গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিন ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। সেই মাটি ভারী যানবাহনে পরিবহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা। বৃষ্টি বা কুয়াশায় রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি ভিজে পিচ্ছিল হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে স্থানীয় কয়েকজন এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি। 
প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় ভূমি আইন অমান্য করে গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে দেবে যাচ্ছে আশপাশের জমি। সেখানে ফসল আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পাশের জমি থেকেও বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি 
করতে হতে পারে– বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি পুকুর খনন করে মাছ চাষে লাভ বেশি হয়। 
সাময়িক লাভের আশায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি জেনেও আশঙ্কাজনক হারে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।  
সরেজমিন দেখা যায়, শাখাহার ইউনিয়নের ইসলামপুর বাল্লে এলাকায় প্রায় চার বিঘা ফসলি জমির উর্বর মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে অবৈধ ট্রলি ও ডাম্প ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ইটভাটায়। ওই জমির চারপাশে হালি পেঁয়াজের চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। পাশের জমির মালিকরা জানান, এভাবে মাটি কাটলে তাদের জমি দেবে যাবে। তাতে ফসলহানির শঙ্কা রয়েছে। 
সেখানে কর্মরত ভেকু ও ডাম্প ট্রাকচালকরা জানান, কাটাবাড়ী ইউনিয়নের আশকুর গ্রামের জমির মালিক হান্নান তালুকদারের ছেলেরা একই এলাকার সবুজের কাছে সব মাটি ইটভাটায় ও গৃহস্থদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা শুধু মাটি কেটে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।  
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটি তোলার কাজে নিয়োজিত একজন বলেন, ‘মাটি কাটা শুরুর প্রথম দিন মোটরসাইকেলে ২-৩ জন লোক এসে জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যান। এ টাকা দিয়ে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করা হবে বলে জানান। এরপর গত চার দিন ধরে আমরা নিরাপদে মাটি কাটছি। কেউ বাধা দেয়নি।’ 
কাটাবাড়ি ইউনিয়নের বাগদা বাজারের পশ্চিম পাশে ব্যুরোবিল আশকুর উত্তরপাড়া গ্রামের মো.

এরশাদ ও শফি মিয়া নামে দু’জন বড় পুকুর খনন করছিলেন। কথা হলে তারা বলেন, মাটি কাটার জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ বাধাও দেননি।
উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের ইসলামপুর বাজারের পাশে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করতে দেখা গেছে আমতাজ নামে এক ব্যক্তিকে। সাপমারা ইউনিয়নের বৈরাগীরহাট এলাকায় মাটি কেটে বিক্রি করছেন আব্দুল ওয়াহেদ। 
আমতাজ ও আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘নিজের জমিতে পুকুর খনন করেছি মাছ ছাড়ব বলে। ফসলের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। মাটি বিক্রি করেছি ইটভাটা মালিকের কাছে। নিজেদের জমি থেকে মাটি কাটছি। তাই কেউ বাধা দেন না।’ 
শাখাহার ও কাটাবাড়ি ইউনিয়ন ছাড়াও বর্ধনকুঠি, সরোবর, কোচাশহর, শ্রীমুখ, বামনকুড়ি, গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গায় তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। 
এলাকাবাসীর দাবি, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে বিঘার পর বিঘা আবাদি কৃষিজমির মাটি ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাটি অবৈধ ট্রলি ও ডাম্প ট্রাকে করে নেওয়া-আনার ফলে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক এখন বেহাল।  
গোবিন্দগঞ্জ-রাজাবিরাট-ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইকচালক নাঈম খন্দকার ও ভ্যানচালক কদম আলী বলেন, সড়ক যতই মেরামত করা হোক, তাতে কোনো লাভ নেই। অবৈধ ট্রলি ও ডাম্প ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়া-আনা বন্ধ করা না হলে সড়ক বেহালই থেকে যাবে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাম্প ট্রাকমালিক জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ না করলে কেউ গাড়ি বের করার সাহস পেত না। গ্রামবাসী অভিযোগ দিলে প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালায়। 
কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘অবাধে মাটি কাটলেও আমাদের কিছু করার নেই। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ। ইউএনও মহোদয় চাইলে আমরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।’ 
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কোনোভাবেই ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা যাবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কাজে ভূমি অফিসের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেলে অভিযান চালানো হবে। খোঁজখবর নিয়ে সব জায়গায় মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

এবার ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার করালো রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যায়নরত ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (৩ মার্চ) দ্বিতীয় রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে কেন্দ্রীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে এবং মসজিদ সংলগ্ন বাগানে তারা ইফতারির জন্য সারিবদ্ধভাবে বসেন। এ ছাড়াও নারীদের জন্য মসজিদের বাগানে আলাদাভাবে ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। এতে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে

ইফতারে অংশগ্রহণ করতে আসা ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আজকের আয়োজন অনেক ভালো ছিল। এখানে সবার সঙ্গে ইফতার করতে এসে খুবই ভালো লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটা দিন মনে হচ্ছে ঈদের মতো। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকের আয়োজন অনেক ভালো। কাল সব এলোমেলো ছিল। কিন্তু আজকের আয়োজন গোছালো হয়েছে। এত মানুষের সঙ্গে আগে কখনো ইফতার করিনি। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এখানে মেলা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।”

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমখ।

সার্বিক বিষয়ে জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “আমরা আজ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতার আয়োজন করেছি। যা গতকালের তুলনায় তিনগুণ। আমরা আশা করছি আজ সব ঠিকঠাক মতো হবে। এজন্য সবার সাহায্য প্রয়োজন, যাতে কোন উশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।”

প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রোজার প্রথমদিন রবিবার (২ মার্চ) ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু আয়োজনের তুলনায় অধিক রোজাদার উপস্থিত হওয়ায় ইফতারে সঙ্কট দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করে নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ