ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির করছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটিসহ ডাল, চিনি ও সার আমদানির কয়েকটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চাল, চিনি, মসুর ডাল, সার ইত্যাদি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। রোজার আগে থেকে শুরু করে রোজা শেষ হওয়া পর্যন্ত এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে বাজারের পর্যবেক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য অধিদপ্তরের আওতায় ভিয়েতনাম থেকে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে এক লাখ টন আতপ চাল আমদানি করা হচ্ছে। ভিয়েতনামের ভিয়েতনাম সাউদার্ন ফুড করপোরেশন থেকে এ চাল কিনতে ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা (সিডি ভ্যাট ব্যতীত)। প্রতি টন চালের দাম পড়বে ৪৭৪ দশমিক ২৫ ডলার। খাদ্য মজুত বাড়িয়ে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে কয়েক মাসে ভারত ও পাকিস্তান থেকে বেশ কিছু পরিমাণ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবার ভিয়েতনাম থেকেও আসছে চাল। 
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির সম্প্রতি অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এর আওতায় এসব চাল আমাদানি করা হচ্ছে। দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 
এদিকে গতকালের বৈঠকে ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এই ডিজেল আমদানির ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ ডলার।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৬ সাল থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। পাইপলাইন নির্মাণের আগে এনআরএল থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পরে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য ১০ হাজার টন চিনি এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ১১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ১০ হাজার টন চিনি (৫০ কেজির বস্তায়) কেনা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চিনির দাম ধরা হয় ১১৫ টাকা ৪২ পয়সা। 
এদিকে সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবে শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এই মসুর ডাল কেনার বিষয়টিও অনুমোদন পায়। প্রতি কেজি ৯৮ টাকা ৪৫ পয়সা দরে এ ডাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৯৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৫০ টনের।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি টন টিএসপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৪৪০ ডলার।
এর আগে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে টাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাক সেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি অধিকতর যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে পরবর্তী সভায় আবার উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড জ ল আমদ ন চ ল আমদ ন ল আমদ ন র হ জ র টন র আওত য় উপদ ষ ট ল খ টন টন চ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শতভাগ রপ্তানিমুখী প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে যাচ্ছে আরএফএল

শতভাগ রপ্তানিমুখী গৃহস্থালি প্লাস্টিক উৎপাদনে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় গৃহস্থালি প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএফএল। পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মেশিনারিজ আনা হবে চীন থেকে। সে জন্য চীনের হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে আজ রোববার বড় চুক্তি করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আরএফএল গ্রুপ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এখন নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। এ সময়ে এফডিআই কমেছে ৭১ শতাংশ। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আরএফএল গ্রুপের নতুন বিনিয়োগ উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য ইতিবাচক। 

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ জানিয়েছে, রপ্তানি বাড়াতে নতুন এই বিনিয়োগ করছেন তারা। কারখানা স্থাপন হবে গাজীপুরের কালীগঞ্জে আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। সেখানে যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো নির্মাণে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আগামী এপ্রিল-মে মাস থেকে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন কারখানায় যেসব প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদন হবে, তার সবই রপ্তানি হবে। এটি হবে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানা। নতুন কারখানায় অন্তত আড়াই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখান থেকে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ক্রেতাদের চাহিদামতো বিভিন্ন ডিজাইনের কনটেইনার, টয়েজ, টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হবে। এ বিনিয়োগের ফলে আরএফএলের বার্ষিক রপ্তানি বাড়বে ৩০ শতাংশের মতো।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে রপ্তানি বাজারে সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আরএফএল। চীনের একটি রপ্তানিমুখী কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে ৬০ লাখ ডলারের পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছে তারা। পুরোনো ক্রেতাদের মাধ্যমেই এই ক্রয়াদেশ এসেছে। পোশাক খাতের বাইরে কোম্পানির এটি সবচেয়ে বড় ক্রয়াদেশ। কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই এ ধরনের ক্রয়াদেশ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। 
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, নতুন কারখানা হবে শতভাগ কমপ্লায়েন্ট। ক্রেতা দেশগুলোতে প্লাস্টিকের আধুনিক যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে, এখানে সেগুলোই উৎপাদন করা হবে। উৎপাদিত সব পণ্যই রপ্তানি করা হবে। কোনো পণ্য স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হবে না। 
উৎপাদনে যাওয়ার আগেই রপ্তানি আদেশ পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্ক বসানোসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমে যেতে পারে। এই সুযোগে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির আদেশ পাওয়া কারখানার যাত্রাকালে খুবই ইতিবাচক। 

আরএফএল গ্রুপের রপ্তানি 
আরএফএল গ্রুপ ২০০৭ সালে ভারতে গৃহস্থালি প্লাস্টিকপণ্য পাঠানোর মাধ্যমে রপ্তানি শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিবছরই তাদের প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি বাড়ছে। রপ্তানিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি করে আরএফএল। ৩০ ক্যাটেগরিতে ৫০০ পণ্য রপ্তানি করা হয়। যেমন– গৃহস্থালি প্লাস্টিক, বাইসাইকেল, মেলামাইন, গৃহনির্মাণ সামগ্রী, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, নন-লেদার ফুটওয়্যার, প্লাস্টিক ফার্নিচার। এসব পণ্য রপ্তানি করে আরএফএল গ্রুপ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি ডলার আয় করেছে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ভারতে। এরপর রয়েছে জার্মানি, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। 
যুক্তরাষ্টের ওয়ালমার্ট, কানাডার ডোলারামা ও লবলোজ, ফ্রান্সের ক্যারিফোর, জার্মানির লিডল, অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট, কোরিয়ার লোকসি এবং যুক্তরাজ্যের উলওয়ার্থস ও আর্গসের মতো প্রসিদ্ধ সুপারশপগুলোতে আরএফএল পণ্য পাওয়া যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংশোধিত এডিপি ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমল
  • ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
  • পাওনা আদায়ে রিংশাইন টেক্সটাইলের ৬টি প্লটের বরাদ্দ বাতিল
  • প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ
  • ফেব্রুয়ারির ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স
  • রোজার আগের মাসে প্রবাসী আয় ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • রিং সাইনের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ৬ শতাংশ
  • এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা
  • রিংসাইন টেক্সটাইলের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ
  • শতভাগ রপ্তানিমুখী প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে যাচ্ছে আরএফএল