমৃত স্নান’ করার হুড়োহুড়িতে গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী— তিন নদীর সঙ্গমে বুধবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই পুণ্যার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আচমকা ধাক্কাধাক্কি শুরু হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে আটকে পড়েন অনেকে। দুর্ঘটনার পর পরই উদ্ধার কাজ শুরু হয়। নিহত ও আহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
মেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেককেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। সংখ্যাটা ১৫ এর বেশি হতে পারে।
ত্রিবেণী সঙ্গমে মৌনী অমাবস্যায় স্নান করতে দূরদূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেছিলেন মহাকুম্ভে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রয়াগরাজে ভিড় বাড়তে থাকে। প্রশাসনের তরফে বার বার ঘোষণা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে মেলা প্রাঙ্গণের অনেক ব্যারিকেড ভেঙে গিয়েছে।
মঙ্গলবার মাঝরাত থেকেই বহু পুণ্যার্থী ত্রিবেণী সঙ্গমে ভিড় করতে শুরু করেন। রাত ২টার দিকে ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের কাছে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে মেলার প্রশাসন জানায়।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি কুম্ভমেলায় আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। ১৯ নম্বর সেক্টরে গীতা প্রেসে প্রথম আগুন লাগে। এরপর সেখান থেকে আশপাশের ৫০টি তাঁবুতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, মহাকুম্ভ উপলক্ষে প্রয়াগরাজে এই মুহূর্তে কোটি কোটি পুণ্যার্থীর ভিড়। বিস্তীর্ণ মেলাপ্রাঙ্গণকে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে নজরদারি চালাচ্ছে প্রশাসন। জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সর্বক্ষণ মোতায়েন রয়েছেন দমকলকর্মী। অগ্নিকাণ্ডের পর পদপিষ্টের ঘটনা— কুম্ভমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ
রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।
এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।
গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।
কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’