হিম হিম শীতের সকাল। জলের ওপর মেঘের মতো ভেসে থাকা কুয়াশার প্রলেপ। উড়ে যাওয়া অতিথি পাখির ঝাঁক– শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা যায় প্রকৃতির এমন আরেক রূপ; যে রূপ পরিচিত বর্ষার হাওরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন।
শীতের হাওরের ভিন্ন এই রূপ উপভোগ করতে ছোট দুই ভাইকে সঙ্গী করে গিয়েছিলাম টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে। যতবার হাওরে গিয়েছি, প্রতিবারই ভরা বর্ষায়। বর্ষায় জলে টইটম্বুর হাওরের রূপ বেশ জনপ্রিয় হলেও, শীতের হাওর অনেকেরই অজানা। শীতের টাঙ্গুয়ার হাওর মানেই এক ভিন্ন রূপ। এ সময় প্রকৃতি নিজেকে সাজায় একেবারেই নতুনভাবে। চারদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম। জলের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারি। দল বেঁধে এগিয়ে যাওয়া জেলে নৌকা। দূরের পাহাড়। তার ওপর ভেসে থাকা তুলার মতো মেঘের দল। কুয়াশার চাদর আর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা এক স্বর্গীয় প্রশান্তি! শহুরে কোলাহল থেকে দূরের এমন রূপ মনকে টেনে নেয় প্রকৃতির আরও কাছাকাছি। ভোলায় যান্ত্রিক সব ক্লান্তি।
ভোরে সুনামগঞ্জ পৌঁছে অটোতে করে চলে গেলাম নৌকাঘাটে। নানা ধরনের সুবিধাসম্পন্ন বিশাল হাউস বোটে শুরু হয় আমাদের হাওর ভ্রমণের যাত্রা। সকালের সে সময়টায় হালকা রোদ উঠে গেলেও বাতাসে ছিল ফিনফিনে শীতলতা। সেই শীতলতা গায়ে মেখে হাউস বোটের ছাদে বসে নাশতা হয় খিচুড়ি, ডিম ভুনা আর মজাদার আচারের সঙ্গে। এক কাপ চা নিয়ে হাওরের মুগ্ধতায় হারিয়ে যাওয়া। দীর্ঘ যাত্রা বয়ে চলে জলের ওপর। কী অসাধারণ সেই অনুভূতি! অফ সিজন হওয়ায় বোট ও পর্যটকের সংখ্যা ছিল কম। সত্যি বলতে তা হাওরের সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করে রেখেছিল। আরও প্রাণভরে উপলব্ধি করা গেছে প্রকৃতির নৈকট্য।
জলরাশির বুকে চলে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় বোট পৌঁছে যায় শিমুল বাগানে। মাথার ওপর তখন কড়া দুপুর। ক্ষুব্ধ সূর্যের উত্তাপ। শিমুল বাগানে ঢুকতেই মাথার ওপর শিমুল গাছের ছায়া পাওয়া যায়। যার বিস্তৃতি ১০০ বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে। অদূরেই দেখা যায় মেঘালয়ের পাহাড়ের সারি। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নৌকা সারানোর ঘাট।
শীতে পানি কিছুটা কমে যায় বলে হাওরের সর্বত্র বোটে করে যাওয়া যায় না। যাদুকাটা নদী ও বারিক্কা টিলা যেতে হয় অটোতে করে। ভিন্ন এ অভিজ্ঞতা মন্দ লাগেনি আমাদের। অটোতে করে তিনজনে মিলে বারিক্কা টিলা যাওয়ার যাত্রাটাও উপভোগ করেছি আলাদাভাবে। বিকেলে বারিক্কা টিলায় বসে দূরের পাহাড় চূড়ায়, জলের ওপর, গাছের ওপর ধীরে ধীরে কুয়াশার প্রলেপ পড়তে দেখেছি। দেখেছি প্রকৃতির গায়ে সন্ধ্যা নামতে। এরপর রাত কেটে যায় জলের বুকেই। স্থির হাউস বোটে। কোলাহলহীন। যেন জাগতিক ঝুট-ঝামেলা থেকে চলে এসেছি অনেক দূরে।
পরের সকাল শুরু হয় গা কাঁপানো শীত নিয়ে। কুয়াশায় চারদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মগভর্তি গরম কফি নিয়ে তিনজনই বসে যাই বোটের ছাদে। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন বোটের অন্য সদস্যরাও। পরে যে যার মতো অটো করে গিয়ে ঘুরে আসি শহীদ সিরাজ লেক। আশপাশের গ্রাম। বোটে ফিরে শুরু হয় আবারও যাত্রা। মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ্য ধীরে ধীরে দৃষ্টির আড়াল হয়। আমরা এগিয়ে চলি। মাঝে ছোট্ট বিরতি নিয়ে শেষ হয় গোসল পর্ব। পাহাড় থেকে বয়ে আসা শীতল জলে গোসল শেষে বোটে ফিরে দুপুরের খাওয়া হয় হাওরের টাটকা মাছ ভুনা, আলু ভর্তা, মুরগি ভুনা, পাতলা ডাল আর আচারে। স্থানীয় রাঁধুনির হাতে মজাদার রান্নায় খাওয়া হয় কব্জি ডুবিয়ে। এরপর স্নিগ্ধ হাওর দেখতে দেখতে ফেরার পথ ধরা।
টাঙ্গুয়ার হাওর ও শীতে হাওরের সৌন্দর্য নিয়ে
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল জায়গাজুড়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই হাওর পরিযায়ী পাখি আর মাছের অভয়ারণ্য। বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে থাকে। শীত এলে পানি কমতে শুরু করে। ভরা শীতে হাওরের পানি তলানিতে ঠেকে। তখন হাওরের বড় একটা অংশই শুকিয়ে যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তৃতি ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের ১০টি মৌজা নিয়ে। ছোট-বড় ১২০টি বিল নিয়ে এ হাওর। প্রতি বছর শুধু শীতকালেই পৃথিবীর বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এ হাওরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয়।
বর্ষার হাওরের জনপ্রিয়তা তো রয়েছেই। হাওরের ভিন্ন রূপ উপভোগ করতে চাইলে শীতেও ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর। লালচে ফুলে ছেয়ে থাকা শিমুল বাগান। কুয়াশা মেখে থাকা গ্রাম-প্রকৃতি ও হিম হিম হাওয়ার স্নিগ্ধতা জড়ানো হাওর আপনাকে নিরাশ করবে না। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’