থামছেই না বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো
Published: 28th, January 2025 GMT
ঘাটাইলে কোনোভাবেই থামছে না বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। হুমকিতে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্যমতে, উপজেলায় ৩৮ ইটভাটার মধ্যে ২১টির নিবন্ধন রয়েছে। ১৪টি ভাটা চলছে হাইকোর্টে রিট করে। তিনটি ভাটার তথ্য নেই তাদের কাছে।
উপজেলার পূর্বাঞ্চল পাহাড়ি এলাকা। মূলত টিলাকে কেন্দ্র করে এখানে বন গড়ে উঠেছে। রয়েছে সামাজিক ও সংরক্ষিত বন। মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর।
এলাকাবাসী জানান, দিন-রাতে ট্রাকে ভরে বনের কাঠ যায় ইটের ভাটায়। এলাকাবাসীর শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বন। সরেজমিন মেলে তাদের কথার সত্যতা। গত সোমবার বিকেলে ধলাপাড়া এলাকার এমবিবি ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, জ্বালানি হিসেবে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ।
গত সপ্তাহে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংগ্রামপুর মানিকপুর এলাকায় দেখা যায়, বনের কাঠ ভরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ট্রাক। কৌশলে চালককে গন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঠ যাবে ইটভাটায়। ভাটার নাম বলতে নারাজ ছিলেন তিনি। অথচ জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে স্থাপন করা ভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করার কথা। আইনে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। লোক দেখানো কিছু কয়লা ভাটাগুলোর পাশে রাখা আছে।
ভাটা মালিকদের দাবি, বর্তমানে প্রতি টন কয়লার দাম ১৯ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা। অপরদিকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে প্রতি টন কাঠ। কথা হয় ইট পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সঙ্গে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি ভাটায় ইট পোড়াতে দিন-রাত সাত থেকে আট টন কাঠের প্রয়োজন হয়। এসব কাঠের অধিকাংশই আসে বন থেকে।
বন বিভাগের ঘাটাইলের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিস থেকে বেশ কয়েকটি ভাটার দূরত্ব এক থেকে দুই কিলোমিটারের ভেতর। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানোর পরিমাণ বেশি বলে জানান স্থানীয়রা। ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমানের দাবি, এখন আর বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে না।
ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো.
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দের ভাষ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালায় বলা আছে, ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বেআইনি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ ভারসাম্য হারাবে।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানান, আইন অনুযায়ী ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। যে ভাটাগুলো এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘাটাইলের ইউএনও শারমিন ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে দুটি ইটভাটাকে ভ্রম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বনের কাঠ দিয়ে যেন ইট না পোড়াতে পারে, সে বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইটভ ট বন র ক ঠ দ য় পর ব শ ইটভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট
আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।
পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।
এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা
এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও।
রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।
প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”
অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”
অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”
গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”
কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”
স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ