ভারতের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি চলতি জানুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে দুবাইয়ে দেখা করেছেন। প্রতিবেদনমতে, ভারত আফগানিস্তানে উন্নয়ন প্রকল্পে অংশ নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। এ ছাড়া রয়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট সহায়তা প্রদান এবং এ জন্য উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, ইরানের চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ও মানবিক সংযোগ সম্প্রসারণ।
এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে কাবুলে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে ‘উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ‘ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক’ জোরদার করার আগ্রহের বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেছে। ‘আফগানিস্তানের কাছ থেকে কোনো হুমকি নেই’ বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং ব্যবসায়ী, রোগী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভারতীয় ভিসা-সুবিধায় ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কথা উঠে এসেছে’। এখন পর্যন্ত কোনো দেশই তালেবান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি, যদিও অন্তত কিছু আবাসিক মিশনের মাধ্যমে ৪০ বার তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ভারত তালেবানকে চরমপন্থি আন্দোলন হিসেবে দেখে। তাই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং ২০২১ সালে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসার পর ভারত তার কূটনৈতিক উপস্থিতি ও উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল।
দুবাইয়ে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। এটি মূলত পাকিস্তান ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছে ডুরান্ড লাইন, যা ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই সীমারেখা নিয়ে বিতর্ককালে ইসলামাবাদ দেখেছে, তালেবানরা পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান জঙ্গি সরবরাহ করেছে, যারা নিয়মিত পাকিস্তানে সশস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানে হামলার প্রতিশোধ নিতে গত বছরের মার্চ ও ডিসেম্বরে দেশটির বিমানবাহিনী আফগানিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান ও আফগান সরকারের মধ্যে বিভাজন ভারতকে তালেবানের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্কের সম্ভাবনা বের করার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ কারণে আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার দরজা খুলেছে। একটি ইতিবাচক ভারতীয় সাড়াকে উৎসাহিত করতে তালেবান পুনরায় বলেছে, তারা তাদের ভূখণ্ড ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক তৎপরতার পক্ষে ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না।
তালেবানের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক ভারতের দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক স্বার্থেও কাজ করবে। এটি আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য চাবাহার বন্দর ব্যবহার করার সঙ্গে যুক্ত। লজিস্টিক সংযোগের এই লক্ষ্য কমপক্ষে দুই দশক ধরে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আফগানিস্তানের সংঘাতের কারণে তা আগে বাস্তবায়িত হয়নি। যথেষ্ট শক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা মাথায় রেখে এসব সংযোগ বর্তমানে ভারতের জন্য যথেষ্ট কৌশলগত গুরুত্ব হিসেবে বাস্তবসম্মত উপায়ে অনুসরণ করা যেতে পারে।
যদিও তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গঠনের অনেক মূল্য রয়েছে, একই সঙ্গে রয়েছে অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, তালেবানরা এখনও ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশকে বোঝাতে পারেনি– তারা নিজেদের চরমপন্থা অবস্থান ত্যাগ করেছে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলন কোনো ঐক্যবদ্ধ একক ক্ষেত্র নয়; এটি বিচিত্র গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে কয়েকটি ভারতের সঙ্গে উন্নত সম্পর্কের বিরোধিতা করতে পারে। তৃতীয়ত, তালেবানরা পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করে না। তালেবানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাত পুনরুজ্জীবিত করতে এবং দেশকে নতুন যুদ্ধে নিমজ্জিত করার জন্য বিচিত্র বিরোধী আন্দোলন রয়েছে।
তালেবান সরকার বর্তমানে তার আদর্শগত প্রতিশ্রুতি এবং সমমনা চরমপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থানের ব্যাপারে বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। দেশটির জনগণের উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে বহির্বিশ্বের সমর্থন দরকার।
তালমিজ আহমদ: সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক; আরবনিউজ থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র ক টন ত ক ন সরক র র জন য র কর র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-তালেবান জড়াজড়ি
ভারতের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি চলতি জানুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে দুবাইয়ে দেখা করেছেন। প্রতিবেদনমতে, ভারত আফগানিস্তানে উন্নয়ন প্রকল্পে অংশ নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। এ ছাড়া রয়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট সহায়তা প্রদান এবং এ জন্য উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, ইরানের চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ও মানবিক সংযোগ সম্প্রসারণ।
এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে কাবুলে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে ‘উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ‘ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক’ জোরদার করার আগ্রহের বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেছে। ‘আফগানিস্তানের কাছ থেকে কোনো হুমকি নেই’ বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং ব্যবসায়ী, রোগী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভারতীয় ভিসা-সুবিধায় ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কথা উঠে এসেছে’। এখন পর্যন্ত কোনো দেশই তালেবান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি, যদিও অন্তত কিছু আবাসিক মিশনের মাধ্যমে ৪০ বার তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ভারত তালেবানকে চরমপন্থি আন্দোলন হিসেবে দেখে। তাই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং ২০২১ সালে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসার পর ভারত তার কূটনৈতিক উপস্থিতি ও উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল।
দুবাইয়ে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। এটি মূলত পাকিস্তান ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছে ডুরান্ড লাইন, যা ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই সীমারেখা নিয়ে বিতর্ককালে ইসলামাবাদ দেখেছে, তালেবানরা পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান জঙ্গি সরবরাহ করেছে, যারা নিয়মিত পাকিস্তানে সশস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানে হামলার প্রতিশোধ নিতে গত বছরের মার্চ ও ডিসেম্বরে দেশটির বিমানবাহিনী আফগানিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান ও আফগান সরকারের মধ্যে বিভাজন ভারতকে তালেবানের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্কের সম্ভাবনা বের করার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ কারণে আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার দরজা খুলেছে। একটি ইতিবাচক ভারতীয় সাড়াকে উৎসাহিত করতে তালেবান পুনরায় বলেছে, তারা তাদের ভূখণ্ড ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক তৎপরতার পক্ষে ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না।
তালেবানের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক ভারতের দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক স্বার্থেও কাজ করবে। এটি আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য চাবাহার বন্দর ব্যবহার করার সঙ্গে যুক্ত। লজিস্টিক সংযোগের এই লক্ষ্য কমপক্ষে দুই দশক ধরে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আফগানিস্তানের সংঘাতের কারণে তা আগে বাস্তবায়িত হয়নি। যথেষ্ট শক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা মাথায় রেখে এসব সংযোগ বর্তমানে ভারতের জন্য যথেষ্ট কৌশলগত গুরুত্ব হিসেবে বাস্তবসম্মত উপায়ে অনুসরণ করা যেতে পারে।
যদিও তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গঠনের অনেক মূল্য রয়েছে, একই সঙ্গে রয়েছে অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, তালেবানরা এখনও ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশকে বোঝাতে পারেনি– তারা নিজেদের চরমপন্থা অবস্থান ত্যাগ করেছে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলন কোনো ঐক্যবদ্ধ একক ক্ষেত্র নয়; এটি বিচিত্র গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে কয়েকটি ভারতের সঙ্গে উন্নত সম্পর্কের বিরোধিতা করতে পারে। তৃতীয়ত, তালেবানরা পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করে না। তালেবানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাত পুনরুজ্জীবিত করতে এবং দেশকে নতুন যুদ্ধে নিমজ্জিত করার জন্য বিচিত্র বিরোধী আন্দোলন রয়েছে।
তালেবান সরকার বর্তমানে তার আদর্শগত প্রতিশ্রুতি এবং সমমনা চরমপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থানের ব্যাপারে বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। দেশটির জনগণের উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে বহির্বিশ্বের সমর্থন দরকার।
তালমিজ আহমদ: সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক; আরবনিউজ থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।