‘আমার মতো দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই’
Published: 28th, January 2025 GMT
বাবা ইজিবাইকচালক, মা গৃহিণী। এক টুকরো ভিটে ও টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এই দারিদ্র্যও দমাতে পারেনি মেধাবী মেয়েটিকে। দারিদ্র্যকে জয় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এমন কৃতিত্বের অধিকারী নন্দিনী রানী সরকার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে নন্দিনী বড়। ছোট বোন বিনা রানী সরকারও মেধাবী শিক্ষার্থী। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
নন্দিনীর সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও এলাকার লোকজন সবাই খুশি। তবে আর্থিক টানাপড়েনে মেয়ের পড়াশোনার পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি। ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই নন্দিনীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
নন্দিনী পিএসসিতে জিপিএ ৫, জেএসসিতে জিপিএ ৪.
নন্দিনীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘর। প্রতিবেশীরা নন্দিনীর সাফল্যে তাদের বাড়িতে এসে শুভ কামনা জানাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে রান্না করছেন নন্দিনীর মা সীমা সরকার। মায়ের পাশে বসে রয়েছেন নন্দিনী ও তাঁর বোন বিনা।
নন্দিনীর বাবা অনিল চন্দ্র সরকার জানান, ইজিবাইক চালিয়ে দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলে। তাঁর দুই মেয়েই বেশ মেধাবী। মেয়েদের যে চাহিদা, সেটা বাবা হিসেবে কখনও পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের স্কুলের শিক্ষকদের কারণে তাঁর মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে তিনি অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে পড়ানোর মতো টাকাপয়সা নাই আমার। মেডিকেলে মেয়ের পড়াশোনায় কেউ যদি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসত তাহলে চিন্তা থাকত না।’
নন্দিনীর মা সীমা রানী সরকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেয়েগো প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। পড়ার জন্য নাই কোনো টেবিল-চেয়ার। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়ে এতদূর আসত পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলে সেই আনন্দ আর থাকে না।’
নন্দিনী রানী সরকার একজন সফল চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছি। স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। আমার বাবার সামর্থ্য নাই, এত টাকা দিয়ে আমাকে পড়াবেন। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা করা সম্ভব হবে। আমার স্বপ্ন, আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।’
নবগ্রাম ইউনিয়নের কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নন্দিনী। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, নন্দিনী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁর স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি। এখন মেডিকেলে ভর্তির জন্য নন্দিনীর পাশে তার স্কুল থাকবে।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা নন্দিনীর মতো অদম্য মেধাবীদের দিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। মেধাবীদের এগিয়ে নিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জন্মনিবন্ধনের তথ্য বলছে, বরিশালে র্যাবের অভিযানে নিহত ও আহত দুজনের বয়স ১৭
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সাদা পোশাকে র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিতে হতাহত দুজনই জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী শিশু-কিশোর।
যদিও নিহত কলেজছাত্র সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও র্যাবের পক্ষ থেকে করা মামলায় তাদের ওই বয়স উল্লেখ করা হয়।
দুই শিক্ষার্থীর বয়স বাড়িয়ে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না বলে দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব মোল্লা এই বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য অনুযায়ী, নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাব-৮-এর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বয়সের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই এ ধরনের বিভ্রম হতে পারে। কারণ, অভিযানে যাওয়া র্যাবের সদস্যরা ওই দুজনকে চিনতেন না। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে র্যাব সদস্যদের ওপর হামলা করেছিলেন। এ জন্য আত্মরক্ষার্থে তাঁরা গুলি করতে বাধ্য হন। হামলায় র্যাবের দুজন সদস্যও আহত হয়েছেন।
র্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে