ভাঙন ধরে রক্ষা বাঁধে দুর্ভোগ বাড়ে জনপদে
Published: 28th, January 2025 GMT
‘বাদলা দিন আইলেই দুই-তিনবার বাঁধ ভাইঙা পানি হামায়া। সব স্বপ্ন শেষ খরিয়া ঘর, ব্যবসা, কষ্টের ফসল ভাসিয়া যায়। তহন চেরম্যান (চেয়ারম্যান), মেম্বার, টিএনও সাব আর নেতারা আইয়া
ছেপ-লেপ দিয়া বুঝ দেয়। তোরা সামাল দে পরে দেখমুনে। পরে আর দেখে না। আবার বান বন্যা আইলে বাঁধ ভাঙে, তারাও আসে। আবার ভুইলা যায়। ২১ বছর গেলোগ গিয়া। তারা অহনো দেখনের সময় পাইছেন না.
ক্ষতিগ্রস্ত কুশিয়ারা নদী রক্ষা বাঁধ আর এর সংস্কার কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি এভাবেই দিলেন সদর উপজেলার হামরকোনা গ্রামের হুমায়ূন মিয়া। একইভাবে ক্ষোভ আর হতাশায় জর্জরিত স্বাধীন মিয়া ও স্থানীয় আরও অনেকেই কথা বললেন একই সুরে।
স্থানীয় ওই প্রবীণরা জানান, বন্যা প্রতিরোধে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হামরকোনা গ্রাম থেকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা পর্যন্ত রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কুশিয়ারা নদীর ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে ১৯৭০ সালে এ বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন নবীগঞ্জের তৎকালীন এলএমএনএ আবদুল আজিজ চৌধুরী। পরে মৌলভীবাজার অংশে এলজিইডির অর্থায়নে আংশিক পাকাকরণ ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে তার কিছু অংশ ইটের সোলিং করা হয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিকায় না থাকায় এ বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কারে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয় না।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই সদর উপজেলার কিছু কিছু অংশের সড়কে পানি ওঠে। অনেক স্থানে জনবসতি, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। মৌসুমে অন্তত দুই-তিনবার এই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ধরে। এসব ভাঙন দিয়ে পানি ঢোকে। এতে হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম, নতুনবস্তি, মুসলিমনগর, শেরপুর বাজারের একাংশসহ আরও বিভিন্ন গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়ে। সে সময় এসব গ্রামে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার বাড়িভিটা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
হামরকোনা গ্রামের মুদরত আহমদ মোহন জানান, গত বন্যায় তিন দফায় বাঁধের তিনটি পৃথক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে পুরো এলাকা বানের পানিতে প্লাবিত হয়। তখন বাঁধের ক্ষত সারাতে সরকারিভাবে কোনো প্রকল্প বরাদ্দ হয়নি। হামরকোনা বয়েজ ক্লাব এবং মুসলিমনগর ঐক্য পরিষদ এলাকার বিত্তশালীদের সহযোগিতায় পানি আটকানোর জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক মেরামত ও একটি সাঁকো নির্মাণ করে।
একই গ্রামের আবদুর রহিম জানান, সর্বশেষ বন্যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর পরিষদের মেম্বারদের মাধ্যমে মাদ্রাসার কাছে ৪০ থেকে ৫০ ফুট স্থানজুড়ে ভাঙন ঠেকাতে গাইডওয়াল নির্মাণ করেন। নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই ফের উজানের পানির তোড়ে সেটি ভেঙে পড়ে।
ব্রাহ্মণগ্রামের নুরুন্নেছা বেগম জানান, বর্ষার সময় ঘরের ভেতর আঙিনায় দুয়ারে গলাসমান পানি থাকে। ভাঙা স্থান মেরামত না করায় প্রতিবছরই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। খলিলপুর ইউনিয়নের ১-২ নম্বর ওয়ার্ডের সবক’টি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি সহ্য করেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়াহিদ জানান, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণগ্রাম ও হামরকোনার ভাঙন মেরামতে বরাদ্দ পেতে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। বরাদ্দ পেলেই বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মেরামত করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজউদ্দিন সমকালকে জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রকল্প পরিকল্পনা ও কার্যপ্রণালি নির্ধারণে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে জানতে খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল ক্রয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল ন র ম ণ কর প রকল প উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্যামনগরে আবারও পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩৮টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার
সাতক্ষীরা শ্যামনগরে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আবারও পরিত্যক্ত অবস্থায় হাসুয়া ও রামদাসহ ৩৮টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে শ্যামনগরের নকিপুর গ্রামের শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি রহমত আলী বাড়ির সামনে বিল্লাল গাজীর পরিত্যক্ত পুকুর থেকে ৩৪টি হাসুয়া ও ৪টি রামদা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার (২১ এপ্রিল) একই এলাকার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাবের মিস্ত্রির দখলে থাকা পুকুর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩৪টি হাসুয়া ও রামদা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, বিল্লাল গাজীর স্ত্রী সুফিয়া সকালে পরিত্যক্ত পুকুর পাড়ে কাজ করার সময় বস্তার ভিতরে থাকা দেশীয় অস্ত্রগুলো দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বস্তার ভিতর থেকে ৩৪টি হাসুয়া এবং ৪টি রামদা উদ্ধার করে। দীর্ঘদিন ধরে পানির মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার কারনে এসব অস্ত্রে মরিচা পড়ে গেছে।
নকিপুর গ্রামের সুজা মাহমুদ জানান, অস্ত্রগুলো বিভিন্ন সময়ে ভূমিহীন নেতা ও বাস্তুহারালীগ সভাপতি মোকছেদ, তার জামাতা স্বেচ্ছা সেবকলীগ নেতা সাবের মিস্ত্রি ও ছেলে রহমত আলীর নেতৃত্বে ভূমিদস্যু বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতেন। পাঁচ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে সাবের ও তার শ্যালক রহমত পলাতক রয়েছে বলে তিনি জানান।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, “খবর পেয়ে বস্তার মধ্য থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় হাসুয়া ও রামদাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। পুকুরে কে বা কারা এই রাম দা ও হাসুয়া গুলো লুকিয়ে রেখেছিল সে তথ্য উদঘাটনে পুলিশের অনুসন্ধান চলছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস