দুই নেতার দ্বন্দ্বে স্থবির কার্যক্রম
Published: 28th, January 2025 GMT
ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের দুই নেতার টানাপোড়েন ও পাল্টাপাল্টি রিট আবেদনে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। বিষয়টি আদালতে থাকায় গঠিত হচ্ছে না কমিটি। ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব আয়োজনে তেমন কোনো টুর্নামেন্টও হচ্ছে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকরা। তারা বলছেন, ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতি কাম্য না। যদিও জটিলতা কাটিয়ে সংস্থার কার্যক্রমে গতি ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছিল খুদে ক্রিকেটার নুর আল সাফিয়া। তার ভাষায়, ‘আমরা অনুশীলন করি, কিন্তু নিয়মিত টুর্নামেন্ট হয় না। অনুশীলনের জ্ঞানটা ধরে রাখতে পারি না।’ এ বিষয়ে মীনা স্মৃতি ক্রিকেট একাডেমি ও জেলার অনূর্ধ্ব-১৪ দলের প্রধান কোচ সৈকত হোসেন বলেন, ক্রীড়াঙ্গন স্বয়ংক্রিয় জায়গা। রাজনৈতিক নেতাদের কোন্দল, গ্রুপিং, ক্ষমতা দখলের প্রভাব কেন ক্রীড়াঙ্গনে পড়বে? নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে রাজনীতিমুক্ত সংস্থা গড়ে উঠুক।
শহরের স্টেডিয়ামপাড়ায় রয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রধান কার্যালয়। চার বছর মেয়াদ থাকে ক্রীড়া সংস্থার কমিটির। ক্রীড়া-সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের শেষদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় ২৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। এতে পদাধিকারবলে সভাপতি জেলা প্রশাসক। সহসভাপতির চার পদের মধ্যে দুটিতে পদাধিকারবলে থাকেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও পুলিশ সুপার। বাকি পদগুলোয় ভোটের মাধ্যমে সদস্য নির্বাচিত হন।
এ কমিটির মেয়াদকালে কোন্দল দেখা দেয় পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তখনকার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জীবন কুমার বিশ্বাস এবং যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশিদুর রহমান রাসেলের মধ্যে। পরের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন– এ নিয়ে ছিল তাদের বিরোধ। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়। তখন বিরোধ বাড়লে নির্বাচন স্থগিত করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক।
ক্রীড়া সংস্থার ভোটার রয়েছেন প্রায় ১০০ জন। জানা গেছে, ভোটার তালিকায় ত্রুটির কথা উল্লেখ করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরই মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন জীবন কুমার বিশ্বাস। এভাবে দু’দফা পদ বহাল রেখে তৃতীয়বার শুনানির আগে সাধারণ সম্পাদক পদ বহাল রাখার আদেশ বাতিল করে নির্বাচন চেয়ে আরেকটি রিট করেন রাশিদুর রহমান রাসেল।
এ কারণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে ছয় বছর ধরে চালানো হচ্ছে ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। রিট নিষ্পত্তি না হওয়ায় গঠিত হচ্ছে না নির্বাচিত কমিটি। ক্রীড়া সংস্থা নিজস্বভাবে টুর্নামেন্টও আয়োজন করতে পারছে না। পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে কবে এর সুরাহা হবে– নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুজ্জামান ঝন্টু বলেন, রিটের কারণে ক্রীড়া সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেখভাল করার কেউ নেই। সরকারি লোক আসায় ও নির্বাচিত কমিটি না থাকায় নিয়মিত টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। ভালো ফুটবলার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সভার মাধ্যমে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সাধারণ সম্পাদক বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষক (স্পন্সর) জোগাড় করেন। এটি প্রশাসনিক কমিটির মাধ্যমে সম্ভব না। ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব আয়োজনে ২০১৮ সালের পর শুধু ২০২০ সালে একটি ক্রিকেট লিগ, একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট, ২০২৩ সালে দুটি ফুটবল টুর্নামেন্ট ও একটি ভলিবল টুর্নামেন্ট হয়। গত বছরে সংস্থার নিজস্ব আয়োজনে কোনো টুর্নামেন্ট হয়নি।
কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে চেয়ে রিট করেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জীবন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘পুনরায় নির্বাচনের জন্য রাসেল পাল্টা রিট করেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন। এ কারণেও রিট করতে পারেন।’
ক্রীড়া সংস্থার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশিদুর রহমান রাসেল ৫ আগস্টের পর একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক ও ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, কমিটি গঠনের জন্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছেন। সে অনুসারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসার পর সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র রহম ন র ট কর কম ট র ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’