রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে, সেটি ‘খুব আইনসম্মত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান। তিনি বলেন, ‘এভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া তো খুব আইনসম্মত হয়নি। ঘোষণা দিয়ে কি অধিভুক্তি বাতিল করা যায়? এটা  একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হতে হবে, তারপর সিন্ডিকেটে আসতে হবে। এগুলো কিছুই হয়নি।’

বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে সমকালকে এসব কথা বলেন তিনি।  এর আগে সকালে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল ইউজিসিতে যান। অধ্যাপক তানজীমউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় ইউজিসির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় না নিয়ে হুট করে নেওয়ায় ইউজিসি থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং সাত কলেজের সমস্যা ও উত্তরণের পথ জানতে চাওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, সিলেবাস, একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন, আলাদা অফিস করে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরা হয়।  

বুধবার রাতে অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পরবর্তী কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন হবে এসব বিষয়ে ইউজিসির ভাবনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত। এখানে ইউজিসি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে এটি যেহেতু অধিভুক্ত করা হয়েছে ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এটিকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।  

তিনি বলেন, যে সংকট তৈরি হয়েছে এটা একান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট। এটা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ওরা যখন ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে তখন কি ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করেছে? কিংবা যখন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করেছে? ইউজিসি এখানে কী করবে?’

ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো সিদ্ধান্ত ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করে করেনি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার। এটা তো তাদের অধিভুক্ত। ভর্তি কার্যক্রম তো ইউজিসির দায়িত্ব নয়।   

তানজীম উদ্দীন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেটা ভিন্ন কথা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ আদেশ দ্বারা পরিচালিত। এখানে ইউজিসির কোনো রুল নেই। আইনগতভাবে হস্তক্ষেপ করার সুযোগই নাই।  

তিনি বলেন, তাদের একাডেমিক কাউন্সিল আছে, সিন্ডিকেট আছে। এভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া তো খুব আইনসম্মত হয়নি, ঘোষণা দিয়ে কি অধিভুক্তি বাতিল করা যায়? এটা তো  একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হতে হবে। তারপর সিন্ডিকেটে আসতে হবে। এগুলো কিছুই হয়নি। এটা ঘোষণা দিয়ে বাতিল করলো। এটা তো যথার্থ হলো না।

অধ্যাপক তানজীম বলেন, চারটা ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে ঘোষণা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট বাতিল করে দিতে পারব? অধিভুক্তির পরে তো এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ, ফলে ইউনিভার্সিটি সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তো প্রপার পদ্ধতিতে হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেছেন- সিদ্ধান্তটি একাডেমিক কাউন্সিল-সিন্ডিকেটে অবহিত করা হবে, এমনটি জানালে অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান বলেন, অবহিত করা হবে এটা যথেষ্ট? তাহলে যে উপায়ে অধিভুক্ত করা হলো সে একই উপায়ে বাতিল করলাম। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তিনি আরও বলেন, কোনো কিছু বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এটার বৈধতার জন্য অবহিত করব, এটা কি আইনসম্মত হলো?

প্রসঙ্গত, সোমবার ঢাবি উপাচার্যের সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ, তিনজন ডিনসহ কলেজগুলোর অধ্যক্ষের সঙ্গে জরুরি সভায় অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এটি একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউজ স স ত কল জ ব ত ল কর ইউজ স র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ