ভিয়েতনাম থেকে এক লাখ টন চাল আনছে সরকার
Published: 28th, January 2025 GMT
ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির করছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটিসহ ডাল, চিনি ও সার আমদানির কয়েকটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চাল, চিনি, মসুর ডাল, সার ইত্যাদি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। রোজার আগে থেকে শুরু করে রোজা শেষ হওয়া পর্যন্ত এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে বাজারের পর্যবেক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য অধিদপ্তরের আওতায় ভিয়েতনাম থেকে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে এক লাখ টন আতপ চাল আমদানি করা হচ্ছে। ভিয়েতনামের ভিয়েতনাম সাউদার্ন ফুড করপোরেশন থেকে এ চাল কিনতে ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা (সিডি ভ্যাট ব্যতীত)। প্রতি টন চালের দাম পড়বে ৪৭৪ দশমিক ২৫ ডলার। খাদ্য মজুত বাড়িয়ে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে কয়েক মাসে ভারত ও পাকিস্তান থেকে বেশ কিছু পরিমাণ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবার ভিয়েতনাম থেকেও আসছে চাল।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির সম্প্রতি অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এর আওতায় এসব চাল আমাদানি করা হচ্ছে। দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গতকালের বৈঠকে ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এই ডিজেল আমদানির ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ ডলার।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৬ সাল থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। পাইপলাইন নির্মাণের আগে এনআরএল থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পরে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য ১০ হাজার টন চিনি এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ১১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ১০ হাজার টন চিনি (৫০ কেজির বস্তায়) কেনা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চিনির দাম ধরা হয় ১১৫ টাকা ৪২ পয়সা।
এদিকে সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবে শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এই মসুর ডাল কেনার বিষয়টিও অনুমোদন পায়। প্রতি কেজি ৯৮ টাকা ৪৫ পয়সা দরে এ ডাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৯৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৫০ টনের।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি টন টিএসপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৪৪০ ডলার।
এর আগে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে টাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাক সেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি অধিকতর যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে পরবর্তী সভায় আবার উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড জ ল আমদ ন চ ল আমদ ন ল আমদ ন র হ জ র টন র আওত য় উপদ ষ ট ল খ টন টন চ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক
শিল্পের সমৃদ্ধির ওপরই দেশের অর্থনীতির বিকাশ নির্ভর করে। জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ার বিপরীতে শিল্পকারখানা না বাড়লে অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। গত ১৫ মাসে শিল্প খাতে যে সংযোজন ও বিয়োজন ঘটছে, তা আমাদের মোটেই আশ্বস্ত করছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে বিজিএমইএর নতুন সদস্য হয়েছে ১২৮টি কারখানা। অন্যদিকে এই সময়ে বন্ধ হয়েছে ১১৩টি কারখানা। বিজিএমইএর বাইরে এই খাতে এবং অন্যান্য খাতে আরও অনেক কারখানা বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন কারখানাগুলো পুরোদমে চালু হলে ৭৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে ৯৬ হাজার ১০৪ জন চাকরি হারিয়েছেন।
আশার কথা, কারখানা বন্ধের মধ্যেও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
নতুন কারখানা চালু ও পুরোনো কারখানা বন্ধের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া বলা হলেও এই সময়ে কারখানা বন্ধের কারণ মূলত রাজনৈতিক। বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়েছে গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর। কয়েকটি শিল্প গ্রুপের মালিক কারাগারে ও আত্মগোপনে থাকায় শ্রমিকদের বেতন–ভাতা বকেয়া পড়ে। সরকার কোনো কারখানায় রিসিভার নিয়োগ করে চালু রাখতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি। আবার মালিকদের কাছেই পরিচালনার ভার ন্যস্ত করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণেও শিল্পাঞ্চলে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ সার্বিক শিল্প খাতে নতুন যে বিনিয়োগ আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একই সময়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও বহু কারখানা সাময়িক বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবারও শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার ভেতরে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ শনিবার ওই ছুটির নোটিশ দিয়েছে। মূলত শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সেখানে শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনা মেটানোর পরও শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। এর পেছনে বহিরাগত ব্যক্তিদের ইন্ধন আছে বলেও তারা দাবি করছে। বহিরাগত ব্যক্তিদের ইন্ধন থাকুক আর না–ই থাকুক, কোনো অজুহাতেই শ্রমিক ছাঁটাই মেনে নেওয়া যায় না। শ্রমিকদের বঞ্চিত রেখে কিংবা বিক্ষুব্ধ করে যে সুষ্ঠুভাবে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়, সেটাও তাদের অনুধাবন করতে হবে।
সার্বিকভাবে অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালো নয়। একদিকে প্রয়োজনমাফিক নতুন বিনিয়োগ আসছে না, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক–খড়্গ ঝুলছে। তিন মাসের রেয়াত দেওয়া হলেও ১০ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক বহাল আছে। তিন মাস পর নাটকীয় পরিবর্তন হবে, তা–ও আশা করা যায় না।
কারখানা বন্ধ থাকায় কেবল মালিকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, হাজার হাজার শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে বন্ধ হওয়া কারখানা খোলার প্রয়াস অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নজর রাখতে হবে নতুন করে যাতে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে না যায়। কোথাও সমস্যা হলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায় বের করতে হবে। যেকোনো মূল্যে শিল্পাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।