অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত খুব আইনসম্মত হয়নি: অধ্যাপক তানজীম
Published: 28th, January 2025 GMT
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে, সেটি ‘খুব আইনসম্মত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান। তিনি বলেন, ‘এভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া তো খুব আইনসম্মত হয়নি। ঘোষণা দিয়ে কি অধিভুক্তি বাতিল করা যায়? এটা একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হতে হবে, তারপর সিন্ডিকেটে আসতে হবে। এগুলো কিছুই হয়নি।’
বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে সমকালকে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল ইউজিসিতে যান। অধ্যাপক তানজীমউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় ইউজিসির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় না নিয়ে হুট করে নেওয়ায় ইউজিসি থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং সাত কলেজের সমস্যা ও উত্তরণের পথ জানতে চাওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, সিলেবাস, একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন, আলাদা অফিস করে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
বুধবার রাতে অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পরবর্তী কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন হবে এসব বিষয়ে ইউজিসির ভাবনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত। এখানে ইউজিসি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে এটি যেহেতু অধিভুক্ত করা হয়েছে ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এটিকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, যে সংকট তৈরি হয়েছে এটা একান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট। এটা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ওরা যখন ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে তখন কি ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করেছে? কিংবা যখন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করেছে? ইউজিসি এখানে কী করবে?’
ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো সিদ্ধান্ত ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করে করেনি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার। এটা তো তাদের অধিভুক্ত। ভর্তি কার্যক্রম তো ইউজিসির দায়িত্ব নয়।
তানজীম উদ্দীন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেটা ভিন্ন কথা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ আদেশ দ্বারা পরিচালিত। এখানে ইউজিসির কোনো রুল নেই। আইনগতভাবে হস্তক্ষেপ করার সুযোগই নাই।
তিনি বলেন, তাদের একাডেমিক কাউন্সিল আছে, সিন্ডিকেট আছে। এভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া তো খুব আইনসম্মত হয়নি, ঘোষণা দিয়ে কি অধিভুক্তি বাতিল করা যায়? এটা তো একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হতে হবে। তারপর সিন্ডিকেটে আসতে হবে। এগুলো কিছুই হয়নি। এটা ঘোষণা দিয়ে বাতিল করলো। এটা তো যথার্থ হলো না।
অধ্যাপক তানজীম বলেন, চারটা ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে ঘোষণা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট বাতিল করে দিতে পারব? অধিভুক্তির পরে তো এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ, ফলে ইউনিভার্সিটি সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তো প্রপার পদ্ধতিতে হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেছেন- সিদ্ধান্তটি একাডেমিক কাউন্সিল-সিন্ডিকেটে অবহিত করা হবে, এমনটি জানালে অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান বলেন, অবহিত করা হবে এটা যথেষ্ট? তাহলে যে উপায়ে অধিভুক্ত করা হলো সে একই উপায়ে বাতিল করলাম। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, কোনো কিছু বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এটার বৈধতার জন্য অবহিত করব, এটা কি আইনসম্মত হলো?
প্রসঙ্গত, সোমবার ঢাবি উপাচার্যের সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ, তিনজন ডিনসহ কলেজগুলোর অধ্যক্ষের সঙ্গে জরুরি সভায় অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এটি একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউজ স স ত কল জ ব ত ল কর ইউজ স র
এছাড়াও পড়ুন:
অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত খুব আইনসম্মত হয়নি: অধ্যাপক তানজীম
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে, সেটি ‘খুব আইনসম্মত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান। তিনি বলেন, ‘এভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া তো খুব আইনসম্মত হয়নি। ঘোষণা দিয়ে কি অধিভুক্তি বাতিল করা যায়? এটা একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হতে হবে, তারপর সিন্ডিকেটে আসতে হবে। এগুলো কিছুই হয়নি।’
বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে সমকালকে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল ইউজিসিতে যান। অধ্যাপক তানজীমউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় ইউজিসির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় না নিয়ে হুট করে নেওয়ায় ইউজিসি থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং সাত কলেজের সমস্যা ও উত্তরণের পথ জানতে চাওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, সিলেবাস, একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন, আলাদা অফিস করে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
বুধবার রাতে অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পরবর্তী কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন হবে এসব বিষয়ে ইউজিসির ভাবনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত। এখানে ইউজিসি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে এটি যেহেতু অধিভুক্ত করা হয়েছে ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এটিকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, যে সংকট তৈরি হয়েছে এটা একান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট। এটা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ওরা যখন ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে তখন কি ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করেছে? কিংবা যখন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করেছে? ইউজিসি এখানে কী করবে?’
ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো সিদ্ধান্ত ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করে করেনি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার। এটা তো তাদের অধিভুক্ত। ভর্তি কার্যক্রম তো ইউজিসির দায়িত্ব নয়।
তানজীম উদ্দীন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেটা ভিন্ন কথা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ আদেশ দ্বারা পরিচালিত। এখানে ইউজিসির কোনো রুল নেই। আইনগতভাবে হস্তক্ষেপ করার সুযোগই নাই।
তিনি বলেন, তাদের একাডেমিক কাউন্সিল আছে, সিন্ডিকেট আছে। এভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া তো খুব আইনসম্মত হয়নি, ঘোষণা দিয়ে কি অধিভুক্তি বাতিল করা যায়? এটা তো একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হতে হবে। তারপর সিন্ডিকেটে আসতে হবে। এগুলো কিছুই হয়নি। এটা ঘোষণা দিয়ে বাতিল করলো। এটা তো যথার্থ হলো না।
অধ্যাপক তানজীম বলেন, চারটা ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে ঘোষণা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট বাতিল করে দিতে পারব? অধিভুক্তির পরে তো এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ, ফলে ইউনিভার্সিটি সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তো প্রপার পদ্ধতিতে হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেছেন- সিদ্ধান্তটি একাডেমিক কাউন্সিল-সিন্ডিকেটে অবহিত করা হবে, এমনটি জানালে অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান বলেন, অবহিত করা হবে এটা যথেষ্ট? তাহলে যে উপায়ে অধিভুক্ত করা হলো সে একই উপায়ে বাতিল করলাম। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, কোনো কিছু বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এটার বৈধতার জন্য অবহিত করব, এটা কি আইনসম্মত হলো?
প্রসঙ্গত, সোমবার ঢাবি উপাচার্যের সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ, তিনজন ডিনসহ কলেজগুলোর অধ্যক্ষের সঙ্গে জরুরি সভায় অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এটি একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।